আজ রাতটা মুলার

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪৩ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
এখানে মুলা শুধু সবজি নয়, এক আকর্ষণীয় শিল্পকর্ম

মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী শহর ওয়াক্সাকায় প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে আয়োজিত হয় ব্যতিক্রমী ও বর্ণিল উৎসব ‘নাইট অন দ্য র‍্যাডিশেস’, যা বাংলায় পরিচিত ‘মুলার রাত’ নামে। এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সাধারণ একটি সবজি ‘মুলা’। তবে এখানে মুলা আর রান্নাঘরের উপকরণ থাকে না, বরং শিল্পীদের হাতে তা রূপ নেয় অসাধারণ ভাস্কর্যে। শহরের কেন্দ্রীয় চত্বর বা জোকালো কয়েক ঘণ্টার জন্য পরিণত হয় খোলা আকাশের নিচে এক প্রাণবন্ত শিল্প প্রদর্শনীতে।

এই উৎসবে স্থানীয় শিল্পী ও কারিগররা বিশেষভাবে চাষ করা বড় আকারের মুলা খোদাই করে তৈরি করেন নানা দৃশ্য। নৃত্যশিল্পীর ভঙ্গি, পশুপাখি, গ্রামীণ জীবন, ধর্মীয় কাহিনি এবং লোকজ গল্প সবকিছুই ফুটে ওঠে মুলার শরীরে। মুলার উজ্জ্বল লাল খোসা ও ভেতরের সাদা অংশ মিলিয়ে প্রতিটি শিল্পকর্মে তৈরি হয় চোখে পড়ার মতো বৈপরীত্য, যা দর্শকদের সহজেই আকৃষ্ট করে।

উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো দর্শকদের সামনেই শিল্পীরা তাদের কাজ সম্পন্ন করেন। ধীরে ধীরে একটি সাধারণ মুলা কেটে, ছেঁটে ও সাজিয়ে শিল্পকর্মে পরিণত হতে দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কাজ শেষ হলে এসব শিল্পকর্ম সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয় বিচারক ও দর্শনার্থীদের জন্য। প্রতিটি ভাস্কর্য দেখার জন্য দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়, যা কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে।

আজ রাতটা মুলার

মুলার পাশাপাশি এই উৎসবে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মও প্রদর্শিত হয়। ভুট্টার খোসা ও শুকনো ফুল দিয়ে বানানো দৃশ্যগুলো মূলার শিল্পের সঙ্গে মিল রেখে একই থিম তুলে ধরে। এসব উপকরণ ব্যবহার করে শিল্পীরা স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং দৈনন্দিন জীবনের গল্প নতুনভাবে উপস্থাপন করেন।

আজ রাতটা মুলার

এই উৎসবের শিল্পকর্মগুলো খুবই ক্ষণস্থায়ী। মুলা দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় প্রদর্শনীগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্যই সতেজ থাকে। তাই পুরো আয়োজনটিই যেন একটি জীবন্ত কিন্তু অল্প সময়ের শিল্প অভিজ্ঞতা, যা দর্শকদের মনে আলাদা রকম অনুভূতি তৈরি করে। এই ক্ষণস্থায়িত্বই উৎসবটিকে আরও বিশেষ করে তোলে।

আজ রাতটা মুলার

নাইট অব দ্য র‍্যাডিশেস একটি পারিবারিক উৎসব। শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণ, স্থানীয় মানুষ থেকে পর্যটক সবাই এখানে অংশ নেয়। হাসি, করতালি আর ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ভরে ওঠে পুরো এলাকা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের উত্তেজনাও বাড়তে থাকে, কারণ সবাই অপেক্ষা করে পুরস্কার ঘোষণার জন্য।

আজ রাতটা মুলার

সাধারণত রাত নয়টার দিকে বিচারকরা সেরা শিল্পকর্মগুলোর নাম ঘোষণা করেন। বিজয়ীদের ঘোষণার সময় পুরো চত্বর উল্লাসধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। বিজয়ী শিল্পীরা দর্শকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান এবং সেই মুহূর্তটি হয়ে ওঠে উৎসবের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ।

আজ রাতটা মুলার

মূল অনুষ্ঠান শেষ হলেও উদযাপন থেমে যায় না। আশপাশের রাস্তাগুলোতে শুরু হয় গান, খাবার আর আড্ডা। স্থানীয় ব্যান্ডের সুরে মানুষ নাচে, পরিবারগুলো তামাল ও ঐতিহ্যবাহী পানীয় উপভোগ করে। পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আনন্দ।

এই উৎসবের ইতিহাসও বেশ আকর্ষণীয়। উনিশ শতকের শেষ দিকে ওয়াক্সাকার সবজি বিক্রেতারা ক্রিসমাস বাজারে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে বিভিন্ন আকৃতি খোদাই করে মুলা সাজাতে শুরু করেন। এছাড়া বড় আকৃতির মুলাও বিক্রির জন্য নিয়ে আসতেন বাজারে। মূল উদ্দেশ্য ছিল বড়দিনের আয়োজনেও যেন তাদের সবজি বিক্রি কমে না যায়।

১৮৯৭ সালে তৎকালীন মেয়র ফ্রান্সিসকো ভাসকনসেলোস এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেন এবং মুলা খোদাই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সেখান থেকেই জন্ম নেয় নাইট অব দ্য র‍্যাডিশেস। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই আয়োজন শুধু একটি বাজার কৌশল না থেকে ওয়াক্সাকার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে ওঠে। আজ নাইট অব দ্য র‍্যাডিশেস প্রমাণ করে সৃজনশীলতা থাকলে একটি সাধারণ সবজিও হতে পারে শিল্প, উৎসব এবং মানুষের মিলনমেলার কেন্দ্রবিন্দু।

আরও পড়ুন
সন্ধ্যা নামলেই পুরোনো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের হাট বসে যেখানে
বছরের দীর্ঘতম রাতে কোন দেশের মানুষ কী রীতি পালন করে

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।