যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ফিলিস্তিন সমর্থন কি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠছে?
নিউইয়র্ক সিটির সাম্প্রতিক ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে বড় চমক দেখিয়েছেন জোহরান মামদানি। শুধু অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের পরাজিত করেই থেমে থাকেননি, বরং নিউইয়র্কের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী হয়েছেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম চালিকা শক্তি ছিল তার সরাসরি ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান।
নতুন এক জনমত জরিপ বলছে, মামদানিকে ভোট দেওয়া ডেমোক্রেটিক ভোটারদের ৭৮ শতাংশ মনে করেন, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। ৭৯ শতাংশ চান, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হোক। এমনকি ৬৩ শতাংশ ভোটার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে নিউইয়র্কে গ্রেফতার করাকেও সমর্থন করেছেন।
আরও পড়ুন>>
- কে এই জোহরান মামদানি?
- ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ এখন মামদানি
- নিউইয়র্কের সম্ভাব্য মেয়র জোহরান মামদানির বাংলা সংযোগ
এই জরিপটি করেছে আইএমইইউ পলিসি প্রজেক্ট ও ডাটা ফর প্রগ্রেস। তারা গত ১১ থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে ৫১৩ জন ডেমোক্রেটিক ভোটারের মতামত সংগ্রহ করেছে।
জরিপে দেখা গেছে, মামদানির পক্ষে যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের অনেকেই ২০২১ সালের নির্বাচনে ভোট দেননি। এটি ইঙ্গিত করে, হয় তারা তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন বা মামদানির প্রচারণাই তাদের রাজনীতিতে যুক্ত করেছে।
ভোটারদের কাছে মামদানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল— জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো (৮৯ শতাংশ), ধনীদের ওপর কর আরোপ এবং করপোরেট দমন (৮৬ শতাংশ), ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান (৬২ শতাংশ)।
নতুন ভোটারদের মধ্যে ফিলিস্তিন প্রশ্নে সমর্থনের হার আরও বেশি—৮৩ শতাংশ।
দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রভাব
এই মনোভাব শুধু নিউইয়র্ক শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গ্যালাপের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা এখন নেতিবাচক (মাইনাস) ২৩ পয়েন্টে নেমে গেছে, যা ১৯৯৭ সালের পর সর্বনিম্ন। গাজায় ইসরায়েলি সেনা অভিযান নিয়ে নেতিবাচক মতামত আরও বেশি, নেতিবাচক ২৮ শতাংশ।
পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন প্রশ্নে সমর্থনের ব্যবধান এখন মাত্র পাঁচ পয়েন্ট—২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে যা ছিল ৪৮ পয়েন্ট। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে অনুমান। যদিও দ্য ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>
- নিউইয়র্কে মামদানির জয়ে অখুশি কেন মোদী সমর্থকরা?
- মামদানিতে ‘নতুন ভোর’ দেখছেন দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিমরা
- জোহরান মামদানি ট্রাম্পের ‘দুঃস্বপ্ন’ নাকি আশীর্বাদ?
আইএমইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব প্রশ্নে মার্কিনিদের অবস্থান অনেকটা একমুখী হলেও ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক সদস্য এখনো বিষয়টি প্রকাশ্যে বলেন না। নিউইয়র্কের ১০ নম্বর কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে ড্যান গোল্ডম্যানের মতো প্রভাবশালী আইনপ্রণেতারা, যারা এআইপিএসি-এর অর্থায়নে নির্বাচিত হয়েছেন, তারা বরং ইসরায়েলপন্থি নীতির পক্ষে রিপাবলিকানদের সঙ্গেই ভোট দিয়েছেন।
এআইপিএসি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ইসরায়েলপন্থি লবি গ্রুপ, যারা প্রার্থীদের লাখ লাখ ডলার অনুদান দেয়। মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এআইপিএসির সমর্থন পেয়েছিলেন। যদিও অর্থনৈতিক অনুপাতে মামদানি ৮-১ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন, তারপরও তিনি নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হন।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
আইএমইইউ বলছে, মামদানির জয়ের পেছনে ফিলিস্তিন প্রশ্নে তার অবস্থানই ছিল বড় ফ্যাক্টর এবং এটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গঠনে একটি ‘ব্লুপ্রিন্ট’ হতে পারে।
‘ফিলিস্তিন এখন শুধু নীতিগত নয়, রাজনৈতিকভাবেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ইস্যু,’ বলেন আইএমইইউর যোগাযোগ পরিচালক হামিদ বেনদাস। ‘লোকজন এখন এমন প্রার্থীকে খুঁজছে, যিনি ওয়াশিংটনের প্রচলিত পথ অনুসরণ করেন না। এই বিষয়ে তাদের আগ্রহ এত প্রবল যে তারা ভোট দিতেই নেমে আসছে।’
সূত্র: মিডল ইস্ট আই
কেএএ/