পা হারিয়ে থেমে গেছে জুলাই আহত শফিকুলের জীবন

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০২ পিএম, ১৫ জুলাই ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে পা হারিয়েছেন অটোরিকশাচালক শফিকুল ইসলাম/জাগো নিউজ

শফিকুল ইসলাম। পেশায় অটোরিকশাচালক। গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায়। থাকতেন গাজীপুর শহরে। সেখানেই অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ঠুরতা খেটে খাওয়া এই মানুষটিকেও ছাড়েনি। পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। পরে পা কেটে ফেলে দিতে হয়।

জাগো নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৬ জুলাই গাজীপুর শহরের রাস্তায় অটোরিকশা নিয়ে ছিলাম। একদিক থেকে মিছিল আসছিল ছাত্রদের, আরেকদিক থেকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমি মাঝখানে পড়ে যাই। এক সাইড দিয়ে চলে যেতে নিছি, তখনই পুলিশ গুলি করে। ডান পায়ের হাঁটুর নিচে লাগে। ওখানেই আমি থেমে যাই।’

‘পরে লোকজন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। কিন্তু সেখানে কোনো চিকিৎসা দেয়নি। ড্রেসিং করে ফেলে রাখছে। ওখান থেকে সাত দিন পর জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) পাঠায়। দুই মাস ৫ দিন পর সুস্থ বলে ছুটি দেয়। বগুড়ায় গ্রামের বাড়ি চলে যাই। দুই মাস বাড়ি ছিলাম। ইনফেকশন দেখা দিলে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। ওখান থেকে তেমন চিকিৎসা হয়নি, এটা সাপ্লাই নাই, ওটা সাপ্লাই নাই বলে। পরে পচে যায়, বাধ্য হয়ে ডান পা কেটে ফেলতে হয়। ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে পা কেটে ফেলা হয়।’ বলছিলেন শফিকুল ইসলাম।

পা হারিয়ে থেমে গেছে জুলাই আহত শফিকুলের জীবন

ব্র্যাক দেয় কৃত্রিম পা

পুরো ডান পা ফেলে দেওয়ার পর অসুস্থতা থেকে মুক্তি মিললেও শফিকুলের জীবন আটকে গেছে পঙ্গুত্বে। তার পাশে দাঁড়িয়েছে ব্র্যাক লিম্ব অ্যান্ড ব্রেস সেন্টার (বিএলবিসি)। তারা বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সংযোজন করেছে। মানসিক অবস্থার উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে। শুধু শফিকুল নন, এ পর্যন্ত ৩৪ জনের শরীরে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উন্নতমানের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করেছে ব্র্যাক। চিকিৎসাসেবা দিয়েছে ১৮৪ জনকে। আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্যে এই সেবা দেবে বিএলবিসি। এতে তাদের বাজেট ১২ কোটি টাকা।

পা হারিয়ে থেমে গেছে জুলাই আহত শফিকুলের জীবন

অভিযোগ জুলাই ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে

জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শফিকুল এক লাখ টাকা সহায়তা পেলেও জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রতি অভিযোগ রয়েছে তার।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তিন মাস আগে জুলাই ফাউন্ডেশনে কাগজপত্র জমা দিছি। কোনো টাকা পাইনি। ফোন দিলে বলে সময় লাগবে। অথচ অনেকে দুবার টাকা পাইছে। আমাদের কোনো মূল্যায়ন করে না। যাদের পরিচিত লোক আছে, তারা পায়। অনেকে সাত দিনে টাকা পাইছে। ওরা সব ভাগবাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলছে। ওদের সবগুলোরে বের করে দেওয়া উচিত।’

পা হারিয়ে থেমে গেছে জুলাই আহত শফিকুলের জীবন

পুনর্বাসনে প্রয়োজন একটি অটোরিকশা

শফিকুল ইসলাম জানান, স্ত্রী সন্তানসহ চারজনের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন নিজেই। পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর তার পরিবারের এখন আয় নেই। বড় মেয়ে এইচএসসি পাস করে বগুড়ায় স্নাতকে ভর্তি হয়েছে। ছোট মেয়ে সারিয়াকান্দি পাইলট স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

‘নিজের জন্য তিন-চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পুঁজি শেষ করে কিছু ধারদেনা করে দিছি। পাওনাদাররাও চাপ দিচ্ছে। জীবন চলা কঠিন হয়ে গেছে। আমি তো আগে থেকে গাড়ি চালাতাম। এখন একটা অটোরিকশা দিলে জীবন চালিয়ে নিতে পারবো।’ বলেন শফিকুল ইসলাম।

পঙ্গু হওয়ার ঘটনায় কোনো মামলা করেননি শফিকুল। তিনি বলেন, ‘বিচার চাই। কিন্তু কার নামে মামলা করবো? কোথায় করবো? আমি তো এখন পঙ্গু।’

এসইউজে/এমএমএআর/এমএফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।