সারাদেশে ১২৮৫ অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক শনাক্ত, শিগগির অভিযান

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪
প্রতীকী ছবি

বিগত কয়েক বছর ধরেই অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে সরকার। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি আরও জোরদার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এরই মধ্যে সারাদেশে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত কিছুদিনের চলা অভিযানে সারাদেশে এক হাজার ২৮৫টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিগগির প্রশাসনকে তালিকা পাঠাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন: অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে শিগগির অভিযান

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবেই এতদিন ধরে এসব চলছে। এখন শুধু বন্ধ করলেই হবে না, মাঠ পর্যায়ে নজরদারিও জোরদার করতে হবে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক
বিভাগীয় কর্মকর্তাদের তথ্যে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৪১৫টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। এরপর ময়মনসিংহে ২৫২টি। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৪০টি, খুলনায় ১৫৬টি, রংপুরে ১১১টি, রাজশাহীতে ৫৫টি, বরিশালে ৪৮টি ও সিলেট বিভাগে ৮টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে।

দেশে প্রাথমিক নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। যাদের অনেকেই এক প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা মোবাইল নম্বর দিয়ে ১০ থেকে ১২টি নিবন্ধন করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠানের কোনোটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নিয়ে এর সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কোনোটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নিয়ে এর সঙ্গে ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছে। আবার কোনোটি শুধু লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে ওই আবেদনের কপি ডেস্কের সামনে ঝুলিয়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী দেখেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন: অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, দেশে প্রাথমিক নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। যাদের অনেকেই এক প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা মোবাইল নম্বর দিয়ে ১০ থেকে ১২টি নিবন্ধন করেছে। অনেকের নিবন্ধন নম্বর থাকলেও প্রতিষ্ঠান আলোর মুখ দেখেনি। তবে সারাদেশে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল আছে ৫ হাজার। এছাড়া ১০ হাজার ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে অনুমোদন নিয়ে।

hospital-2.jpg

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধুমাত্র ব্যবসা করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান খুলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা নৈতিক স্খলনের শামিল। নিবন্ধন ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের নানান ধরনের অন্যায় করার সুযোগ থাকে। একই সঙ্গে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সর্ম্পকেও জানা খুব কঠিন। তবে আমি বিশ্বাস করি, মনিটরিং করে দ্রুত এগুলো ঠিক করে ফেলতে পারবো।’

হাসপাতালগুলোর ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের বাইরে কিছু হচ্ছে না, তা বলা মুশকিল। তবে আমরা সারাদেশে আবারও সার্ভিলেন্স চালাতে বলেছি। আমাদের চলমান অভিযান আরও সক্রিয় করা হবে।

তিনি বলেন, ‘অতীতে আমরা সারাদেশেই একটা ক্রাশ অভিযান চালিয়েছি। এতে যারা নিবন্ধিত ছিল না, তারা নিবন্ধিত হয়েছে। আমাদের কাছে তাদের তথ্য আছে। নিবন্ধনটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোথায় অনিবন্ধিত হাসপাতাল আছে তা আমাদের লোকজন দেখে। যখনই তথ্য পাই, আমরা চেষ্টা করি তা বন্ধ করে দিতে।’

আরও পড়ুন: মার্চ থেকে ৩ থেকে ৪টি কিডনি প্রতিস্থাপন

ডা. আহমেদুল কবীর আরও বলেন, ‘পুরো দেশ অনেক বড় জায়গা। সারাদেশে কত ধরনের ঘটনা ঘটে যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জানে না। কোনো একটা নাশকতা ঘটার পর তা জানা যায়। অর্থাৎ সার্বক্ষণিক সার্ভিলেন্স করা তো সম্ভব হয় না। তেমনই হাসপাতালগুলোর ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের বাইরে কিছু হচ্ছে না, তা বলা মুশকিল। তবে আমরা সারাদেশে আবারও সার্ভিলেন্স চালাতে বলেছি। আমাদের চলমান অভিযান আরও সক্রিয় করা হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসাপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘অনলাইনে প্রাথমিক নিবন্ধন যে কেউ করতে পারে। যখন কোনো প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক নিবন্ধন করে, তখন আমরা চিহ্নিত করতে পারি। এছাড়া সম্ভব হয় না। প্রাথমিক নিবন্ধন শেষে নামের জন্য আবেদন করতে হয়। অধিদপ্তর যদি দেখে এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, তখন অনুমতি দেয়। আবেদন করলে অনুমোদন পেতে কী কী থাকা অত্যাবশকীয়, তা জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পরিদর্শন শেষে অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।’

তিনি আরও বলেন, ‘লাইসেন্সের জন্য আবেদনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা জানতে পারি না সেটি বৈধ না অবৈধভাবে চলছে। আবার বৈধতা যাচাইয়ে অধিদপ্তরের নিজস্ব জনবল বা তেমন কিছু নেই।’

আরও পড়ুন: অনেক কষ্টে আল্লায় ছেলেরে দিসে, না বাঁচলে কিছুই থাকবে না

এসব বিষয়ে কথা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলীর সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বড় আকারে যথার্থ পরিসংখ্যান ছাড়া সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব না। অনুমানে মনে হচ্ছে সংখ্যা কম। তবে নজরদারির অভাব রয়েছে এটা ঠিক, কিছুটা ইচ্ছাকৃত কিছুটা অনিচ্ছাকৃত।’

ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবা চলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। সে কলেবরে প্রাইভেট সেক্টরে নজরদারির জন্য জনবলের ও কাঠামোর যে বিস্তৃতি দরকার, সেটি কিন্তু খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। অধিদপ্তরের জনবল অপ্রতুল। সারা দেশের সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় পরিচালকদের অবস্থা আরও করুণ। দুই-তিনজন লোকবল নিয়ে চলছে। এই জনবল ও কাঠোমো দিয়ে নজরদারি করতে চাইলেও সম্ভব নয়।’

এএএম/কেএসআর/এসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।