একটা বই আমার একটা প্রাসাদ


প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক সৈয়দা রাশিদা বারী ইতোমধ্যে বই লিখেছেন ৮৫টি। ১৯৭১ সালে ব্যতিক্রমধর্মী এক অনুপ্রেরণা থেকে বই লেখার সূচনা হয় তার। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরই বেশ কয়েকটি বই নিয়ে অমর একুশে বইমেলায় এসে হাজির হন তিনি। এবছরও মেলায় পাঁচটি বই প্রকাশ করেছেন খ্যাতিমান এ সাহিত্যিক। বইমেলায় জাগো নিউজের স্টলের সামনেই কথা হয় তার জীবন ও সাহিত্য জগতে পদচারণার নানা দিক নিয়ে।

এসময় জাগো নিউজকে তিনি জানান, এবছরও তিনি বইমেলায় পাঁচটি বই প্রকাশ করেছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন। এর মধ্যে কবিতার বই ‘শীতল হাওয়া’। এটি প্রকাশ করেছে নবরাগ প্রকাশনী, মূল্য ২৫০টাকা।

তিনি জানান, যে সমস্ত কবিতা দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে একাধিকবার প্রকাশতি হয়েছে এ বইতে তার বাছাইকৃত কিছু কবিতা স্থান পেয়েছে। এছাড়াও নতুন কিছু কবিতা সংযুক্ত হয়েছে যা কেথাও ছাপা হয়নি বা প্রকাশিত নয়।

তার আরেকটি সম্পাদনা বই ‘ইসলামী চেতনায় জীবন ও জীবিকার ইবাদত’ এটি প্রকাশ করেছে দি রয়েল পাবলিশার্স, মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা। গত ২৬ বছর ধরে যা তিনি (উল্লেখ্য নিজের প্রয়োজনে পালন অর্থাৎ ইবাদত বন্দেগীর জন্য) বিভিন্ন বই ঘেটে হাতে লিখে খাতায় সংগ্রহ করেছেন; সেই ২৬ বছরের সঞ্চিত সংগ্রহগুলোকেই একত্রিত করে এই বইটি লিখেছেন। এর তথ্য নির্ভূল ব্যাপক ও অতুলনীয়। জীবন উন্নয়নমূখর করে তুলতে এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ নির্দেশক সহয়ক গ্রন্থ বলে জানান তিনি।

একান্ত আলাপচারিতায় তিনি আরো বলেন, তার তৃতীয় বইটি একটি উপন্যাস। নাম দিয়েছেন ‘মা-সন্তান’। বইটি প্রকাশ করেছে পার্ল পাবলিকেশন্স। দাম নির্ধারণ করা হয়েছে একশ টাকা। ভুল পথে যাতে কেউ ধাবিত না হয় এটা একটা আহ্বায়ক গ্রন্থ বলে জানান এই গুণী সাহিত্যিক।

বইমেলায় সৈয়দা রাশিদা বারীর চতুর্থ বই ‘কচি কাচার বাংলা পড়া’। এটি একটি শিশুতোষ গ্রন্থ। প্রকাশ করেছে জাহান পাবিলিকেশন্স। দাম একশত পাঁচ টাকা। বর্ণ দিয়ে শব্দ গঠন ও বাক্য গঠন, বানান এবং রিডিং, ছড়া সম্ভার এবং গদ্য পাঠ পদ্ধতি ও গঠনমূলক নিয়ম রীতি এতে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

এছাড়াও একটি সিরিজ বই ‘মজার খেলা ছবি আঁকা’ বইটিও প্রকাশ পেয়েছে এবারের অমর একুশে বই মেলায়, জানান আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত এ সাহিত্যিক।


কিভাবে সময় কাটচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বছরের ৩৬৫ দিনের প্রতিটি দিন আমি চাই কিছু না কিছু লিখতে থাকি। তবে এই লেখালেখির ধারাবাহিকতা আমর ভ্যালেনটাইন্স ডে হয় লাগাতার ফেব্রুয়ারি মাস। সেটা লেখা প্রকাশের মাধ্যমেই মূলত। অর্থাৎ মানুষের ভ্যালেনটাইন ডে হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর আমার হয় ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী।

তিনি বলেন, একটা লেখা প্রকাশের উপযোগী করে তুলতে অন্তরের একশ ভাগ সুধা ঢেলে দিয়েও সমস্ত বল এনার্জি প্রয়োগ করতে হয় সেই লেখটির উপর। লেখকের হলো লেখালেখিতেই ভাললাগা ভালবাসা। এখানে লুকোচুরি থাকলে , অবহেলা অনুযোগ থাকলে ভাল কিছু রচনা করা অসম্ভব হয়। লেখা একশ ভাগ ভাল ও শুদ্ধ পরিশুদ্ধ হলে তবেই সেটা ছাপার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয় আমার কাছে।

যতক্ষণ বস্তুনিষ্ঠ তথ্যবহুল লেখা না হয় ততক্ষণ সেটা কাটাকাটি করে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলি। তাই একটি বই সম্পন্ন করতে আমার কত বছর কাটে বলা মুশকিল। যেমন এখনও বেশ কিছু বইয়ের কাজ চলছে। জানি না এর মধ্যে কোনটা সামনের মেলার মধ্যে আল্লাহ কবুল করবেন, আল্লাহ কবুল করলেই তো আমি ছাড়তে পারবো মানুষের কাছে।  


একাধারে কবি, কথাশিল্পী, সাংবাদিক ও গীতিকার এ মানুষটি বইমেলায় তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমার কাছে বইমেলাকে মনে হয় ঈদ পুজা আর বড়দিনের মতো। কখনো বইমেলা ছাড়া ঘুরে বেড়াবার মতো এনার্জি ও সময় হয় না আমার। বই কেনা ছাড়াও অন্য পথে ব্যয় করার মতো পয়সা মেলে না।

এই কবি বলেন, প্রাণের এই বইমেলাতে এলে আমি যেমন আনন্দ পাই তেমন সুস্থতাও ফিরে পাই। বইমেলা আমার শান্তির প্রতীক স্বর্ণালংকার। হীরে জহরতের গুদাম অমূল্য সম্পদ। অহংকার প্রাসাদ প্রসাদ প্রসাধনী। একটা বই আমার কাছে একটা প্রাসাদের মতো। এক ব্যতিক্রধর্মী অনন্দধাম। অমোধ এই উৎসবমূখর দিনগুলোর সাথে আমি কোন কিছুর তুলনা করতে পারি না।

বিশিষ্ট এ সাহিত্যিক বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (কুষ্টিয়া`র) প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ও ভূতপূর্ব সাধারণ সম্পাদক। আধুনিক সাহিত্য পরিষদের সভাপতি। জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রাক্তন নির্বাহী সদস্য। বাংলাদেশ জাতীয় লেখক ফোরামের সাবেক সহসম্পাদক, প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সহস্য ড. মযহারুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ (ঢাকা), নির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ টেলিভিশন শিল্পী সমিতি। বিভাগীয় সচিব জাতীয় গীতি কবি পরিষদ ইত্যাদি।

এমএম/এসকেডি/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।