মানবতাবিরোধীদের প্রতীকী বিচারে তদন্ত সংস্থার আপত্তি


প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা সদস্যের প্রতীকী বিচারের উদ্যোগে আপত্তি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিস্থ সংস্থার কার্যালয়ে দুই আসামির প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় সংবাদ সম্মেলনে আপত্তি তোলেন তিনি।

তিনি বলেন, একটা আদালত বিদ্যমান থাকা অবস্থায় অন্য কোনো আদালত হতে পারে না। সেটা প্রতীকী হোক আর যা ই হোক। এটা সঠিক হবে না।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, ২৬ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানের ১৯৫ সেনা সদস্যের প্রতীকী বিচার অনুষ্ঠিত হবে। এটা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য হতে পারে, কিন্তু বিচার হতে পারে না।

এর আগে ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গণ-আদালত গঠন করে জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার শুরু করেছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ট্রাইব্যুানালে বিচারাধীন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত আরো অনেকের সেদিন সেই প্রতীকী আদালতে বিচার হয়েছিল গোলাম আযমের সঙ্গে।

এ বিষয়ে হান্নান খান বলেন, তখন রাষ্ট্রের উদ্যোগে কোনো আদালত কিংবা ট্রাইব্যুনালে অপরাধীরে বিচার শুরু হয়নি।

তিনি বলেন, সেই ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বিষয়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে তদন্ত সংস্থা। আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছি। ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও চিঠি পাঠানো হচ্ছে।

তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার কথা বলা হলেও আত্মসমর্পণের পর তাদের প্রথমে ভারতীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। এরপরেও অনেকেই পাকিস্তানে বদলি হয়েছিলেন। সুতরাং এই সংখ্যা বাড়তেও পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাদের সহযোগীদের বিচার শুরু করে কয়েকজনের দণ্ড কার্যকর করার পর পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ভেতরে এবং বাইরে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়। পরে ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে ডেকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানানো হয়।

এদিকে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে একাত্তরে গণহত্যার দায় অস্বীকার করে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে।

এসব ঘটনাকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ আখ্যায়িত করে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। এবং নতুন করে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা সদস্যের বিচারের দাবি করে আসছে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিদেশীয় চুক্তির আওতায় (যুদ্ধাপরাধের) অভিযোগে আটক ১৯৫ সেনা সদস্যকে পাকিস্তান ফিরিয়ে নেয় বিচার করা হবে শর্তে। কিন্তু দীর্ঘ ৪৪ বছরেও তাদের বিচারের  ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পাকিস্তান।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ২০১৫ সালের শেষ দিকে ডিসেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আদালতে পাকিস্তানের ১৯৫ জনের প্রতীকী বিচার করার ঘোষণা দেন।

এফএইচ/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।