আগে গণভোট, অস্ত্র উদ্ধারের পর জাতীয় নির্বাচন চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৯ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি

লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি বড় অংশ আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই এসব মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাক ও ইমেইলের মাধ্যমে জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র‍্যাব মহাপরিচালককে লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করা হবে।

লিগ্যাল নোটিশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে আইনজীবী জানান, জুলাই সনদের ওপর গণভোট আয়োজনে বাধা নেই। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের পর ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও দেশে এক গভীর নিরাপত্তা সংকট ও ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিপ্লব পরবর্তী অস্থিতিশীল সময়ে দেশের বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তা স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়ে যায়, যার একটি বড় অংশ আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের হাতে থাকায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির মুখে। এরই মধ্যে নির্বাচনি সহিংসতা ও প্রাণের ঝুঁকি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এই চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজ (রোববার) জনস্বার্থে আমি নিজে নোটিশ পাঠিয়েছি।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় নির্বাচনি মাঠ এখন বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছে। এর প্রমাণস্বরূপ নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি সন্ত্রাসীদের গুলিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে তা প্রার্থীদের প্রাণনাশের কারণ হবে এবং সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের জীবনের অধিকার লঙ্ঘন করবে।

নোটিশে এক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, গণভোট একটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয় এবং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ, তাই এতে সহিংস প্রতিযোগিতার সুযোগ নেই। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রক্রিয়া। তাই অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।

এ অবস্থায়, নোটিশের মাধ্যমে দাবি জানানো হয়েছে যে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত দিনে জুলাই সনদের ওপর গণভোট যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হোক, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক লুণ্ঠিত সব অস্ত্র উদ্ধার এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখতে হবে।

নোটিশে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।

এর আগে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ হয়ে গেছে।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষে দলটির মহাসচিব আইনজীবী মো. ইয়ারুল ইসলাম আবেদনটি করেছিলেন। তা গত সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

এফএইচ/এএমএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।