ফারদিন ‘হত্যার’ ইন্ধনদাতা বুশরা: ফারদিনের বাবা
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের (২৪) মৃত্যুতে তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে দায়ী করেছেন ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা। ফারদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার দাবি করে তিনি বুশরাকে এ হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা হিসেবে উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহেসিন ইফতেখারের আদালতে বুশরার জামিন শুনানি হয়। এসময় আদালতে বুশরার জামিনের ঘোর বিরোধিতা করেন ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা। এরপর আদালতের বাইরে এসে এসব কথা বলেন ফারদিনের তিনি।
ফারদিনের বাবা বলেন, ‘বর্তমান তদন্ত সংস্থা যেসব কথা বলছে তা আষাঢ়ের গল্প। বুশরা আমার ছেলেকে হত্যা করেননি। তিনি হত্যার ইন্ধনদাতা। বুশরা পরিকল্পনা করেছেন আমার ছেলেকে হত্যা করার। বুশরা একজন মেয়ে মানুষ (নারী)। বুশরাকে রাত ১০টায় আমার ছেলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো। বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদও করেছে। আমার সন্দেহ এ কারণে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’
অপরদিকে বুশরার আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদল শুনানিতে বলেন, ‘বুশরা ফারদিনের একজন ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি কোনোভাবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। তদন্ত সংস্থা এরাইমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলে দিয়েছে, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। বুশরা মেধাবী ছাত্রী। তিনি নির্দোষ। আমরা তার জামিন চাই।’
এর আগে গত ৩১ নভেম্বর বুশরার আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বুশরার জামিনের আবেদন করলে আদালত শুনানির জন্য ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুতে তার বান্ধবী আমাতুল বুশরার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মামলার অভিযোগপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হবে বলেও জানান তিনি।
কারাগারে বন্দি বুশরার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘এটি আদালতের বিষয়। আমরা আমাদের রিপোর্টে জানিয়ে দেবো তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি।’
তারও আগে দীর্ঘ ৩৮ দিনের তদন্ত শেষে তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফারদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছেন। পারিপার্শ্বিক বিষয় দেখে মনে হয়েছে তিনি আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সবকিছু মিলিয়েই আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি।
‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে ফারদিন নূর পরশের বাবার করা মামলায় গত ১০ নভেম্বর সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করা হয়।
ওইদিনই তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে রামপুরা থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
১৬ নভেম্বর পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে বুশরাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মজিবুর রহমান। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ফারদিন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।
৮ নভেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ফারদিনের মরদেহ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেউলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় বুশরাসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে মামলা করা হয়। রামপুরা থানায় নিহত ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে।
তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন ছিলেন সবার বড়। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
জেএ/কেএসআর/জিকেএস