বিশ্বকাপ আয়োজনে শ্রমিকের মৃত্যু: ফিফা-কাতারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৬ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি- সংগৃহীত

কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনকে কেন্দ্র করে মানবেতর পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অন্তত ৪৫০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন এক আইনজীবী। একই সঙ্গে তিনি ওই শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন।

রোববার (৮ জানুয়ারি) এ রিটের ওপর শুনানির জন্যে উপস্থাপন করার পর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এক সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেন। এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর জনস্বার্থে এ রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাসুদ আর. সোবহান। গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী নিজেই।

রিটে পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা), কাতারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীকে বিবাদী করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ৪০০ থেকে ৫০০ অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর কথা জানালো কাতার

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাতার বিশ্বকাপে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন রিট আবেদনে সংযুক্ত করা হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনটির শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করে আদেশ দেন।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মাসুদ আর. সোবহান বলেন, ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে কাতারে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাদের। শ্রম অধিকারের আন্তর্জাতিক কোনো রীতিনীতি তারা মানেনি। এজন্য বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। যা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। এর প্রতিকার চেয়ে আমরা রিট দায়ের করেছি।

রিট আবেদনে ইংরেজি পত্রিকা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছর আগে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর এর প্রস্তুতিতে (বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করার সময়) সেখানে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি দক্ষিণ এশিয়ান শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিশ্বকাপ আয়োজনের গৌরব অর্জনের পর থেকে কাতারে প্রতি সপ্তাহে গড়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ১২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন: কাতারে এক দশকে ১০১৮ বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু

পাকিস্তান বাদে ৪টি দেশে গার্ডিয়ানের নির্ভরযোগ্য সূত্র ও দেশগুলোর সরকারি হিসাব বলছে, ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯২৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মৃত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ১৮ জন।

কাতারে পাকিস্তানের দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ৮২৪ জন পাকিস্তানি শ্রমিক মারা গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে।

২০২০–এর শেষভাগের তথ্য এ হিসাবে নেই। কাতারে শ্রমিক সরবরাহে অনেক এগিয়ে থাকা ফিলিপাইন ও কেনিয়ার নাগরিকদের মৃতের সংখ্যা অবশ্য জানা যায়নি। এ কারণেই কাতারে প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটি আরও অনেক বড় বলেই সন্দেহ গার্ডিয়ানের।

গত ১০ বছরে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য অভাবনীয় সব প্রকল্প হাতে নেয় কাতার। সাতটা নতুন স্টেডিয়াম বানানো হয়। এর সঙ্গে আরও অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ করে দেশটি। নতুন একটি বিমানবন্দরসহ নতুন রাস্তাঘাট ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এত বড় বড় সব স্থাপনা ও উন্নয়নকাজের জন্য প্রচুর জনশক্তির দরকার হয় দেশটির।

আরও পড়ুন: স্টেডিয়াম নির্মাণে ১৪০০ নেপালির মৃত্যু

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে ফেয়ারস্কোয়ার প্রজেক্টস। এর পরিচালক নিক ম্যাকগিহান বিশ্বকাপের প্রকল্পের সঙ্গে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, ২০১১ সাল থেকে কাতারে যেসব প্রবাসী শ্রমিক মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর সেখানে গেছেন।

বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম বানানোর কাজ করছেন এমন অবস্থায়ই ৩৭ জন শ্রমিক মারা যান। যদিও বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটি এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যুকেই কাজের বাইরের ঘটনায় মৃত্যু বলে দাবি করেছে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা এসব দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্টেডিয়ামের জায়গায় কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন কিছু শ্রমিক, এমন ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি।

গত ১০ বছরে যত মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশই স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করেছে কাতার।

গার্ডিয়ান যে তথ্য পেয়েছে সে অনুযায়ী বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের যতজন মারা গেছেন তার ৬৯ ভাগকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয়েছে। ১২ ভাগের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়। শুধু ৭ ভাগের মৃত্যুর সঙ্গে কাজের পরিবেশ জড়িত। আর ৭ ভাগ কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ৮০ ভাগই বলা হয়েছে স্বাভাবিক মৃত্যু।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াদের অধিকাংশই মানবেতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাজ করেছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে আয়োজক দেশ কাতারও।

এফএইচ/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।