অন্যান্য বছরের তুলনায় তরমুজের দাম কম ত্রিপুরায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ২০ মার্চ ২০২৩
ছবি সংগৃহীত

ত্রিপুরা প্রতিনিধি

অন্যান্য ফলের পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে তরমুজের বেশ চহিদা রয়েছে। প্রতিবছর বসন্ত ঋতুতে তরমুজের ফলন বেশ ভালই দেখা যায়। তবে তুলনামূলকভাবে এ বছর দাম অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।

মূলত যেসব এলাকায় কৃষিযোগ্য জমি রয়েছে, সেসব এলাকায় চাষিদের অনেকেই এই ফল চাষে বেশ উৎসাহ দেখান। তবে এ বছর তাদের এই উৎসাহে এক প্রকার ভাঁটা পড়েছে আবহাওয়ার কারণে। কারণ প্রতি বছর যেখানে মৌসুমের শুরুতে অন্তত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের দেখা মিলে, সেক্ষেত্রে এ বছর দেখা নেই প্রয়োজনীয় বৃষ্টির। গত দু’দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টির দেখা মিললেও তা ছিলো একেবারেই সামান্য।

সামান্য এই বৃষ্টিপাত যে চাষের কাজে কোনো উপকারেই আসছে না, তাও অকপটে একপ্রকার স্বীকার করে নিলেন চাষীদের অনেকেই। রাজ্যটির তেলিয়ামুড়া মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এ বছরও তরমুজের চাষ করে বহু চাষি। কিন্তু দীর্ঘদিন তারা অপেক্ষায় ছিলেন বৃষ্টিপাতের। শীতের শেষে আচমকাই রাজ্যটির বিভিন্ন প্রান্তে এমনিতেই তীব্র দাবদাহ। তারওপর বৃষ্টি না হওয়ায় ফাটল দেখা দিচ্ছিল চাষযোগ্য জমিগুলোতে।

নিয়মিতভাবে ৩০ ডিগ্রীর উপর দাবদাহ চলতে থাকায় হতাশার ছাপ পরিলক্ষিত হয় চাষিদের অনেকের মাঝেই। মাঝখানে গত দুদিন যাবত মেঘের আনাগোনা দেখে একপ্রকার আশার আলো বুনতে শুরু করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু তাতেও হাসি ফোটেনি কৃষকদের। কারণ গত দু'দিনে গোটা রাজ্য মিলে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেরও দেখা নেই।

সামান্য কিছু ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক ঘন্টাখানেক টানা বৃষ্টি হলেও কোথাও আবার ছিঁটেফোটাও দেখা যায়নি। এই অবস্থায় মৌসুমের অন্যান্য ফলন নিয়েও এখন ভীষণভাবেই চিন্তিত চাষিদের অনেকে।
তারা মনে করেন, এই মুহূর্তে চাষযোগ্য জমির জন্য অত্যন্ত জরুরি হলো বৃষ্টি।

আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, বজ্রপাতসহ ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে রাজ্যে। আর এ কারণেই চাষিদের অনেকে দেরি না করে বাজারজাত করে নিচ্ছেন উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল। সিপাহীজলা জেলার এক চাষিকে এই অবস্থায় অপেক্ষা না করে সোমবারই (২০ মার্চ) তার গোটা ফলন বাজারজাত করতে দেখা যায়।

মনোজ দাস নামের ওই চাষি বলেন, যখন প্রয়োজন ছিল তখন বৃষ্টি হয়নি। আর ফলন যখন শেষ পর্যায়ে তখনই শুরু হলো বৃষ্টি। এই অবস্থায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেলে যে মহাবিপাকে পড়তে হবে তাদের, একথা ভেবেই তিনি বাজারে নিয়ে এসেছেন তার উৎপাদিত ফসল।

তিনি বলেন, আগে থেকে বৃষ্টিপাত হলে বেশ ভালোভাবেই ফসল ফলানো যেতো। তরমুজ আরও অনেক আগে বাজারে উঠানো গেলে দামও মিলতো অনেক বেশি। কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিস্থিতির নিরিখে অনেকেই এখন বাজারজাত করতে শুরু করেছেন এই তরমুজ। আগে থেকে বৃষ্টিপাত হলে ভালো বীজের কিংবা ভালো মানের ফসল আরও অনেক আগে থেকেই ফলানো যেতো বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এরই মধ্যে তরমুজ আসতে শুরু করেছে বাজারে। তিনিও সেই অনুযায়ী তার উৎপাদিত ফসল বাজারজাত না করলে আরও বেশি করে লোকসানের শিকার হতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টিপাত বেড়ে গেলে ন্যায্য মূল্য মিলতে গিয়েও মহাবিপাকে পড়তে হতে পারে। যে কারণে ঝুঁকি না নিয়েই তার ফলন তুলে নিয়েছেন এরই মধ্যে।

রাজধানী আগরতলার বিভিন্ন বাজারগুলোতেও অন্যান্য বছরের তুলনায় মৌসুমের শুরুতে অনেকটাই কম দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ।

কারণ জানতে চাইলে কামান চৌমুহনী এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টি শুরু হতেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা তাদের ফলন নিয়ে আসছেন বাজারে। সেই অনুযায়ী দাম যতোটা বেশি থাকার কথা তা আর নেই এবছর।

চাষিরা বলেন, অন্তত দিন ১৫ আগে বৃষ্টিপাত হলে ফলন অনেকটাই বেড়ে যেতো। কিন্তু দেরিতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফসল ফলানোর এখন আর তেমন সুযোগ নেই। বরং সময় বেশি নিলে এখন ঝুঁকির মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। তারা মনে করেন, অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে তরমুজে পঁচনও দেখা দিতে পারে। মূলত এই আশঙ্কাতেই এখন বাজারজাত হতে শুরু করেছে তরমুজ। যে কারণে খুচরা বাজারে এর মূল্য ৩৫-৪০ রুপি কেজি দরেই এখন মিলছে ভিটামিন সি জাতীয় এই খাবার।

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।