জাল অনুমোদনে কোভিড টেস্ট: তিনজন পাঁচদিনের রিমান্ডে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাল অনুমোদন দেখিয়ে কোভিড টেস্টের নামে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার তিনজনের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- আব্দুল্লাহ আলামিন, আবুল হাসান তুষার ও মোহাম্মদ শাহিন মিয়া।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদ প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা ও ঝালকাঠি জেলা হতে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, ট্যাক্স সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের জাল নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, রাজধানীর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণিতে অবস্থিত আল-রাজি কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় ফ্লোরকে নিজেদের কার্যালয় সাজিয়ে গত ১১ জুলাই একটি প্রতারক চক্র টিকেএস গ্রুপের একটি সিস্টার কনসার্ন টিকেএস হেলথকেয়ার সার্ভিস নামে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বানিয়ে মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর একটি আবেদন করে।
আবেদনে বাংলাদেশের আটটি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৯২টি উপজেলা ও চার হাজার ৫৬২টি ইউনিয়নে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করতে তাদের মোট পাঁচ হাজার ১২৬ জন সম্মুখসারির যোদ্ধা প্রস্তুত রয়েছে মর্মে আবেদনে উল্লেখ করে। ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোনো অস্তিত্ব না থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোভিড টেস্ট, লোক নিয়োগ, ক্যাম্প স্থাপনের কোনো অনুমতি তারা পাবে না প্রতীয়মান হওয়ায় প্রতারক চক্রটি সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে।
এছাড়াও তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষর, সিল জাল করে নিজেরা বুথ স্থাপন, স্যাম্পল কালেকশন, লোক নিয়োগ ও ক্যাম্প স্থাপনের অনুমতি দিয়ে দেয়। এই ভুয়া অনুমতিপত্রের মাধ্যমে আসামিরা ঢাকা ও ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর ও ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্নজনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত কোনো রকম সনদ ও অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও শুধু প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য চক্রটি এই কাজে অংশ নেয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামি আব্দুল্লাহ আল আমিন ও আবুল হাসান তুষার প্রাথমিকভাবে কোম্পানির প্রোফাইল বানানোর জন্য এক হাজার টাকা খরচ করে, বিভিন্ন লোগো সম্বলিত আবেদনপত্র প্রিন্ট করতে খরচ করে এক হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকাসহ মোট আড়াই হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সারাদেশে ১০০টি ক্যাম্প স্থাপন করে। প্রতিটি ক্যাম্পের ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য তারা কমপক্ষে দুই লাখ টাকা করে মোট দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছিল।
একই সঙ্গে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র বা যুবকদের মধ্য থেকে বেশ কয়েক লাখ ছাত্র বা যুবককে ১০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নামে আরও কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল বলে মামলা সূত্রে জানা যায়।
জেএ/এআরএ/এএসএম