বাজারজাতকরণ দর্শন ও প্রযুক্তির অব্যবসায়িক প্রয়োগ
সাধারণ পাঠকদের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান ‘বাজারজাতকরণ দর্শন ও প্রযুক্তির অব্যবসায়িক প্রয়োগ’ গ্রন্থটি রচনা করে ইতোমধ্যে প্রশংসা অর্জন করেছেন। বাংলা ভাষায় বিবিএ-এমবিএ-এর পাঠ্যগ্রন্থ প্রণয়নের অন্যতম লেখক তিনি। ছাত্রজীবনে সকল পরীক্ষায় কৃতিত্বের অধিকারী ড. মীজানুর রহমান ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দিয়ে ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। মার্কেটিং বিষয়ের এ জনপ্রিয় শিক্ষকের আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে পঞ্চাশটিরও অধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- ‘কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ’(দুই খণ্ড), ‘বাজারজাতকরণ’, ‘স্নাতক বাজারজাতকরণ’, ‘বাজারজাতকরণ নীতিমালা’।
ড. মীজানুর রহমানের ‘বাজারজাতকরণ দর্শন ও প্রযুক্তির অব্যবসায়িক প্রয়োগ’ গ্রন্থের আটটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায় ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে বাজারজাতকরণ’। দ্বিতীয় অধ্যায় ‘বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার দর্শন ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত’। তৃতীয় অধ্যায় ‘টার্গেট মার্কেটিং’ এ বিস্তারিত আলোচনা স্থান পেয়েছে। ‘অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়ে দুই পর্বে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কীভাবে বাজারজাতকরণ ব্যবহার করবে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায় ‘রাজনৈতিক প্রচারণায় সমন্বিত বাজারজাতকরণ যোগাযোগ’- যেখানে বার্তা কাঠামো, বার্তার ফরমেট, যোগাযোগের পন্থা নির্ধারণ, প্রতিকূল প্রচারণা বা গুজব মোকাবেলা নিয়ে আলোকপাত করেছেন লেখক। ‘কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণে বাজার তথ্য, সমবায় ও সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক ষষ্ঠ অধ্যায়ে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ, কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণের মৌলিক সমস্যা : অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, বাজারতথ্য, বাজারতথ্যের অসুুবিধা, বাজারকাঠামোর পরিবর্তনশীলতা, বাংলাদেশের সরকারি তথ্য ব্যবস্থা : কৃষিবাজার অধিদপ্তর, সমবায় : কৃষকের সমস্যা সমাধানের একটি উপায়, কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণে সরকারের ভূমিকাসহ অনেক বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। লেখকের ভাষ্যমতে এই অধ্যায়টি কৃষিসংক্রান্ত নীতি নির্ধারকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। কৃষিপণ্যের বেশিরভাগই যেহেতু খাদ্যদ্রব্য এবং কৃষিজাত পণ্য খেয়েই আমরা জীবনধারণ করি অতএব এই অধ্যায়টি আমাদের স্পর্শ করবে। সপ্তম অধ্যায়ে রাজনীতিবিদ, ভোক্তাবাদী ও পরিবেশবাদীদের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে লেখক দাবি রেখেছেন। শেষ অধ্যায় ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ও বাজারজাতকরণ’। এই অধ্যায়ে গ্রামীণ অর্থনীতি, উৎসব ও বাজারজাতকরণ, সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় নতুন সুযোগ, মূল্যস্ফীতি ও কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
‘বাজারজাতকরণ দর্শন ও প্রযুক্তির অব্যবসায়িক প্রয়োগ’ গ্রন্থটির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ পাঠকও এটি পাঠ করে অব্যবসায়ী বাজারজাতকরণের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। এ গ্রন্থে বাজারজাতকরণের প্রতি অব্যবসায়ীদের মনোভাব বিশ্লেষণ করেছেন লেখক। আবার অব্যবসায়ী বাজারজাতকরণের জন্য কৌশলগত প্রোগ্রাম উন্নয়ন, উদ্দিষ্ট বাজার বিশ্লেষণ, পণ্য পরিকল্পনা, মূল্য নির্ধারণ, বণ্টন পদ্ধতি, প্রমোশন কার্যক্রম এবং বাজারজাতকরণ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা রয়েছে। উপরন্তু বাজারজাতকরণ সাতিহ্য বিষয়ে আলোকপাত রয়েছে এ গ্রন্থে। এতে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সমন্বিত বাজারজাতকরণ যোগাযোগের ধারণা ব্যবহার করে অডিয়্যান্সের সাথে কীভাবে আরো কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে তা আলোচনা করা হয়েছে।
মূলত মার্কেটিং-এর একজন জনপ্রিয় শিক্ষক এবং বাংলা ভাষায় ব্যবসায়িক বিষয়ে গ্রন্থরচনার অগ্রপথিক হিসেবে ড. মীজানুর রহমানের ‘বাজারজাতকরণ দর্শন ও প্রযুক্তির অব্যবসায়িক প্রয়োগ’ বইটি জ্ঞানকাণ্ডে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। গ্রন্থটির বহুল প্রচার কাম্য।
বাজারজাতকরণ দর্শন ও প্রযুক্তির অব্যবসায়িক প্রয়োগ
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
মেরিট ফেয়ার প্রকাশন
প্রচ্ছদ : মাকেটিং গুরু প্রফেসর ফিলিপ কটলারের সঙ্গে লেখকের আলোচনারত অবস্থার আলোকচিত্র অবলম্বনে আক্কাস খান
প্রথম প্রকাশ, অমর একুশে বইমেলা ২০১৬
মোট পৃষ্ঠা : ১৮৪, মূল্য : ৩০০ টাকা।
এইচআর/এমএস