অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়েছে মহামারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৫৫ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২১

করোনা মহামারির এক বছর হয়ে এলো। এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীর ভিন্ন রূপ দেখেছে মানুষ। পর্যটনকেন্দ্রগুলো ছিল জনমানব শূণ্য, দোকান-পাট, শপিংমলে ছিল না মানুষের কোলাহল, মাসের পর মাস বিমান চলাচল বন্ধ থেকেছে। এমন ঘটনার সঙ্গে মানুষ একেবারেই অভ্যস্ত ছিল না। কিন্তু মহামারি আতঙ্কে সেটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল।

বার্ক্লেকার্ড পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় পর্যবেক্ষণ করে থাকে। তাদের হিসেবে মহামারির বছরে মানুষের ব্যয় ৭.১ শতাংশ কমেছে। তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে ব্যয় ৪.১ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর বেশিরভাগ মানুষ বাসায় বসে কেনাকাটা করায় অনলাইন ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে।

অ্যাল্ডারমোর ব্যাংকের আরেকটি জরিপ অনুসারে, বাসায় বসে কাজ করার কারণে ব্রিটেনের একজন মানুষের সপ্তাহে গড়ে ১১০ পাউন্ড কম ব্যয় হয়েছে। এই মহামারির কারণে ২০২০ সালে প্রায় পুরো বছরই বিনোদনকেন্দ্র এবং শপিংমলগুলো বন্ধ ছিল। ফলে মানুষের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় অনেক কমেছে।

বার্ক্লেকার্ডের ভোগ্য পণ্য বিষয়ক প্রধান রাহেল আহমেদ বলেন, ২০২০ সালে অনলাইন ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে বসে কাজ করেছে, বাড়িতে বসেই কেনাকাটা করেছে। অনেক কাজ বাড়িতে বসে করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে মানুষ। যেমন অনেকেই জিমে যাওয়ার বদলে এখন বাড়িতেই বিভিন্ন অ্যাপ ও ভিডিও ইন্সট্রাকশন দেখে ব্যায়াম করছেন। মহামারির ঝুঁকি কেটে গেলেও এই অভ্যস্ততা থেকে যাবে।

অনলাইনে মুদি পণ্যের বিক্রি এ বছর বেড়েছে ৭০.৩ শতাংশ। অনেকেই দিনের কাঁচাবাজারের কেনাকাটাও অনলাইনে সেরে ফেলছেন। করোনা মহামারি কেটে গেলেও এই অভ্যাস মানুষের মধ্যে থেকে যাবে।

এ বছর জ্বালানী ব্যয় কমেছে ২০.৩ শতাংশ অর্থাৎ অন্য সময়ের তুলনায় এক্ষেত্রে এক পঞ্চমাংশেরও বেশি কমেছে খরচ। কারণ মানুষ যানবাহনে কম চড়েছে আর পেট্রোলের দামও কম ছিল। অপরদিকে পোশাকের ব্যয় কমেছে ১৫.৬ শতাংশ। বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে বসে কাজ করেছেন, নতুন পোশাক পরে যাওয়ার মতো অনুষ্ঠানও তেমন হয়নি।

তবে বার্কলেকার্ডের রেকর্ড বলছে, এ বছর গোশত, বেকারি জাতীয় খাবার ও পানীয়ের ক্ষেত্রে মানুষ ২৮.৬ শতাংশ বেশি খরচ করেছে। সৌখিনপণ্য ও উপহার-সামগ্রী বিক্রয়ের দোকানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মানুষের ব্যয় কমেছে ১৭.২ শতাংশ। পোশাক বিক্রি ১৫.৬ শতাংশ কমে যাওয়ায় পোশাক ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অ্যাল্ডারমোর ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, করোনা মহামারির কারণে ব্রিটেনের একজন অধিবাসীর প্রতি সপ্তাহে যানবাহনে খরচ কমেছে ২৯ পাউন্ড, প্রাতরাশ ও মধ্যাহ্নভোজনে খরচ কমেছে ২০ পাউন্ড, সহকর্মীদের উপহার দেয়া-খাওয়ানো ইত্যাদি বাবদ খরচ কমেছে ২২ পাউন্ড। এছাড়া কফি শপে না যাওয়ায় ১৮ পাউন্ড এবং সপ্তাহ শেষে ঘুরতে বের না হওয়ায় ২২ পাউন্ড কম খরচ হয়েছে।

মূল্য যাচাইয়ের ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মানিসুপারমার্কেট ডটকমের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২০ সালে ব্রিটেনের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতি মাসে গড়ে ৫৮৬ পাউন্ড সাশ্রয় করেছে যার পরিমাণ এক বছরে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৩২ পাউন্ড।

অ্যাল্ডারমোরের সঞ্চয়ী হিসাব বিভাগের পরিচালক ইয়ান এডওয়ার্ডস বলেন, মহামারি কেটে গেলেও এই সাশ্রয়ের অভ্যাস হয়তো মানুষের মধ্যে থেকে যাবে। ২০২০ সালে অনেকেই প্রচণ্ড অর্থকষ্টে ভুগেছেন। অনেকের চাকরি চলে গেছে, অনেকের বেতন কমে গেছে। নিজের ও পরিবারের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতেই হিমশিম খেয়েছেন অনেক মানুষ। ফলে আয় বাড়ানোর চিন্তাও মানুষের মধ্যে বেড়েছে।

ফারুক ফেরদৌস/টিটিএন/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।