কেমন যাবে নতুন বছর

বিশ্ববাজারে আরও কমবে চালের দাম, ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যে কঠোর ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্ববাজারে আরও কমবে চালের দাম/ ছবি: পেক্সেলস

২০২৬ সালে বৈশ্বিক খাদ্যবাজারে স্বস্তি থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৫ সালের শুরুতে খাদ্য ও পানীয়পণ্যের মূল্যসূচক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এরপর থেকেই সেটি ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে নতুন বছরেও। এর বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে ভালো ফলন ও তুলনামূলক স্থিতিশীল আবহাওয়াকে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে,২০২৬ সালে চালের দাম কমার ধারা অব্যাহত থাকবে। এই নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালে, যখন ভারত অ-বাসমতি চাল রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এমনকি জাপানের মতো দেশেও, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে চালের দাম বেশ চড়া ছিল, সেখানে প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষক ধারণা করছেন, ২০২৬ সালে তাদের উৎপাদিত চাল কম দামে বিক্রি হবে।

পানীয়পণ্যের ক্ষেত্রেও দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমার আভাস মিলছে। বিশেষ করে আরাবিকা কফি বিনের দাম প্রায় এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এই ভালো ফলনের পেছনে রয়েছে তুলনামূলক নিরপেক্ষ আবহাওয়া পরিস্থিতি। নতুন বছরে এল নিনো কিংবা লা নিনো—কোনোটিই বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকেরা ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের ফলে দেশটিতে কৃষিশ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে মোট কৃষিশ্রমিকের প্রায় ১৩ শতাংশই অবৈধ অভিবাসী।

অন্যদিকে, দরিদ্র দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা প্রায় স্থগিত হয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য কর্মসূচিগুলো ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এর ফলে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে খাদ্যসংকট এবং ক্ষুধা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যপণ্যে কঠোর পদক্ষেপ

স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ আসছে। ইতালি ও ইন্দোনেশিয়া চিনিযুক্ত পানীয়ের ওপর নতুন কর আরোপ করবে। যুক্তরাজ্যে উচ্চ চর্বি, লবণ ও চিনিযুক্ত খাবারের টেলিভিশন বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নেসলেসহ বড় বড় খাদ্যপ্রতিষ্ঠান খাবারে কৃত্রিম রং ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও ২০২৬ সাল গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে, যার আওতায় কোকো বিন থেকে পাম অয়েল পর্যন্ত কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে যে সেগুলো সাম্প্রতিক বন উজাড়ের সঙ্গে যুক্ত নয়। বৈশ্বিক বন উজাড়ের বড় একটি অংশের জন্য কৃষিখাত দায়ী, আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও ভূমিকা রয়েছে।

সব মিলিয়ে, ২০২৬ সালে বিশ্ব খাদ্যবাজারে দামের দিক থেকে স্বস্তি থাকলেও শ্রম, মানবিক সহায়তা ও পরিবেশ—এই তিন খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।