‘অভিবাসী’ থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, কে এই কমলা হ্যারিস?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১৭ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কমলা হ্যারিসের নাম আলোচনার শীর্ষভাগে উঠে আসে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে যখন তিনি মার্কিন সিনেটর থেকে সোজা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নাম লেখান। কৃষ্ণাঙ্গ, তরুণ ও উদীয়মান রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন উদারপন্থীদের কাছে সেরা পছন্দ। মনোনয়নের প্রাথমিক লড়াইয়ে সাধারণ প্রতিযোগী হিসেবে নামলেও অল্প সময়ের মধ্যেই প্রথম সারিতে চলে আসেন কমলা হ্যারিস। বছরের শেষভাগে দেখা যায় একমাত্র আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ডেমোক্রেট প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে টিকে রয়েছেন এ সিনেটর।

কিন্তু বেশ কিছু নীতিমালার বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারা এবং বিতর্ক চলাকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে মৌখিক আক্রমণের চেষ্টায় কিছুটা সমর্থন হারান কমলা হ্যারিস। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া আর হয়ে ওঠেনি তার। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, কমলার সম্ভাবনা হয়তো শেষ। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে তাকেই সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাইডেন।

প্রাথমিক জীবন
ডেমোক্রেট নেতা কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে। বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস জ্যামাইকান এবং মা গোপালান হ্যারিস ভারতীয়।

jagonews24

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর কমলা ও তার বোন মায়া বড় হন তাদের হিন্দু মায়ের কাছে। কমলার মা একজন ক্যান্সার গবেষক এবং নাগরিক অধিকার কর্মী।

ভারতীয় মায়ের কাছে বড় হলেও কমলা হ্যারিস জানিয়েছেন, দুই মেয়ের জন্য জন্য তার মা ভারতীয় নয়, বরং কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতি বেছে নিয়েছিলেন। কমলা হ্যারিস তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমার মা বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি দুটি কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকে বড় করছেন। তিনি জানতেন, তার নতুন গৃহভূমি মায়া ও আমাকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবেই দেখবে, আর তাই আমাদের গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন।’

কমলা হ্যারিস জানিয়েছেন, তিনি একজন আমেরিকান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেই সবসময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

পড়াশোনা ও কর্মজীবন
সিনেটর হ্যারিস বেশ কিছুদিন কানাডাতেও ছিলেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে কলেজে ভর্তি হন, বিখ্যাত হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন তিনি। হাওয়ার্ডে চার বছর পড়াশোনার পর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আইনে ডিগ্রি অর্জন করেন কমলা এবং আলামিডা কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন।

jagonews24

২০০৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হন কমলা। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালনের সময়ই ডেমোক্রেটিক পার্টির উদীয়মান তারকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে মার্কিন সিনেটর নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন কমলা হ্যারিস।

ঝানু আইনজীবী থেকে রাজনীতিবিদ
ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সিনেটের শুনানি চলাকালে সুপ্রিম কোর্টের মনোনীত প্রার্থী ব্রেট কাভানাহো এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসসহ ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী ও কর্মকর্তাদের কঠোর প্রশ্নবাণে জর্জরিত করায় উদারপন্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ৫৫ বছর বয়সী কমলা।

প্রথম থেকেই ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিগুলোর সমালোচনা করেছেন কমলা হ্যারিস। যেসব অভিবাসী শিশু বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে (ড্রিমার্স নামে পরিচিত), তাদের তাদের নির্বাসিত করা ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।

jagonews24

আছে সমালোচনাও
গত বছর কমলা হ্যারিস যখন তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, তখন তার সমর্থনে অকল্যান্ডে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ সমবেত হয়েছিল। ফলে তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন অনেকেই। কিন্তু এ সিনেটর তার প্রচারণার জন্য একটি সুস্পষ্ট যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা প্রকাশে ব্যর্থ হন এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো প্রধান নীতিমালার প্রশ্নে নড়বড়ে জবাব দেন।

কমলা হ্যারিস তার প্রার্থিতার পক্ষে নির্দিষ্ট পয়েন্টটি ধরে রাখতেও ব্যর্থ হন। ঝানু আইনজীবী হিসেবে প্রশ্ন করার অভ্যাস থেকেই হয়তো বিতর্কের সময় বেশ কয়েকবার জো বাইডেনকে আক্রমণ করতেও দেখা যায় তাকে।

তবে পরিস্থিতি সবসময় এক রকম থাকে না। দিন শেষে তারা সবাই ডেমোক্রেট। তাই তো কমলা হ্যারিসও এখন জোর গলায় ঘোষণা দিয়েছেন, জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে সাধ্যের মধ্যে যা যা সম্ভব, তার সব করবেন এ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি

কেএএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।