ময়লার স্তূপে নিদারুণ শৈশব!

মেহেদী হাসান সজীব
মেহেদী হাসান সজীব মেহেদী হাসান সজীব , ডেন্টিস্ট, ঢাকা ডেন্টাল কেয়ার, ঢাকা
প্রকাশিত: ০২:২৩ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২৩
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ডাম্পিং ইয়ার্ড থেকে ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী জিয়াউল হক।

মেয়েটির নাম চাঁদনী (ছদ্মনাম)। বয়স কেবল দশের কোঠায়। যে বয়সে তার স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাসিমুখে স্কুলে যাওয়ার কথা; সে বয়সে দরিদ্রতার কারণে জীবিকার তাগিদে জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে আছে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ডাম্পিং ইয়ার্ড। যেখানে প্রতিদিন সিলেট সিটি করপোরেশনের ময়লা এনে ফেলা হয়। চাঁদনী সারাদিন প্রখর রোদ কিংবা প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে দক্ষিণ সুরমা ডাম্পিং ইয়ার্ডের ময়লা আবর্জনার মধ্যে থাকা প্ল্যাস্টিক জাতীয় ভাঙারি, যেগুলো শহরের বোতল ফ্যাক্টরিতে রিসাইকেল ম্যাটেরিয়াল হিসেবে উৎপাদন করা হয়, সেসব সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রহ করা সেসব প্ল্যাস্টিক জাতীয় জিনিসপত্র বোতল ফ্যাক্টরিতে অল্পকিছু টাকার বিনিময়ে কেজি দরে বিক্রি করে। এভাবেই চক্রাকার নিয়মে চলে ছোট্ট কোমলতি চাঁদনীর জীবন সংগ্রামের পথচলা।

করোনার প্রাদুর্ভাব, বন্যা, নদীভাঙন এবং অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের অনেক মানুষ তাদের বাড়িঘর ও সম্পত্তি হারিয়েছে। একটু ভালো ভাগ্যের সন্ধানে চাঁদনীর মতো অনেক শিশু বিভিন্ন শহর এলাকায় পা ফেলতে বাধ্য হচ্ছে।

আরও পড়ুন: খেলার সময়েও পকেটে থাকত স্মৃতিময় গুলতি

যেখানে পৃথিবীর নিষ্ঠুর বিষবাষ্প চাঁদনীর জীবনের ভালো চাহিদাগুলোকে নীরবে-নিভৃতে শেষ করে দিচ্ছে। ময়লার স্তূপের মধ্যে জীবিকা নির্বাহের কাজে জড়িয়ে বেড়ে ওঠার চমৎকার দিনগুলো মরে যাচ্ছে। যেখানে হাসিমুখে ব্যাগ নিগে স্কুলে যাওয়া, খেলার সাথীদের সঙ্গে খুনসুটি করার কথা; সেখানে সবকিছু হারিয়ে ফেলছে জীবন সংগ্রামের কাছে।

দরিদ্রতা বলতে সাধারণত বোঝায় মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতির অক্ষমতা। যখন জীবনযাপনের জন্য কোনো ব্যক্তির কাছে তার ন্যূনতম অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য থাকে না, তাকে চরম দরিদ্রতা বলে। যে কোনো কাজ যা একটি শিশুর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে এবং একটি শিশুর শৈশব কেড়ে নিয়ে তাকে অর্থ উপার্জনে বাধ্য করে, তাকে শিশুশ্রম বলে।

দরিদ্ররেখা বলতে এমন একটি মাথাপিছু মাসিক ভোগ ব্যায়ের পরিমাণ বোঝায়, যেখানে কোনো ব্যক্তি দৈনিক ২২৫০ ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে সক্ষম। যাদের দরিদ্ররেখা বা তার নিচে অবস্থান, তাদের জীবন চালনা খুব দুষ্কর, কষ্টসাধ্য ও দুঃসাধ্য। যার মারাত্মক প্রভাব শিশুদের ওপর পড়ে। ফলে অল্প বয়সেই তারা শিশুশ্রমে জড়িয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদাগুলো।

আরও পড়ুন: বইপত্রে সীমাবদ্ধ নব্বই দশকের খেলা লাটিম

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকাতেই ছয় লাখ পথশিশু রয়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩৮তম স্থানে থাকা একটি দেশ, যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সেখানে এই শিশুরা সামাজিক স্তরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে।

আমাদের সমাজে চাঁদনী কেবল একটি উদাহরণ। এমন হাজারো চাঁদনী দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে নিয়তিকে মেনে নিয়েছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে চাঁদনীদের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের কাঁধে হাত রেখে সমস্যাগুলো চাইলেই কিছুটা লাঘব করতে পারি। এজন্য প্রয়োজন সঠিক ইচ্ছাশক্তি। প্রয়োজন পাশে থাকা। তবেই ভালো থাকবে চাঁদনীরা।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।