আটক ব্যক্তিকে নির্যাতন করা যাবে না


প্রকাশিত: ১০:৩১ এএম, ১১ নভেম্বর ২০১৬
ফাইল ছবি

কাউকে ৫৪ ধারায় আটক করা হলে তার নিকট-আত্মীয়, নিকটাত্মীয় না থাকলে তার বন্ধুকে অবশ্যই ১২ ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে । এছাড়া যাকে গ্রেফতার করা হবে তার মেমোরেন্ডাম অব অ্যারেস্ট দেখাতে হবে এবং তাতে তার সাক্ষর নিতে হবে। পাশাপাশি কখন কোথায় কিভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেসব বিষয় উল্লেখ থাকতে হবে।

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও পুলিশি রিমান্ড নিয়ে ১৩ বছর আগে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় বৃহস্পতিবার। রায় প্রকাশ করার পর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, যাকে গ্রেফতার করা হবে তার মানবাধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয় এবং যে আসামিকে আটক করা হবে তাকে যেন কোনো ধরনের নির্যাতন বা হেয় প্রতিপন্ন করা না হয় সে বিষয়টিও রায়ে বলা হয়েছে ।

তিনি বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাউকে যদি ডিটেনশনে নেওয়া হয় তাহলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে না। রায়ে বলা হয়েছে, কাউকে ১৫ দিনের বেশি রিমান্ড নেয়া যাবে না। আসামি যদি পুলিশ হেফজতে থাকে, যদি আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে হয়, তাহলে তাকে আদালতে হাজির করতে হবে এবং ডায়রি এনে সেখানে (আদালতকে) শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে হবে।

৫৪ ধারা এবং ১৬৭ ধারার রায়ে কি কি গাইডলাইন এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গাডলাইনে প্রথমেই বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় যারা আছেন, তারা যেন অতি উচ্চ মানের দায়-দায়িত্ব পালন করেন। সে বিষয়ে যথাযথ সক্ষমতা তাদের দেখাতে হবে।

তবে দেশে যদি যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করে, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় অথবা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকে, সেসব পরিস্থিতিকে ব্যতিক্রম হিসেবে ধরা হয়েছে বলে জানান মুরাদ রেজা।

রায়ে কয়েক রকম নির্দেশনা আছে উল্লেখ করে মুরাদ রেজা আরও বলেন, নির্দেশনা আছে বিচারপতি, ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি। কিছু নির্দেশনা আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিও। কিছু গাইডলাইন আছে আসামিদের সঙ্গে কি ধরণের ব্যবহার করা যাবে, সে বিষয়েও।

হাইকোর্টের অপর আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, “৫৪ ধারার মামলাটি আমরাই করেছিলাম। ১৯৯৮ সালে এ মামলাটি শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ ১৮ বছর পর এটা শেষ হলো। এখানে প্রধান বিচারপতি লম্বা জাজমেন্ট দিয়েছেন। সেখানে অনেকগুলি ভাল কথা বলেছেন। এখানে শ্যোন  অ্যারেস্ট করে হেনস্থা করার যে একটি ব্যাপার আছে সেটির বিষয়ে রায়ে উল্লেখ আছে। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩ এ বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটের যদি কোন সন্দেহ হয় আটককৃত ব্যক্তিকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন এবং পুলিশি হেফাজতে যদি কারো মৃত্যু হয় তাহলে মেডিকেল বোর্ড করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে মামলা করতে হবে। ব্যক্তির যদি কবরও হয়ে যায় তাহলে কবর থেকে তুলে মেডিকেল করে দেখতে হবে তার স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক ‍মৃত্যু হয়েছে।”
 
এছাড়া তিনি বলেন, পুলিশ রিমান্ড চাইলে তার কেস ডায়েরি, অপরাধের সঙ্গে কি প্রমাণ আছে তা কোর্টে উল্লেখ করতে হবে। কোর্ট বিস্তারিত দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। এভাবে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ না থাকলে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রায়টি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার(এসকে)সিনহাসহ আপিল বিভাগের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত ২৪ মে আপিল বিভাগ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার এবং ১৬৭ ধারায় পুলিশ রিমান্ড প্রশ্নে রাষ্ট্রের আপিল খারিজ করে দেন।

১৯৯৮ সালে ডিবি পুলিশ ঢাকার সিদ্ধেশরী এলাকা থেকে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে। পরে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় রুবেল মারা যায়। এই মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট্রসহ (ব্লাষ্ট) কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন রিট আবেদন দায়ের করে। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল বিচারপতি মো. হামিদুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারার বিধান ৬ মাসের মধ্যে সংশোধনে এক যুগান্তকারী রায় দেন।
 
এফএইচ/ওআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।