ভ্যাকসিনের ২ ডোজের মধ্যে কম ব্যবধান বেশি কার্যকরী: গবেষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ০৫ জুন ২০২১

সারাবিশ্বে করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিনের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন কার্যক্রম বেশ সফলভাবেই চলছে বলা যায়। ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৭৬টি দেশ ও অঞ্চলে মোট ২০০ কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ভ্যাকসিনের আওতায় আনা গেছে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষকে। তবে ভ্যাকসিন প্রদানে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে ধনী-দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে। দরিদ্রদের তুলনায় বিশ্বের ধনী অঞ্চলগুলোতে ভ্যাকসিন কার্যক্রম অন্তত ৩০ গুণ দ্রুত চলছে।

এদিকে ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিন নিয়ে নতুন গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের মূল স্ট্রেনের তুলনায় করোনার ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ফাইজারের ভ্যাকসিন অনেকটাই কম কার্যকর।

গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা এই ভ্যাকসিনের একটি ডোজ পেয়েছেন বা দু'টি ডোজের মধ্যে ব্যবধান দীর্ঘ তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি কম কাজ করছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে বলে মন্তব্য করেছে ল্যানসেট।

ফাইজারের প্রথম ডোজের পর ৭৯ শতাংশ মানুষের দেহে মূল স্ট্রেনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে। কিন্তু বি.১.১.৭ বা আলফা ভেরিয়েন্টের জন্য এটাই কমে হয়ে য়ায় ৫০ শতাংশ। আর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জন্য তা হয় ৩২ শতাংশ। বিটা ভ্যারিয়েন্ট বা বি.১.৩৫১ এর ক্ষেত্রে এর মাত্রা ২৫ শতাংশ। এই বিটা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, মানুষকে হাসপাতাল থেকে দূরে রাখতে যতটা সম্ভব ভ্যাকসিন প্রক্রিয়া দ্রুত করা প্রয়োজন। লেগেসি স্টাডির শীর্ষ ক্লিনিকাল রিসার্চ ফেলো এবং ইউসিএলএইচ ইনফেকশাস ডিজিজ কনসালটেন্ট এমা ওয়াল বলেছেন, এ থেকে রক্ষা পাওয়ার একটাই উপায়। দুটি ডোজের মধ্য়ে ব্যবধান কমিয়ে আনা। এছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি নয় তাদের ক্ষেত্রে বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করার কথাও বলেছেন তিনি।

ভারতে কোভিশিল্ডের দুটি ডোজের মধ্য়ে ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। বর্তমানে কোভিশিল্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্য়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ ব্যবধান থাকছে। আগে এই সময় ছিল ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়।

যদিও সমালোচকদের অভিযোগ সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন নেই। সে কারণেই ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবধানকে আরও বাড়ানো হয়েছে। ভারতে যেখানে দুটি ডোজের মধ্য়ে ব্যবধান বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে ব্রিটেনে টিকার দুটি ডোজের মধ্য়ে ব্যবধান কমিয়ে আনা হয়েছে।

ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ল্যানসেট। দেখা গেছে, ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের মাত্র একটি ডোজ নেওয়ার পর মানুষের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অ্যান্টিবডি মাত্রা তৈরির সম্ভাবনা কম। বরং পূর্ববর্তী প্রভাবশালী আলফা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এটি অনেক বেশি কার্যকরী। এই আলফা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম পাওয়া গিয়েছিল যুক্তরাজ্যের কেন্টে।

পাব্লিক হেলথ ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞদের মতে, আলফা ভ্যারিয়েন্টকে ছাড়িয়ে গিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। আলফা ভ্যারিয়েন্টে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের চেয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের হাসপাতালে যাওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। ল্যানসেটের রিপোর্ট অনুযায়ী, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপর ভ্যাকসিনের প্রভাব কোভিডের মূল ভাইরাসের চেয়ে ৫ ভাগ কম।

টিটিএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।