লকডাউনে স্কুল খোলার ‘কাশ্মীরি তরিকা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ০২ আগস্ট ২০২০

লকডাউনে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনলাইনে পাঠদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তবে ভারত শাসিত কাশ্মীরের স্কুলগুলোর ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ নজর কেড়েছে সবার। বিকল্প উপায়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করে অন্যন্য নজির তৈরি করেছে উপত্যকাটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

কাশ্মীরের বুদগাম জেলার ছোট শহর দুদপাঠরির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সকালে স্রোতস্বিনী নদী, সেতু আর পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে তাদের নতুন শ্রেনিকক্ষে উপস্থিত হয়। হিমালয়ের কোলঘেষা এলাকায় মনোরম পরিবেশে খোলা স্থানে ক্লাস করে তারা। যেখানে মানা হয় সামাজিক দূরত্বসহ সব স্বাস্থ্যবিধি।

কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে জারি লকডাউনে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর খোলা আকাশের নিচের এমন পাঠদানে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে সেখানকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভারতের কেন্দ্র সরকার শাসিত কাশ্মীরে ১৯ হাজারের বেশি মানুষের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের ৩৬৫ জন মারা গেছেন।

Kashmir-2

খোলা জায়গার স্কুলে যায় এমন এক শিক্ষার্থীর বাবা মুশতাক আহমেদ বলেন, ‘এটা অনেক ভালো হয়েছে যে, ঘরে বন্দি থাকার বদলে এমন পরিবেশে আমাদের সন্তানেরা স্কুল করতে পারছে। ঘরে বন্দি থাকতে থাকতে তারা হতাশ হয়ে পড়েছিল। স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে আরও এমন স্কুল স্থাপন উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের।’

ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে কাশ্মীরের সমস্যাশঙ্কুল সম্পর্ক আর উপত্যাকাটি সহিংসতার আতুড়ঘর হওয়া সত্ত্বেও অপার্থিব সৌন্দর্যে্যর কারণে দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পর্যটন স্থান। হিল স্টেশন হিসেবে দুদপাঠরি হিল স্টেশন হিসেবে সমধিক পরিচিত। কিন্তু এবার গ্রীষ্ম ছিল পর্যটকশূন্য।

Kashmir-2

কমিউনিটি স্কুল স্থাপনের সহযোগী আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রমজান ওয়ানি বলেন, ‘স্বাস্থ্যগত সুরক্ষাবিধি মাথায় রেখেই পাঠদান করা হচ্ছে। তবে উপরে অনিশ্চিত আবহাওয়ার কারণে আমরা টেন্ট তৈরি করে নির্বিঘ্নে পাঠদানের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

ভারতে বিশেষ করে গ্রামীন অঞ্চলে যার সরকার পরিচালিত স্বল্প তহবিলে স্কুলগুলো অনলাইনে পাঠদান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা থাকলেও তার মান খুব খারাপ কিংবা ইন্টারনেট কানেকশন রয়েছে এমন ফোনও অনেকের বাড়িতে নেই। ফলে পাঠদান হয়ে পড়েছে দুঃসাধ্য।

Kashmir-3

এমনকি বেসরকারি স্কুলগুলোতেওই একই সংকট দেখা দেওয়ায় ডিজিটাল ডিভাইডের বিষয়টি এখন প্রকাশে প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। অনেকের হাতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ আর আইপ্যাডের মতো উন্নত প্রযুক্তি সংবলিত ডিভাইস থাকলেও অনেকের পুরো বাড়িতেও একটি স্মার্টফোনের অস্বিস্ত নেই।

ফলে কাশ্মীরের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের এই বিষয়টিকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছেন। মহামারির এই কালে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভাজনের বিষয়টির অবসান ঘটাতে পারে বলে অনেকে এটিকে কার্যকরী একটি পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচনা করছে।

Kashmir-4

কাশ্মীরের সেসব কমিউনিটি স্কুলের একজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক বলেন, ‘শিশুরা যে আগ্রহী হয়ে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে এতেই বোঝা যাচ্ছে এই পদ্ধতিতে কাজে দিয়েছে। অন্য অনেক জায়গায় এভাবে পাঠদানের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে থেকেই এখানকার শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না।’

গত বছরের আগস্টে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করা ছাড়াও উপত্যকাটিকে দ্বিখণ্ডিত করে। এরপর থেকে কাশ্মীর অবরুদ্ধ থাকে মাসের পর মাস। মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বিচ্ছি করে দেওয়া হয়। কয়েক মাস পরে তা চালু হলেও দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা এখনও পায় না কাশ্মীরের মানুষ।

Kashmir-1

গত বছর থেকেই ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা মুসলিম অধ্যূষিত কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। মানুষজনকে বন্দি জীবন কাটাতে হয় সেখানে বেশিরভাগ সময়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার প্রভাব পড়ে। তাই বিকল্প উপায়ে এই পাঠদানের পদ্ধতি শুধু করোনাকালে নয় সবসময় কাজে লাগবে কাশ্মীরের শিক্ষার্থীদের।

এসএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।