নব্বই দশক-আধুনিক ক্লাসরুম, শিক্ষকের গুরুত্ব অম্লান

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

শৈশবের স্কুল দিনের কথা মনে পড়ে। সকালে উঠেই স্কুলের জন্য দৌড়ঝাঁপ, হাতে বইয়ের ভার, ক্লাসরুমে গিয়ে শিক্ষকের কঠোর দৃষ্টিতে অভ্যস্ত হওয়া সবই যেন জীবনের এক অঙ্গ। সেই সময় শিক্ষক শুধু বই পড়াতেন না; তারা আমাদের চরিত্র গড়ে তুলতেন, ধৈর্য শেখাতেন এবং প্রয়োজনে কঠোর দৃষ্টিতেও শিক্ষাদান করতেন। শাস্তি বা প্রশংসা সবই ব্যক্তিগত এবং শিক্ষার্থীর মনে গভীর ছাপ ফেলত। ক্লাস শেষে শিক্ষকের দেওয়া উপদেশ, জীবনের ছোট শিক্ষা, অনুপ্রেরণা সবই মনে থেকে যেত।

আজকের দিনে স্কুলের চেহারা অনেকটাই বদলেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার, অনলাইন ক্লাস এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শিক্ষকের ভূমিকাকে নতুন আকার দিয়েছে। এখন ক্লাসরুমের দেয়াল আর ব্ল্যাকবোর্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, শিক্ষকের উপস্থিতি ভার্চুয়াল মাধ্যমেও আবির্ভাব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শহর কিংবা গ্রামের যে কোনো প্রান্ত থেকে একই সময়ে শিক্ষকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। অনলাইন ক্লাস, ভিডিও লেসন এবং ইন্টারেক্টিভ লার্নিং সফটওয়্যার শিক্ষাকে আরও সহজ এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

ইন্টারেক্টিভ শিক্ষার ধারণা নতুন যুগের শিক্ষার একটি বড় দিক। এখানে শিক্ষার্থী কেবল শোনে না, অংশগ্রহণ করে, প্রশ্ন করে এবং সফটওয়্যার বা শিক্ষকের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শেখে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, কোনো অনলাইন লেসনে শিক্ষার্থী একটি সঠিক উত্তর দিলে সফটওয়্যার তাকে প্রশংসা দেখায়, ভুল করলে সংশোধন এবং অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দেয়। এমন ধরনের শিক্ষায় শিক্ষার্থীর মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয় এবং শেখার প্রক্রিয়া আরও ফলপ্রসূ হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও শিক্ষকের নতুন ভূমিকা তৈরি হয়েছে। আজ শিক্ষকরা ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে শিক্ষণীয় ভিডিও, টিপস, লাইভ সেশন এবং প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে শিক্ষকের নির্দেশনা মেনে পড়াশোনা করতে পারছে। শুধু ক্লাসরুমে না এসে, শিক্ষার্থী নিজের সময় অনুযায়ী শেখার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে শিক্ষার গতিপ্রকৃতি দ্রুত এবং সুবিধাজনক হয়েছে।

তবে নতুন প্রযুক্তি এবং অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও এসেছে। সব শিক্ষার্থী সমানভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে না। অনলাইনে মনোযোগ ধরে রাখা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তাই শিক্ষকের এখন আরও সচেতন হতে হয়। কেবল পড়ানো নয়, শিক্ষার্থীর আগ্রহ ধরে রাখা, তাদের দক্ষতা বিকাশ করা এবং মানসিক সহায়তা দেওয়াও শিক্ষকের দায়িত্ব।

পুরোনো দিনের শিক্ষক গল্প, অভিজ্ঞতা এবং শৃঙ্খলার মাধ্যমে শিক্ষাদান করতেন। আজকের শিক্ষক প্রযুক্তি, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছেন। তবে মূল লক্ষ্য একই...শিক্ষার্থীর মেধা, চরিত্র এবং স্বপ্নকে বিকশিত করা। তারা শিক্ষার্থীর জীবনে এমনভাবে প্রভাব ফেলেন যেন তারা একজন গাইড, পথপ্রদর্শক এবং অনুপ্রেরণার উৎস একসঙ্গে হয়ে ওঠেন।

শিক্ষক শুধু বইয়ের তথ্য পাঠান না, তারা শেখান কীভাবে চিন্তা করতে হয়, সমস্যা সমাধান করতে হয় এবং জীবনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষাকে সহজ করে দিলেও, শিক্ষকের মানবিক সংস্পর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রেরণা অপরিবর্তিত থাকে। শিক্ষকের ছোঁয়া এখনো শিক্ষার্থীর জীবনে আলো জ্বালায়, তাদের আগ্রহ বাড়ায় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে।

আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। আজকের দিনে এতোটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত, শিক্ষকের উপস্থিতি কেবল জ্ঞান অর্জন করায় না, বরং জীবনের মানসিক ও সামাজিক দিকেও প্রভাব ফেলে। পুরোনো দিনে হোক বা আধুনিক ক্লাসরুমে, শিক্ষকের গুরুত্ব অম্লান।

তাই শিক্ষক দিবসে চলুন শুধু শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা নয়, শ্রদ্ধা করি তাদের অবদানকে। এছাড়াও শ্রদ্ধা প্রকাশ করি তাদের উৎসাহ এবং শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়াকে। পুরোনো দিনের স্কুল হোক বা অনলাইন লেসন... শিক্ষকদের উপস্থিতি আমাদের জীবনের আলো।

আরও পড়ুন
৩৪ বছর হাতের নখ কাটেন না তিনি 
ছবি তুলেই আয় করছেন সেজান 

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।