ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানি ২০ অক্টোবর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২২ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২২
ফাইল ছবি

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে। নির্ধারিত বেঞ্চে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে এ শুনানি হবে।

রোববার (২৮ আগস্ট) জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হরিদাস পাল জানান, বিষয়টি শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন উপস্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বারজজ আদালত গত ৮ আগস্ট এ দিন ধার্য করেন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি করার উদ্যোগ নেয় সরকারের। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে পুনর্বহাল সংক্রান্ত ওই সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ চেয়ে প্রায় ১০ মাস আগে আবেদন করেছে সরকার।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ এএম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আমরা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) শুনানির উদ্যোগ নেবো। এরই ধারাবাহিকতায় এটি শুনানির দিন ঠিক করেছেন চেম্বারজজ আদালত।

২০১৭ সালের ৩ জুলাই সে সময়কার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছিল একই বছরের (২০১৭ সালের) ১ আগস্ট। মূল রায়টি লিখেছেন তৎকালীন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল বিষয়ে সব বিচারপতিই একমত হন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রিট আবেদন করা হলেও আপিল বিভাগের রায়ে সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গ ছাড়াও নিম্ন আদালতের বিচারকদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরসহ শৃঙ্খলা বিধান নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া রায়ে নির্বাচন কমিশন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধানসংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণতন্ত্রসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আসা হয়। এসব নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল প্রধান বিচারপতির পক্ষে-বিপক্ষে মাঠে নামে। আওয়ামী লীগ ওই রায় ঘিরে তখন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগও দাবি করে। আন্দোলন চলাকালে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে যান তিনি।

এর পরে ১০ নভেম্বর তিনি বিদেশে (সিঙ্গাপুর) থেকেই রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। যদিও সম্প্রতি নিজের লেখা এক বইয়ে বিচারপতি এস কে সিনহা দাবি করেছেন তাকে পদত্যাগ ও দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে মূল প্রসঙ্গ ছাড়াও অপ্রাসঙ্গিকভাবে অনেক কিছু টেনে আনার কারণেই সরকার ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (২০১৭ সালের) ২৪ ডিসেম্বর আবেদন দাখিল করে।

সাধারণত যে কজন বিচারপতির আদালত মূল রায় দিয়ে থাকেন, সেই আদালতেই রিভিউ আবেদনের শুনানি হয়। যদি সংশ্লিষ্ট আদালতের কোনো বিচারপতি কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকেন তবে অন্য একজন বিচারপতিকে নিয়ে শুনানি করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ মূল রায় দেওয়া বিচারকের সংখ্যা ঠিক রাখা হয়। আপিল বিভাগে ওই রায় প্রদানকারী সাতজনের মধ্যে তিনজন বিচারপতি এরই মধ্যে অবসরে চলে গেছেন।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে।

আপিল বিভাগের রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ব্যবস্থা রেখে দেওয়া হয়েছিল। পরে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়।ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়।

এ অবস্থায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। একই বছরের ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন।ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৫মে ষোড়শ সংশোধণী বাতিল করে রায় দেন। এর পরে ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ।

আপিল শুনানিতে আদালতে মতামত উপস্থাপনকারী ১০ অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অপর নয়জন অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। ওই বছরের ২০১৭ সালের ৮ মে শুনানি শুরু হয়ে ১১ দিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এর পরে আপিল আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন।

এর পরে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়।

আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষের ৯০৮ পৃষ্ঠার এ রিভিউ আবেদনে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে ৯৪টি যুক্তি দেখিয়ে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে।

এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।