বছর ঘুরলেও পর্যটক খরা কাটেনি কলকাতায়, হতাশ ব্যবসায়ীরা

ধৃমল দত্ত
ধৃমল দত্ত ধৃমল দত্ত , পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০২৫

শহর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা। আর সেখানেই অবস্থিত ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত কলকাতা নিউমার্কেট। এই মার্কেট চত্বরে মির্জা গালিব স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, মারকুইজ স্ট্রিট সংলগ্ন পুরো এলাকাটি ‘মিনি বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশের মানুষেরা চিকিৎসা, ব্যবসা কিংবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এলে মূলত কলকাতার এই অংশেই থাকেন। এখানকার সব ব্যবসাপাতিও গড়ে উঠেছে বাংলাদেশি পর্যটকদের লক্ষ্য করে। বহু বছর রমরমিয়ে ব্যবসা চললেও বর্তমানে সেই চিত্র একেবারেই আলাদা। একসময়ের লোকে-লোকারণ্য মিনি বাংলাদেশ এখন রীতিমতো খাঁ খাঁ করছে।

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দু’দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়। দেখা দেয়
ভিসা জটিলতা। মেডিকেল ভিসা ছাড়া বাকি ভিসাগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়। গুরুতর শারীরিক সমস্যা বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য ভিসা মিললেও তাতেও থাকছে নানা ধরনের শর্ত। ফলে বাংলাদেশি অতিথিদের অভাবে কলকাতার পর্যটন শিল্পের অবস্থা হয়ে পড়েছে সঙ্গিন।

আরও পড়ুন>>

বাংলাদেশি পর্যটকদের যাতায়াত না থাকায় বর্তমানে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে গেছে নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীদের। বেশ কিছু দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, ভ্রমণ কোম্পানি এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। যারা এখনো টিকে আছেন, তাদের অবস্থাও ভালো নয়।

ব্যবসায়ীদের মতে, কলকাতা নিউমার্কেট এলাকার প্রায় ৭০ শতাংশ ছোট ও মাঝারি খাবারের হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি বড় রেস্টুরেন্ট এখন সীমিত বাজেটে চলছে।

নিউমার্কেটের জনপ্রিয় খাবারের হোটেল খালেকের ব্যবস্থাপক মোহম্মদ উসমান জাগোনিউজকে বলেন, আগে একবাটি কালা ভুনা খাওয়ার জন্য এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো বাংলাদেশি অতিথিদের। আর এখন আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনের ওপর। যে কয়জন বাংলাদেশি পর্যটক আসছেন, তাদের প্রায় সবাই চিকিৎসাজনিত কারণে আসছেন। তবে তাদের সংখ্যাটাও সামান্য।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, দ্রুত ভিসা সমস্যা মিটে যাবে এবং আবার আগের মতো জমজমাট হয়ে উঠবে নিউমার্কেট।

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, আগে যখন প্রচুর বাংলাদেশি পর্যটক আসতেন, তখন প্রতিদিন কয়েক কোটি রুপির ব্যবসা হতো। কিন্তু তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গত এক বছরে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের প্রায় হাজার কোটি রুপির লোকসান হয়েছে।

ইমিগ্রেশন সূত্র জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ বাংলাদেশি পর্যটক পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। তার আগের দিনগুলোতে এই সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০ ছিল।

ঢাকা থেকে আসা মোহম্মদ আশরাফুল শিকদার জাগোনিউজকে বলেন, চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছি। আগে ছয় মাসের ভিসাতে একাধিকবার চিকিৎসার জন্য আসা যেতো। এখন সেটা একবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। এখানে আর দু’দিন থেকেই দেশে ফিরে যাবো।

এমন পরিস্থিতিতে নিউমার্কেট চত্বরের ফুটপাতের ছোটখাটো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে হোটেলের কর্মচারী, বাবুর্চি, রিকশাচালক, গাড়িচালক, দোকানের কর্মচারী হিসেবে যারা কাজ করতেন, তাদের অনেকেই এখন বেকার কিংবা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

ডিডি/কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।