জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন বিশ্বের দীর্ঘতম সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:২০ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২৫
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন জাপানের ইয়াও হাকামাতা (মাঝে সবুজ টুপি পরিহিত)/ ছবি: দ্য জাপান নিউজ

১ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পেতে যাচ্ছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত থাকার পর খুনের অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়া এক জাপানি নাগরিক। তার আইনজীবীদের দাবি, জাপানের ইতিহাসে কোনো ফৌজদারি মামলায় এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৯৬৬ সালে ইয়াও হাকামাতা নামে এই ব্যক্তি শিজুওকায় একটি মিসো (গাঁজনকৃত সয়াবিন জাতীয় খাদ্য) প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কাজ করতেন। এসময় তার মালিক, মালিকের স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানের মরদেহ তাদের বাড়িতে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে তদন্তে দেখা যায়, তাদের প্রত্যেককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ হাকামাতার বিরুদ্ধে ওই পরিবারের সদস্যদের খুন, বাড়িতে আগুন দেওয়া ও ২ লাখ ইয়েন চুরির অভিযোগ তোলে। প্রথমে হাকামাতা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে ১২ ঘণ্টা ধরে চলা জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধরের মুখে স্বীকারোক্তি দেন। যদিও তা পরে তিনি ‘বাধ্যতামূলক স্বীকারোক্তি’ বলে দাবি করেন। ১৯৬৮ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

বহু বছর ধরে তার আইনজীবীরা দাবি করে আসছিলেন যে, হত্যাকাণ্ডের সময় অপরাধীর গায়ে থাকা পোশাক থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা হাকামাতার সঙ্গে মেলেনি এবং পুলিশ তার বিরুদ্ধে ‘সাজানো প্রমাণ’ ব্যবহার করেছে।

হাকামাতার মামলাটি ছিল জাপানের ইতিহাসে দীর্ঘতম ও অন্যতম আলোচিত আইনি লড়াই। ২০১৪ সালে তাকে পুনর্বিচারের অনুমতি দেওয়া হয় ও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার কারণে পুনর্বিচার শুরু হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, জাপানের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর শিজুওকার এক আদালতে বিচারক হাকামাতার খালাসের রায় ঘোষণা করেন। এতে উল্লাস করেন শত শত মানুষ সমবেত হয়ে উল্লাস করে।

২০১৪ সালে পুনর্বিচারের অনুমতি পাওয়ার পর থেকে তিনি তার ৯১ বছর বয়সী বড় বোন হিদেকোর তত্ত্বাবধানে বসবাস করছিলেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে হিদেকো তার ভাইকে নির্দোষ প্রমাণের লড়াই চালিয়ে গেছেন।

হাকামাতার আইনজীবীরা সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের আবেদন করে যুক্তি দেন যে, ৪৭ বছর বন্দি থাকায় তিনি ছিলেন বিশ্বের দীর্ঘতম সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি। এই দীর্ঘ সময় বন্দিদশায় তার মানসিক স্বাস্থ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সোমবার (২৪ মার্চ) বিচারক কুনি কোশি এ আবেদনে সম্মতি জানান এবং রায়ে উল্লেখ করেন, হাকামাতা চরম মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। তাই তে ওই পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। আর এই অর্থ প্রদান করবে জাপান সরকার। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি দেশটির ইতিহাসে কোনো ফৌজদারি মামলায় সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।