আধুনিক ইতিহাসে প্রথম পানিশূন্য রাজধানী হতে চলেছে কাবুল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:২৯ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৫
দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকরা। ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় প্রতিটি পরিবারের টিকে থাকার লড়াই। ছুটতে হয় পানির জন্য।

৪২ বছর বয়সী চার সন্তানের মা রাহিলা প্রতিদিন সকালে রাস্তায় ছুটে যান বালতি আর জেরিক্যান হাতে। যখনই পানিবাহিত ট্যাংকারের শব্দ আসে, তিনি জানেন – এটিই সুযোগ। প্রতিটি ফোঁটা পানি এখন তাদের জন্য মূল্যবান, আর প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে তারা প্রায় সবকিছুই ত্যাগ করছেন।

রাহিলা বলেন, আমরা একেবারেই পানযোগ্য পানির সুবিধা পাচ্ছি না। পানি সংকট আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।

মানবিক সহায়তা সংস্থা মার্সি কর্পস সম্প্রতি এক রিপোর্টে জানিয়েছে, কাবুল এমন এক সংকটের দ্বারপ্রান্তে, যা শহরটির অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। এটি হতে পারে আধুনিক যুগের ইতিহাসে প্রথম রাজধানী শহর যা একেবারে পানিশূন্য হয়ে পড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত পানির উত্তোলনের কারণে কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গত এক দশকে ৩০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। শহরটি মূলত বরফ গলা পানি ও হিন্দুকুশ পর্বতের হিমবাহের ওপর নির্ভর করে, কিন্তু এখন সেই প্রাকৃতিক উৎস থেকেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

মার্সি কর্পস জানায়, প্রতি বছর কাবুলে ৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার বেশি পানি উত্তোলন করা হয়, যা প্রকৃতি পূরণ করতে পারে না। এই অসমতা শহরটির পানির ভাণ্ডার কমিয়ে দিচ্ছে।

২৮ বছর বয়সী আহমাদ ইয়াসিন কাবুলের উত্তরের একটি এলাকায় ১০ সদস্যের পরিবারে থাকেন। প্রতিদিন তাকে ও তার ভাইকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মসজিদের কূপ থেকে পানি এনে সবাইকে খাওয়াতে হয়। পরে অনেক কষ্ট করে অর্থ জমিয়ে নিজেদের পেছনের উঠানে একটি কূপ খনন করেন।

ইয়াসিন বলেন, কূপ থেকে পানি পেলেও তা পানযোগ্য নয়। আমরা ফুটিয়ে পানি ঠাণ্ডা করে তারপর খাই। ফিল্টার কেনার সামর্থ্য নেই।

মার্সি কর্পস জানায়, কাবুলের ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত। শৌচালয় ব্যবস্থার অভাব এবং শিল্পবর্জ্যই এর প্রধান কারণ।

৩৬ বছর বয়সী সরকারি কর্মচারী সায়েদ হামিদ জানান, আমরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ি। ডায়রিয়া, বমি, দাঁত ব্রাশ করার পানিতেও সংক্রমণ হয়। তিনি স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন কাবুলের তাইমানি এলাকায়।

মার্সি কর্পস এর আফগানিস্তান প্রোগ্রাম পরিচালক মারিয়ানা ফন জাহন বলেন, এটা শুধু একটি পানির সংকট নয়। এটি স্বাস্থ্য সংকট, অর্থনৈতিক সংকট এবং মানবিক বিপর্যয়– সব একসঙ্গে।

জলবায়ু গবেষক নাজিবুল্লাহ সাদিদ বলেন, এখন বৃষ্টি হচ্ছে বেশি, কিন্তু তুষার কম হচ্ছে। আর তুষারই ছিল আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির মূল উৎস। এখন তা না থাকায় সঞ্চয় কমে যাচ্ছে।

ইউনেসেফ এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যেই কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানি শেষ হয়ে যাবে। আর তখন কাবুল হবে বিশ্বের প্রথম আধুনিক রাজধানী, যে পানির জন্য হাহাকার করবে।

সূত্র: সিএনএন

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।