চাকরি মানে শুধু বিসিএসকেই মনে হতো: পারভীন ইসলাম

মমিন উদ্দিন
মমিন উদ্দিন মমিন উদ্দিন , লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৪৯ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩

পারভীন ইসলাম ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ। বাবা কাজল মিয়া, মা মরিয়ম আক্তার। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে ৯ম ব্যাচে সম্মান এবং পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন

জাগো নিউজ: ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন?
পারভীন ইসলাম: দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন যখন বাস্তব রূপ লাভ করে; তখন সেটার অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে আমার থেকে বেশি খুশি হয়েছেন আমার বাবা-মা। মনে হচ্ছিল আমার নয় বরং বাবা-মায়ের স্বপ্নটাই পূরণ হয়েছে। রেজাল্টা শুনে তারা অনবরত কান্না করছিলেন। স্বপ্ন ছিল আমার সফলতার খবরটা প্রথমে আমার বাবাকে জানাবো, সেই সৌভাগ্য হয়েছে। আমার বাবা খুশিতে অঝোরে কেঁদেছেন। সেই সময়কার অনুভূতিটা ছিল আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
পারভীন ইসলাম: আমি আসলে এমন একটা কনজার্ভেটিভ পরিবেশ থেকে উঠে এসেছি; যেখানে আমার আগে কেউ এসএসসি পাস করেনি। আমিই প্রথম মেয়ে যে কি না প্রথম এসএসসি পাস করে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভার্সিটিতে পা রাখি। সর্বশেষ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য হই। তাই এ পর্যন্ত আসাটা আমার জন্য অতটা সহজ ছিল না। যেহেতু আমার বাবা-মা পড়াশোনা সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাকে একাই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যার জন্য প্রতিটি সিদ্ধান্তই ছিল আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং। তবে আমার নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তকেই আমার ফ্যামিলি সাপোর্ট করেছে। আর্থিক ও মানসিক সাপোর্টের দিক থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। আর ছোটবেলা থেকেই যেহেতু স্টুডেন্ট হিসেবে ভালো ছিলাম। ভালো রেজাল্ট করতাম। সব সময় ক্লাসে প্রথম হতাম। ক্লাস ফাইভ এবং অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলাম। সেই সুবাদে এলাকায় পরিচিত মুখ ছিলাম। তাই পারিপার্শ্বিকতা থেকেও তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না বরং সবার কাছ থেকে ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

আরও পড়ুন: বাবার মৃত্যুতেও হাল ছাড়েননি নাসিম

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
পারভীন ইসলাম: আমি আসলে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার কাছে চাকরি মানে শুধু বিসিএসকেই মনে হতো। চাকরি করলে বিসিএসের মাধ্যমেই করবো, অন্যথায় নয়। এমন একটা দৃঢ় প্রত্যয় ছিল।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
পারভীন ইসলাম: আমার বিসিএস যাত্রাটা মূলত ভার্সিটি লাইফ থেকেই শুরু হয়। যেহেতু প্রথম থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল বিসিএস। তাই আমি প্রথম বর্ষ থেকেই টিউশনি করা শুরু করি। আমি প্রচুর টিউশনি করতাম। ৫ বছর ভার্সিটি লাইফে আমি টিউশনি করেই ৬ লাখ টাকা ইনকাম করেছি। যেহেতু আমি অনেক টিউশনি করেছি। সেখান থেকেই আমার বিসিএসের বেসিকটা স্ট্রং হয়ে যায়। ৪১তম বিসিএসকে কেন্দ্র করেই পুরোদমে আমার বিসিএস জার্নি শুরু হয়। মূলত ৪১তম বিসিএসকেই আমি সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম। কিন্তু এতে ভাগ্য আমার সহায় হয়নি, নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম এতে।

বিসিএস আসলে পরিশ্রমের পাশাপাশি ভাগ্যের ফেভারটাও অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। অনেক সময় ভালো পরীক্ষা দিয়েও প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায় না। তাছাড়া বিসিএসের এই লং জার্নিটা কতটা বন্ধুর, যারা এই রাস্তায় ছিলেন বা আছেন কেবল তারাই জানেন। কত ত্যাগ-তিতীক্ষা-যন্ত্রণা এই সাধনায়, কত শত নির্ঘুম রাত, কত পরিশ্রম! আমার পড়াশোনা ২০১৯ সালে শেষ হলেও ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমি পিওর বেকার ছিলাম। যেহেতু বিসিএসই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আমার জন্য দীর্ঘ এই জার্নিটা খুব বেশি সহজ ছিল না। আদৌ আমার চাকরি হয় কি না, এটা নিয়েও অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। বহুবার ভেঙে পড়েছি, হতাশ হয়েছি কিন্তু আমার ফ্যামিলি সর্বাত্মকভাবে আমাকে সাপোর্ট করেছে।

আমি আসলে ১৮ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিলাম জীবনের কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে। আমার স্বপ্ন ছিল ভার্সিটিতে পড়া, ভালো কিছু করা। এতদূর গিয়ে সেখান থেকে খালি হাতে ফিরে আসাটাও ছিল আমার জন্য বড় একটা পাপ। তাই এই পথটা একটু বেশিই রিস্কি ছিল। পরিশেষে আমি সেই দিনটার দেখা পেয়েছি, যদিও বিসিএস থেকে প্রত্যাশাটা আমার একটু বেশিই ছিল।

আরও পড়ুন: বিসিএসে প্রথম পছন্দের ক্যাডারই পেয়েছেন মনির

জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন কি?
পারভীন ইসলাম: আমি আসলে নিজেই আমার অনুপ্রেরণা। আমাকে ভালো কিছু করতে হবে, স্বপ্নপূরণ করতে হবে—এ দৃঢ় প্রত্যয়ই আমাকে অনুপ্রাণিত করতো। তাছাড়া আমার প্রতি বাবা-মায়ের বিশ্বাস আর ভাই-বোনের প্রত্যাশা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিতো।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
পারভীন ইসলাম: যদিও আমার হাতে আরও দুটি বিসিএস আছে। কিন্তু আমার ফ্যামিলি চাচ্ছে, আমি যেন শিক্ষা ক্যাডারেই নিজেকে নিয়োজিত করি। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। সুযোগ পেলে সেটি কাজে লাগাবো। সর্বোপরি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন গর্বিত সদস্য হয়ে রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।