১২ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত ‘ডায়ার উলফ’ ফিরিয়ে আনলেন বিজ্ঞানীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০২৫
গোপন স্থানে নজরদারিতে রাখা হয়েছে ডায়ার উলফগুলোকে। ছবি: কলোসাল বায়োসায়েন্সেস

বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিলুপ্ত কোনো প্রাণীকে ‘পুনর্জীবিত’ করার দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কলোসাল বায়োসায়েন্সেস। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, প্রায় ১২ হাজার ৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ‘ডায়ার উলফ’ নামে এক বিশালাকৃতির নেকড়েকে ক্লোনিং ও জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে আবারও জীবন্ত রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

প্রাচীন ডিএনএ, আধুনিক প্রযুক্তি

ডালাস-ভিত্তিক কলোসালের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ধূসর নেকড়ের জিনে পরিবর্তন এনে তারা ডায়ার উলফের মতো দেখতে তিনটি শাবক তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দুটি পুরুষ শাবক জন্ম নিয়েছে ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর এবং একটি স্ত্রী শাবক জন্ম নিয়েছে ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন>>

এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয় প্রায় ১৩ হাজার বছর পুরোনো একটি দাঁত এবং ৭২ হাজার বছর পুরোনো একটি খুলির ডিএনএ। বিজ্ঞানীরা সেই প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ডায়ার উলফের বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন এবং সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির সাহায্যে ধূসর নেকড়ের কোষে ১৪টি জিনে ২০টি পরিবর্তন আনা হয়।

নজরদারিতে শাবকরা

বর্তমানে ডায়ার উলফের তিনটি শাবক দুই হাজার একর জায়গার একটি গোপন স্থানে বিশেষভাবে সুরক্ষিত রয়েছে। সেখানে ১০ ফুট উঁচু ‘চিড়িয়াখানার মানের’ বেড়া, নিরাপত্তাকর্মী, ড্রোন এবং লাইভ ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

কলোসাল জানায়, এই গবেষণাকেন্দ্রটি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগে নিবন্ধিত এবং আমেরিকান হিউমেন সোসাইটির অনুমোদিত।

ফিরতে পারে আরও প্রাণী

২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ম্যামথ, ডোডো ও তাসমানিয়ান টাইগারকে ফিরিয়ে আনার প্রকল্প নিয়েও কাজ করছে। তবে ডায়ার উলফ নিয়ে তাদের কাজ এতদিন প্রকাশ্যে আনা হয়নি।

তবে বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। স্টকহোম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লাভ ডালেন বলেন, পুরো জিনোমে এটি ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ ধূসর নেকড়েই। কিন্তু এর বাহ্যিক গঠন, লোমের রং ও গড়নে এটি অনেকটা ডায়ার উলফের মতোই — আর সেটাই অসাধারণ।

তিনি এটিকে ‘ডায়ার উলফ ফিনোটাইপ’ বা ডায়ার উলফের মতো বৈশিষ্ট্যের বাহক বলে অভিহিত করেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বিতর্ক

কলোসালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বেন ল্যাম বলেন, এই বিশাল মাইলফলক প্রমাণ করে, আমাদের ডি-এক্সটিংশন প্রযুক্তি কার্যকর। এটি কেবল শুরু।

প্রতিষ্ঠানটি ২০২৮ সালের মধ্যে ম্যামথ শাবক জন্মদানেরও পরিকল্পনা করছে।

তবে ডি-এক্সটিংশন নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এই প্রযুক্তিতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের চেয়ে বর্তমান বিপন্ন প্রাণীদের রক্ষা করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, যেসব জীবন্ত প্রাণীকে গর্ভধারণের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে।

তবে মন্টানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দর্শনের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার প্রেস্টন বলেন, কলোসাল প্রাণী কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে বাস্তব জগতের পরিবেশে এই প্রাণীরা কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, তা এখনই বলা কঠিন।

সূত্র: সিএনএন
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।