ফিরে দেখা ১ আগস্ট

ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজপথে নেমেছিলেন শিল্পীরাও

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৪৩ এএম, ০১ আগস্ট ২০২৫
বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার হাতে নিয়ে সেদিন রাজপথে নেমেছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

গত বছর এই দিনে অর্থাৎ, ২০২৪ সালের ১ আগস্ট সারাদেশের মানুষ তৎকালীন সরকারের পতনের আন্দোলনে এক কাতারে শামিল হয়েছিল। সেদিন চলমান ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’র ব্যানারে রাজপথে নামেন চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, থিয়েটারসহ শোবিজের নানা অঙ্গনের কর্মীরা। পূর্বঘোষণা মতে সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করার কথা থাকলেও ভিন্ন একটি দলের কর্মসূচি চলমান থাকায় সেখানে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি শিল্পীদের।

কর্মসূচির অন্যতম আহ্বায়ক নির্মাতা আকরাম খান বলেছিলেন, ‘সংসদ ভবনের সামনে যাওয়ার পথে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, সেখানে আরও একটি কর্মসূচি চলছে। পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের কোনো প্রকার বাধা প্রদান করেননি, বরং অনুরোধ করেছেন, পাশেই ফার্মগেট এলাকায় আনন্দ সিনেমা হলের সামনে কর্মসূচি করার। আমরা তাই স্থান পরিবর্তন করে ফার্মগেট এলাকায় দাঁড়িয়েছি।’

স্থান নিয়ে জটিলতা কাটলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। তবে কোনো বাধাই থামাতে পারেনি শিল্পীসমাজকে। বৃষ্টিতে ভিজে উপস্থিত শিল্পীরা ব্যানার হাতে স্লোগান দিতে দিতে এসে দাঁড়ান ফার্মগেট এলাকায়, রাজপথে। উপস্থিত সবাই ছাত্রদের এই আন্দোলনে ছাত্রদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চলমান হত্যা, সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার আর হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন অভিনেতা মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, ইরেশ যাকের, সিয়াম আহমেদ, আজমেরী হক বাঁধন, মোস্তফা মনওয়ার, সাবিলা নূর, রাফিয়াত রশীদ মিথিলা, নাজিয়া হক অর্ষা, শ্যামল মওলা, নির্মাতা নুরুল আলম আতিক, আকরাম খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মাতিয়া বানু শুকু, রেদওয়ান রনি, আশফাক নিপুণ, আদনান আল রাজিব, পিপলু আর খান, সৈয়দ আহমেদ শওকি প্রমুখ।

আরও পড়ুন:

সেই সমাবেশে নাট্যজন ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘গত জুলাই মাসব্যাপী কী ঘটনাগুলো ঘটেছে, কত প্রাণ গেছে! এর মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। এই বেদনা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের নেই।’

জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম উচ্চারণ করেছিলেন, ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজের পক্ষ থেকে আমরা সকল মানুষের পক্ষে। আমাদের দেশে বর্তমানে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমাদের আর ঘরে বসে থাকার মতো অবস্থা নেই। আমরা শান্তি চাই। আমরা সকল নির্যাতন, গোলাগুলি, হত্যা, রক্ত—এগুলো আর দেখতে চাই না। এগুলোর বাইরে আমরা থাকতে চাই। আমরা শান্তি চাই।’

অন্যদিকে গত বছর ১ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছিলেন আওয়ামীপন্থি সংস্কৃতি অঙ্গনের একঝাঁক তারকা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে বিটিভিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানান তারা।

ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজপথে নেমেছিলেন শিল্পীরাও‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’—স্লোগানসংবলিত ব্যানার নিয়ে বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়ি নিজেদের মতপ্রকাশ করেছিলেন আওয়ামীপন্থি শিল্পীরা।

এ সময় তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। ‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’—স্লোগানসংবলিত ব্যানার নিয়ে বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে নিজেদের মতপ্রকাশ করেন আওয়ামীপন্থি শিল্পীরা। উপস্থিত ছিলেন হাসিনা সরকারের সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস, অভিনেত্রী সুজাতা, অভিনেতা রিয়াজ, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, নাট্যব্যক্তিত্ব শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ। যারা বিটিভিতে অগ্নিসংযোগের পেছনে দায়ী, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান শিল্পীরা। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তারা।

ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজপথে নেমেছিলেন শিল্পীরাওআওয়ামীপন্থি শিল্পীরা গিয়েছিলেন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শনে। ছবি: সংগৃহীত

ফেরদৌস আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমি দেখেছি, ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল, সেটার পক্ষে আমরা সবাই ছিলাম, কিন্তু ছাত্রদের ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশকে। দেশটি হয়তো আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলব; কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল, সেগুলো আমরা ফিরে পাব না। আজকে আমরা বিটিভিতে এসেছি। আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের একটি জায়গা এটি। সে বিটিভিতে আগুন কেন? এ অগ্নিসন্ত্রাসী কারা? তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে। আজ আমরা সব অঙ্গনের শিল্পী এখানে একত্র হয়েছি আমাদের সংহতি প্রকাশ করার জন্য। সব সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ। অফলাইন ও অনলাইনে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সমর্থন করেছেন শোবিজের অনেক তারকা। তবে এ আন্দোলন নিয়ে শুরুতে চুপ থাকলেও এই দিনে নীরবতা ভাঙেন জেমস ও পার্থ। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও অনেক শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে অনেকেই সোশ্যাল হ্যান্ডেলে প্রোফাইল ও কাভার ফটোতে লাল রং যুক্ত করেন। সেই তালিকায় যোগ দিয়েছিলেন জেমস। ১ আগস্ট লাল রঙের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন নগরবাউল খ্যাত জেমস।

ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজপথে নেমেছিলেন শিল্পীরাওজেমস ও পার্থ বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট একই দিনে সোলস ব্যান্ডের প্রধান পার্থ বড়ুয়া ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আর কিন্তু চুপ থাকা উচিত হবে না। মনে হচ্ছে।’

এমএমএফ/এলআইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।