বিচারপতি আব্দুর রউফের দ্বিতীয় জানাজা সোমবার, দাফন ময়মনসিংহে

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুর রউফের দ্বিতীয় জানাজা সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে আজ রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাদ আসর মহাখালী গাউসুল আযম মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুর রউফ (৯১) রোববার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর মগবাজারে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফের বাবা এবং বারাকাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
মোহাম্মদ আব্দুর রউফ দীর্ঘদিন যাবৎ হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি ও বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
তিনি ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের পঞ্চম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবেও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি
বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ ১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি পেয়ে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন, আনন্দমোহন কলেজ থেকে আইএসসি ও বিএসসি ডিগ্রি, সরকারি বৃত্তি নিয়ে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ও এমএ ইন এডুকেশন ডিগ্রি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
আব্দুর রউফ ১৯৬২ সালের জানুয়ারি মাসে তদানীন্তন ঢাকা হাইকোর্টে আইন-ব্যবসায় নিয়োজিত হন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ১৯৮২ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হন। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি পদে থাকাকালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাকে ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করেন। তিনি বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পদত্যাগ করেন ও বিচারপতি এ কে এম সাদেক তার স্থলাভিষিক্ত হন। পরে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন ও ১৯৯৫ সালের জুনে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসরে যান।
সাবেক বিচারপতি আব্দুর রউফ জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসর’- এর কেন্দ্রীয় সভাপতি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ হামদর্দ (ওয়াক্ফ) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতিসংঘ মিশনে অংশ নিয়ে বিদেশেও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টার শোক-
সাবেক সিইসি ও বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আলাদা শোকবার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট বারের শোক-
বিচারপতি আব্দুর রউফের মৃত্যুতে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের একান্ত সচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. রুহুল আমীন সরদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করা হয়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বার অ্যাসোশিয়েশনের পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়।
বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির শোক-
মোহাম্মদ আব্দুর রউফের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির (বিসিএ) সভাপতি আবেদুর রহমান ও সেক্রেটারি ইবরাহীম বাহারী। বিবৃতিতে তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের ধৈর্যধারণের তৌফিক কামনা করেন। তারা আরও বলেন, মোহাম্মদ আব্দুর রউফ ছিলেন দেশ-মানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ। তিনি ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ময়মনসিংহে। পরে সদর থানার দাপুনিয়া হাইস্কুল মাঠে মাগরিবের নামাজের পর তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মায়ের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
এফএইচ/এএমএ/জিকেএস