বার্বির জন্ম ও জনপ্রিয়তা
বার্বি পুতুল চেনেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল বটে। বিশেষ করে নারীরা, সবারই ছোটবেলার সঙ্গী ছিল এই বার্বি পুতুল। জন্মদিনে বাবার কাছে আবদার থাকত নতুন নতুন বার্বি পুতুলের। সেই পুতুলের সঙ্গে সারাদিন খেলায় পার হয়েছে বছরের পর বছর।
নানা ধরনের বার্বি পুতুল সংগ্রহে থাকাও ছিল এক ধরনের আভিজাত্য। বান্ধবীদের সঙ্গে কার কয়টা বার্বি পুতুল আছে সেই প্রতিযোগিতাও কম হয়নি। সম্প্রতি বলিউডে বার্বি সিনেমা তৈরি হয়েছে। এরপরই পুরো বিশ্বে চলছে বার্বি উন্মাদনা। তবে জানেন কি? বার্বির জন্ম কোথায়, কখন, কীভাবে হলো। ছোট্ট এক মেয়ের আবদারেই তৈরি হয়েছিল বার্বি।

যুক্তরাষ্ট্রের রুথ হ্যান্ডলার হলেন বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত পুতুল ক্যারেক্টার বার্বির জনক। রুথের মাথায় এই ভাবনাটা এসেছিল তার ছোট্ট মেয়ে বারবারার কাছ থেকেই। ১৯৫০-এর দশক বারবারা সেগাল তখন খুবই ছোট। অন্য দশটা শিশুর মতো বারবারাও পুতুল বানিয়ে খেলতে ভালোবাসতো। তবে তার পুতুলগুলো ছিল কাগজ কেটে বানানো তরুণী বা মাঝবয়সী পুতুল। সেসব পুতুলের আবার নানান পেশা, কেউ ছাত্র, কেউ চাকুরে। এসব পুতুলকে বারবারা খেলার মাঝেই খাবার খাওয়াত, গোসল করানো, ঘুম পারানো সবই করতো। আপনি আমি যেভাবে ছোটবেলায় কাপড়ের তৈরি পুতুল নিয়ে খেলেছি তেমনই।
আরও পড়ুন: ২৩ বছর ধরে টয়লেট পেপার খাচ্ছেন এই নারী
তবে আমাদের দেশে কাপড় দিয়ে তৈরি পুতুলের চল থাকলে বারবারার দেশে শিশুদের জন্য ঘরে কাগজ দিয়ে মা-বাবা পুতুল বানিয়ে দিতেন। সেভাবেই বারবারার মা রুথও নিজের মেয়ের জন্য এমন পুতুল তৈরি করে দিতেন। যখন বারবারার বয়স ১৫, তখন বাবা-মার সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের লুসার্নে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই একটি খেলনার দোকানে একটি পুতুল দেখে সেদিকে দৌড়ে যান তিনি। দুটি পুতুল কিনে নিয়ে বেড়িয়ে আসেন।

পুতুল দুটি ছিল প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের আদলে তৈরি। যাদের সুন্দর পোশাক পরানো ছিল। যা বারবারার খুবই পছন্দ হয়। রুথ এই ভাবনা কাজে লাগিয়ে পুতুল তৈরি করতে শুরু করলেন। তবে ততদিনে এমন পুতুল জার্মানির বাজারে অহরহ দেখা যায়। যার নাম ছিল ‘বিল্ড লিলি’। ১৯৫২ সালে জার্মানের বাজারে এসেছিল পুতুলটি। দেশে ফিরেই বিল্ড লিলি আর নিজের কল্পনার মিশেলে একটা পুতুল তৈরি করলেন রুথ। ১৯৫৯ সালের ৯ মার্চ রুথের হাত ধরে সেটাকে বাজারে আনে বিশ্বখ্যাত মার্কিন খেলনা নির্মাতা কোম্পানি ম্যাটেল ইনকরপোরেটেড।
নিজের মেয়ে বারবারার নামেই পুতুলটির নাম দেন বার্বি। যে পুতুলটি এখন প্রতি মিনিটে ১০০পিসেরও বেশি বিক্রি হয় সারাবিশ্বে।

রুথের তৈরি সেই পুতুলটির কালো পনিটেইল চুল, নীল চোখ, টুকটুকে লাল ঠোঁট, ছিপছিপে গড়ন, পরনে জেব্রার মতো সাদা-কালো ডোরাকাটা সাঁতারের পোশাক। তরুণী পুতুলটার পুরো নাম বারবারা মিলিসেন্ট রবার্টস, ডাকনাম বার্বি। বার্বিকে লুফে নিল শিশুরা। প্রথম বার্বি পুতুলটি বিক্রি হয়েছিল ৩ ডলারে এবং প্রথম বছরেই বার্বি বিক্রি হয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পিস। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রুথ এবং বার্বিকে।

দিন দিন বার্বির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বার্বি। কন্যা শিশুদের সঙ্গী হিসেবে বাবা-মাও বার্বিকে মেনে নেন সহজেই। ১৯৯২ সাল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবেও দাঁড়াচ্ছে বার্বি! যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বার্বির জন্য রীতিমতো ভোটের প্রচারণাও চালায় ম্যাটেল। অনেকেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নারীর স্বাধীনতা ও পেশা নির্বাচনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে বার্বি। বার্বির জন্য আস্ত একটি দিনও বরাদ্দ আছে সেদেশে। প্রতিবছর ৯ মার্চ পালিত হয় বার্বি দিবস।
আরও পড়ুন: স্বামীর মৃতদেহের সঙ্গেই বছরের পর বছর ঘুমান তারা
১৯৬৭ সাল থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের আদলে তৈরি বার্বি বাজারে ছাড়তে শুরু করে তারা। শুরুটা হয় ইংরেজ সুপারমডেল টুইগিকে দিয়ে। এরপর ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন, মার্কিন গায়িকা ডায়ানা রস, এমনকি হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রোলিংয়ের মতো দেখতে বার্বিরও দেখা মেলে। এছাড়াও বিভিন্ন আদলে আসতে থাকে বার্বি। বার্বির মুখে আগে হাসি ছিল না, ১৯৭৭ সাল থেকে বার্বির মুখে হাসি ফুটেছে।
১৯৯২ সালের ‘টোটালি হেয়ার’ বার্বি আসে বাজারে। যেটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বার্বি। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ১ কোটি পিস টোটালি হেয়ার বার্বি বিক্রি হয়েছিল। বার্বি ও তার বন্ধুদের জন্য এ পর্যন্ত আনুমানিক ১ বিলিয়ন পোশাক তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামি বার্বির দাম ৩ লাখ আড়াই হাজার ডলার।
সূত্র: ডেইলি মেইল
কেএসকে/জেআইএম