স্কয়ারের ৫০০ টাকার ওষুধ মেলে মাত্র ৩৫ টাকায়!
দেশের শীর্ষ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অন্যতম স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এ কোম্পানির উৎপাদিত গ্যাস্ট্রিকের এক বক্স (১০০টি) সেকলো ক্যাপসুলের মার্কেটিং রিটেইল প্রাইজ (এমআরপি) ৫০০ টাকা। কোম্পানি ফার্মেসি মালিকদের প্রতি বক্স ৫০ টাকা কম মূল্যে ট্রেড প্রাইজ (টিপি) প্রতি বক্স সাড়ে ৪৫০ টাকায় সরবরাহ করে। কিন্তু কখনও যদি শোনা যায় স্কয়ার কোম্পানির ওষুধ মাত্র ৩৫ টাকায় প্রতি বক্স বিক্রি হচ্ছে তখন তা গাঁজাখুরি গল্প ছাড়া আর কিছুই মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু কল্পনা মনে হলেও এ কথা সত্যি রাজধানীর পুরোন ঢাকার পাইকারি ওষুধের মার্কেট মিটফোর্ডের একটি দোকানে স্কয়ার কোম্পানির সেকলো ক্যাপসুল ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। তবে সেটি আসল নয়, হুবহু স্কয়ার কোম্পানির ওষুধের মতোই দেখতে নকল ওষুধ। ওষুধের উপাদান হিসেবে আদা, ময়দা ও সুজি ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
বুধবার ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর র্যাব ১ এর সহযোগিতায় মিটফোর্ডের বিল্লাল শাহ মেডিসিন মার্কেটের এম এস ভাওয়াল ট্রেডার্স নামক একটি পাইকারি ওষুধের দোকানে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে স্কয়ারসহ শীর্ষ সাত ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হুবহু নকল ২০ লাখ টাকা মূল্যের ওষুধ জব্দ করে।
স্কয়ার ছাড়াও বেক্সিমকো, রেনেটা, এস কে অ্যান্ড এফ, এরিস্ট্রোফার্মা, জিএসকেসহ বিভিন্ন কোম্পানির ১৮ ধরনের নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত দোকান মালিক শ্যামল চন্দ্র ভাওয়ালকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
অন্যান্য খ্যাতনামা ওষুধ প্রশাসনের পক্ষে ড্রাগ সুপার এ টি এম গোলাম কিবরিয়া, র্যাব ১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ আহমেদ ও র্যাব ১ এর কমান্ডিং অফিসার মেজর সাজ্জাদ হোসেন এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ড্রাগ সুপার এ টি এম গোলাম কিবরিয়া জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন মিটফোর্ডে দেশের শীর্ষ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির তৈরি বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ যেমন স্কয়ারের সেকলো, ফিলওয়েল গোল্ড (মাল্টি ভিটামিন), রেনেটার ম্যাক্সপ্রো, এরিস্ট্রোফার্মার ক্যালবন ডি, এস কে অ্যান্ড এফ এর এস্ট্রোক্যাল ডি ও এমডি ফার্মার মাইজিট ২০০ সহ আরো বহু প্রকার ওষুধ হুবহু নকল করে উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে।
অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মঙ্গলবার তারা সোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ওই দোকান থেকে ক্রেতা সেজে কিনে আনেন। স্কয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানির লোকজনকে ডেকে এনে নমুনা পাঠিয়ে গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান।
সেদিন রাতেই পরীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়- ওষুধ এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যল ইনগ্রিডিয়েন্টস) থাকার কথা তার বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটাও এ সব ওষুধে নেই। ওষুধের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত আটা, ময়দা ও সুজি।
অপরাধীকে হাতেনাতে ধরতে বুধবার মিটফোর্ডে ভাওয়াল ট্রেডার্সে অভিযান চালানো হয়। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে শ্যামল চন্দ্র ভাওয়াল জানান, হাজি রানি মেডিসিন মার্কেটের চতুর্থ তলার ১২ নম্বর দোকানে তার গোডাউন। সেখানে গিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও র্যাবের কর্মকর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ। থরে থরে খ্যাতনামা কোম্পানির ওষুধ সাজানো! দেখতে হুবহু একই রকম।
ড্রাগ সুপার কিবরিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্যামল ভাওয়াল নকল ওষুধের ব্যবসা করে আসছিল। তার নির্দেশ ও প্রয়োজন মতো এক লোক ওষুধ উৎপাদন করে তাকে সরবরাহ করতো। র্যাব এখন তাকে খুঁজছে। শ্যামল ভাওয়ালকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এমইউ/এসএইচএস/পিআর