বছরজুড়ে উচ্চ আদালতের আলোচিত যত আদেশ ও রায়

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:১২ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

সময়ের পরিক্রমায় বিদায় নিচ্ছে ২০২২ সাল। ২০২২ সালজুড়েই ঘটেছে অসংখ্য আলোচিত ঘটনা। করোনা পরিস্থিতিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই বছরজুড়ে দেশের উচ্চ আদালতের কিছু মামলাও ছিল বেশ আলোচিত। উচ্চ আদালত থেকে এসেছে বেশ কয়েকটি আলোচিত রায়, আদেশও।

এর মধ্যে বিনা দোষে প্রায় তিন বছর কারাভোগ করা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া। চট্টগ্রামের ড্রেনে পড়ে নিহত শিক্ষার্থী ও সবজি বিক্রেতা, উত্তরায় গার্ডারচাপায় প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত, বাস-মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে সংঘর্ঘে নিহত ও আহতদের ১০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশে পেলো ৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনার নেপথ্যের কারণ কি ছিল সেটি খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক অধ্যাপকের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন হাইকোর্ট।

এছাড়া দুর্ঘটনায় মায়ের পেট ফেটে শিশুর জন্ম, ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রুল ছিল আদালতের সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয়। ওই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুর দাদাকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

দোষ না করেও আসামি: ভুল পরিচয় রোধে তিন পদক্ষেপ নিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা:
মামলায় আসামির ভুল পরিচয়ের কারণে ভ্রান্ত বিচার রোধে দেশের সব পুলিশ স্টেশন, কারাগারে বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালুসহ তিনটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনাসংবলিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৫ জুলাই প্রকাশ করা রায়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক মামলায় প্রকৃত আসামি না হয়েও গ্রেফতারি পরোয়ানার মুখে পড়ে এক ব্যক্তির করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২১ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। আট পৃষ্ঠার রায়টি ৫ জুলাই প্রকাশ করা হয়।

দ্বিতীয় দফায় বলা হয়, বিদ্যমান চিহ্নিতকরণ ফরমের পাশাপাশি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে তার মুখের ছবি যুক্ত করতে হবে। বলা হয়, সারাদেশের সব পুলিশ স্টেশনে বিদ্যমান ক্রাইম ডেটা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে (সিডিএমএস) আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট, হাতের তালুর ছাপ (পাম প্রিন্ট), চোখের মণি (আইরিশ) স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা যুক্তসহ বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করতে হবে।

বিদ্যমান চিহ্নিতকরণ ফরমের পাশাপাশি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে তার মুখের ছবি যুক্ত করতে হবে। মুখের ছবি সমন্বিত তথ্যভান্ডারে আপলোড করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পরপরই তার মুখের ছবি ধারণ করা সংশ্লিষ্ট পুলিশ স্টেশনের প্রথম কাজ হওয়া উচিত।

রাজধানীর খিলগাঁও থানায় নাশকতার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। এ মামলা সূত্রে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানার মুখে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ২০২০ সালে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১০ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করেন। একই সঙ্গে নোয়াখালীর জহির উদ্দিন ওই মামলার প্রকৃত আসামি কি না, তা তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।

ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় জড়ানোর ঘটনায় পাটকল শ্রমিক জাহালমকে ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। গত ১ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। এর আগে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের দেওয়া ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের সাতদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত। আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হলো বলে জানান আইনজীবীরা।

এর আগে ২৯ আগস্ট পাটকল শ্রমিক জাহালমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক। সেই আবেদনের শুনানির জন্য গত ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন আদালত। সাতদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা জাহালমকে দিতে বলেন আদালত। বাকি ক্ষতিপূরণ স্থগিত করেছেন। ওইদিন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম জাগো নিউজকে বিষয়টিকে নিশ্চিত করেন।

আরও পড়ুন>> জাহালমকে ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকা দিলো ব্র্যাক ব্যাংক

তিনি জানান, দুদকের মামলায় বিনা অপরাধে তিন বছর জেল খাটা জাহালমকে সাতদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দিতে ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত। জাহালমকে সাতদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্য অর্থ পরিশোধ না করা হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে মোট ৩৩টি মামলা করে দুদক। দুদক তদন্ত করে জানায়, জালিয়াতচক্র সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই ১৮টি ব্যাংকের মধ্যে একটি হলো ব্র্যাক ব্যাংক।

জাহালমকে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না, আমি নির্দোষ।’ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি নয়। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না।’

আরও পড়ুন>>দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিতে পারতো চসিক ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটেন, আদালতে অনবরত হাজিরা দিয়ে যান জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।

২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। রাত সাড়ে ১০টা। চশমা কিনে মামার সঙ্গে বাসায় ফিরছিলেন সেহরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯)। কিন্তু তার আর বাসায় ফেরা হয়নি। সেদিন চট্টগ্রামে আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকার খোলা নালায় পড়ে যান সাদিয়া। ভাগনিকে উদ্ধারে সঙ্গে সঙ্গে নালায় লাফ দেন মামা। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। ঘটনার চার ঘণ্টা পর সাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

তখন মর্মান্তিক এ ঘটনা দেশে বেশ আলোড়ন তোলে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সাদিয়ার পরিবারকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই ড্রেনে পড়ে কতজন নিখোঁজ, নিহত ও আহত হয়েছেন তাও জানতে চান আদালত। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল এবং নির্দেশনার আলোকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে একটি প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করা হয়।

গত বছরের ২৫ আগস্ট নগরীর মুরাদপুর এলাকায় পা পিছলে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন ছালেহ আহমেদ (৫০) নামে এক সবজি ব্যবসায়ী। ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকায় আয়োজন রেস্টুরেন্টের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাস্থল ওই নালায় কোনো স্ল্যাব ছিল না। ওই ঘটনায় সবজি ব্যবসায়ীর ছেলের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন>>জজ মিয়াকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ কেন নয়: হাইকোর্ট

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুর্ঘটনার কারণ ও দায় নিরূপণ করে তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন আদালত। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে কমিটি গঠনের নির্দেশ ও প্রতিদবেদন দিয়েছেন আদালত।

গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। রুলে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।

এর আগে গত ২৯ জুন সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। এছাড়া নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দুই কোটি টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা করে দেওয়ারও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং সিসিবি ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব, ইশরাত হাসান ও জামিউল হক ফয়সাল রিটটি দায়ের করেন।

গত ৪ জুন চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন শতাধিক।

জজ মিয়াকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ কেন নয়: হাইকোর্ট
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ‘জজ মিয়া’ সাজিয়ে কারাবাসে রাখা মো. জালাল ওরফে জজ মিয়াকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গত ২৫ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ রায়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ধরে আনা হয় জজ মিয়াকে। তাকে ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে একটি সাজানো জবানবন্দি আদায় করে সিআইডি।

২০০৫ সালের ২৬ জুন আদালতে দেওয়া ওই কথিত স্বীকারোক্তিতে জজ মিয়া বলেছিলেন, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। ওই বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ ও মুকুল প্রমুখ।

পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে এ মামলার তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন এ সংক্রান্ত মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অব্যাহতি দেওয়া হয় জোট সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়া জজ মিয়াকে। সে সময় বিনা অপরাধে পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল তাকে।

রাজধানীর উত্তরায় ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে ওই নির্মাণকাজে বিআরটি কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে তা দুই মাসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিআরটিকে এ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা সেতুর পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের পরিবার, আহত চারজন এবং দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। গত ১৪ ডিসেম্বর মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নগদ ৫ লাখ টাকা এবং বাকি ৫ লাখ টাকা ১৫ দিনের মধ্যে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এসময় শ্যামলী-এনআর কর্তৃপক্ষ ৩ লাখ টাকা দিতে চায়। তখন হাইকোর্ট বলেন, আপনাদের গাড়ি কয়টা? গাড়ি বিক্রি করে টাকা দেন। পরে তারা আজই ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হলে আদালত এ বিষয়ে অবকাশের পর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। আদালত বলেন, একটা দুর্ঘটনায় তিনজন মানুষ মারা গেলো, মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করলো, আপনারা কোনো খোঁজ নিলেন না?

আরও পড়ুন>>শ্যামলী-এনআরকে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ

হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। শ্যামলী-এনআর পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও মো. তারিকুল ইসলাম। বিআরটিএ’র পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

আইনজীবীরা জানান, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলা এলাকায় শ্যামলী-এনআর পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের চিকিৎসার জন্য আপাতত ১০ লাখ টাকা দিতে শ্যামলী-এনআর পরিবহনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শ্যামলী এনআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভংকর ঘোষ রাকেশকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। পাশাপাশি জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই মামলার পরবর্তী আদেশের দিন নির্ধারণ করেছেন।

এর আগে গত ৭ আগস্ট নিহত দুই ব্যক্তির পরিবারের সদস্য, আহত চারজন এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিসহ সাতজনের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ প্রদান সংক্রান্ত ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩ ধারা অনুসারে ‘আর্থিক সহায়তা তহবিল’ গঠনের অগ্রগতি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে (বিআরটিএ চেয়ারম্যান) জানাতে বলা হয়।

‘স্ত্রীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় প্রাণ হারালেন স্বামী’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৩১ জুলাই ওই রিট করা হয়।

গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (১৭ আগস্ট) এ রুলসহ আদেশ দেন।

আদেশে নির্মাণ কাজে বিআরটি কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে তা দুই মাসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাকারিয়া খান এ রিট দায়ের করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।

আরও পড়ুন>> প্রাইভেটকারে গার্ডার: ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

আদেশের পরে তিনি জানান, রুলে নিহতদের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি বিআরটি প্রজেক্ট গত পাঁচ বছরে জনগণের নিরাপত্তার জন্য কী কী করেছে তা আগামী ৬০ দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। সড়ক ও জনপথ সচিব, বিআরটির চেয়ারম্যানসহ ৫ জন বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

১৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা ঢাকায় একটি বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন।

গাড়িতে থাকা সাতজনের মধ্যে বেঁচে যান হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। তারা নতুন নবদম্পতি। স্বজনরা জানান, নিহত ফাহিমা হলেন নববধূ রিয়া মনির মা। আর ঝর্ণা হলেন তার খালা। রুবেল সম্পর্কে ফাহিমা-ঝর্ণার বেয়াই। জান্নাত ও জাকারিয়া ঝর্ণার দুই সন্তান। ফাহিমা-ঝর্ণাদের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। আর রুবেলের বাড়ি মেহেরপুরে।

গত ১৬ জুন ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেওয়া শিশুকে তাৎক্ষণিক এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) দুর্ঘটনাকবলিতদের জন্য গঠিত কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে এ অর্থ শিশুর অভিভাবককে দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে, ওই শিশুর কল্যাণে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। তিন মাসের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত। ওই শিশুর পরিবারকে কেন যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন>> মা-বাবা-মেয়ে নিহত: জন্ম নেওয়া শিশুর বিষয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ট্রাক মালিক মঞ্জুরুল ইসলামকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এফএইচ/এমএএইচ/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।