মানুষ কেন ভুলে যায়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ০১ নভেম্বর ২০২৩

মো: মোফাজ্জল হক

আমরা কেন ভুলে যাই বা ভুলে যাওয়ার কারণই কি এরকম প্রশ্ন নানা সময় মাথায় উঁকি দেয়। ভুলে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। ভুলে যাওয়াও কিন্তু একটি রোগ, যাকে বিজ্ঞানীদের ভাষায় ডিমেনশিয়া বলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ এই ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত।

মূলত এর কারণ ধরা হচ্ছে সাম্প্রতিক জীবনের স্ট্রেস।অধ্যাপক পল রেবর উল্লেখ করেছেন, ব্রেন যদি কোনো সর্বাধুনিক ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডারের মতো মেমোরি ধারণ করে, তাহলে সেই মেমোরি যদি কোনো টিভিতে অবিরাম সম্প্রচার করা হয়, তাহলে তিন শতাধিক বছর লাগবে তা প্রচার করতে। এতো স্টোরেজ থাকার পরও আমরা কেন ভুলে যাই?

আরও পড়ুন: কাঁচা নাকি পাকা কোন কলায় পুষ্টি বেশি? 

ভুলে যাওয়ার দুটি বাস্তব ঘটনা জেনে নেওয়া যাক- একবার আইনস্টাইনের এক সহকর্মী তার টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। আইনস্টাইন কিছুক্ষণ ভেবে তারপর নিয়ে এলেন একটি টেলিফোন ডিরেক্টরি নোট। তারপর বসে বসে একটি নম্বর খুঁজতে শুরু করলেন।

সহকর্মী বললেন, আমি তো আপনার নম্বরটা চাইছি। আইনস্টাইন বললেন, সেটাই তো খুঁজছি। সহকর্মী ভীষণ অবাক, নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে নেই আপনার!

‘দ্য ম্যান হু ফরগট হিজ ওয়াইফ’ জন ফারেলের একটি উপন্যাস। যা ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। এতে একজন শিক্ষক ভন, যিনি হঠাৎ করেই তার সম্পূর্ণ স্মৃতিশক্তি ভুলে যান। এমনকি নিজের স্ত্রী ম্যাডি’সহ অন্যান্যও বিষয়ও ভুলে গেছেন।

আরও পড়ুন: কঠোর ডায়েট করেও কেন অনেকেরই ওজন কমে না 

ভন আবারও তার স্ত্রীর প্রেমে পড়েন, কিন্তু তার স্ত্রী আর তার প্রতি আর আগ্রহী নন। কারণ তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের কথা চলছিল আর তার মধ্যেই ভন ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হন।

এখন ভন সবকিছু ভুলে গিয়ে স্ত্রীর প্রেমে পাগল হয়ে তাকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন। এভাবেই চলতে থাকে উপন্যাসের কাহিনি। এরকম আমাদের সঙ্গেও মাঝে মধ্যেই হয়। তবে তার কারণ কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক-

সাইকোলজিস্ট ড্রেভারের মতে ভুলে যাওয়া মানে ‘যে কোনো সময় কোনো অভিজ্ঞতা স্মরণে ব্যর্থতা, অথবা পূর্বে শেখা কোনো কাজ সম্পাদন করতে ব্যর্থ হওয়া।’

ভুলে যাওয়ার কারণ ২ ধরনের হতে পারে- নরমাল কজেজ অব ফর্গেটিং বা সাধারণ কারণ ও অ্যাবনর্মাল কজেজ অব ফর্গেটিং বা অস্বাভাবিক কারণ।

আরও পড়ুন: কফি কাদের জন্য বিপজ্জনক? 

ভুলে যাওয়ার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে আছে-

পুনরুদ্ধার ব্যর্থতা

তথ্য আমাদের মেমরিতে সংরক্ষণ করা হয়, তবে কখনো কখনো আমরা এটি অ্যাক্সেস করতে পারি না কারণ আমাদের সঠিক সংকেত বা ট্রিগারের অভাব আছে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো কারো নাম ভুলে যেতে পারেন যতক্ষণ না আপনি তাদের মুখ দেখতে পাচ্ছেন বা তাদের কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছেন। মুখ দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার নাম মনে হয়ে যেতে পারে। এটি টিপ-অব-দ্য-টং ফেনোমেনন নামেও পরিচিত।

তথ্য হস্তক্ষেপ

আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনা বা কাজের সম্মুখীন হচ্ছি, আর নতুন নতুন ঘটনা মস্তিষ্কে ইনপুট করার কারনে ১ সপ্তাহ আগের ঘটনা মনে রাখতে হস্তক্ষেপ করে। কখনো কখনো, অন্যান্য স্মৃতি আমাদের একটি নির্দিষ্ট স্মৃতি স্মরণ করার ক্ষমতাতে হস্তক্ষেপ করে।

আরও পড়ুন: চোখের রং বলে দেয় কোন রোগের ঝুঁকি বেশি 

এটি ঘটতে পারে যখন স্মৃতিগুলো একই রকম বা সম্পর্কিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি আজ সকালের নাশতায় যা খেয়েছিলেন তা ভুলে যেতে পারেন কারণ আপনি গতকাল যা খেয়েছিলেন তা মনে আছে। দুই ধরনের হস্তক্ষেপ আছে- সক্রিয় ও বিপরীতমুখী।

সক্রিয় হস্তক্ষেপ হলো, যখন পুরোনো স্মৃতি নতুনকে মনে রাখা কঠিন করে তোলে। রেট্রোঅ্যাকটিভ হস্তক্ষেপ হলো, যখন নতুন স্মৃতিগুলো পুরোনোগুলো মনে রাখা কঠিন করে তোলে।

ক্ষয় বা বিবর্ণ

কখনো কখনো, আমরা যখন নতুন তথ্য এনকোড করি তখন যে স্মৃতির চিহ্নগুলো তৈরি হয় তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্ণ হয়ে যায়। উদাহরণস্বরুপ, পরিবারের নিকট আত্মীয় কেউ মারা গেলে প্রথম কয়েকদিন আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকলেও এক সময় আমরা ঠিকই ভুলে যাই তাকে।

আরও পড়ুন: নারীর কোন কাজে পুরুষরা বিরক্ত হয়? 

গুরুত্বহীন ঘটনা

কিছু ঘটনা আছে যা আমরা ৫০ বছর পরে মনে রাখতে পারি আর কিছু ঘটনা আমরা এমনিতেই ভুলে যাই। কারণ এগুলো আমাদের জন্য দৃশ্যমান বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না।

মানসিক চাপ

অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে অনেকেই ভেঙে পড়েন, যা ভুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। যেমন- আপনি ৫ লাখ টাকা হারিয়ে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে যেতে পারেন আপনি ঘর থেকে বেড় হওয়ার ৩০ মিনিট পরে মনে হতে পারে, আমি কি ঘরে আদৌ তালা দিয়েছি?

ঘুমের অভাব

অপর্যাপ্ত ঘুমও হতে পারে আপনার ভুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে সারাদিন কর্মক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটতে পারে এমনকি ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন: পায়ের রং বদলে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে বিপজ্জনক 

পরিবেশ বা স্থান পরিবর্তন

স্থান পরিবর্তন হওয়ার ফলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতাওে বাড়তে পারে। যেমন- বাংলাদেশে আপনি ট্রাফিক সিগনাল বা রোড ওভারক্রসিং অনায়াসে করছেন।

তবে হঠাৎ আপনি আমেরিকা যাওয়ার পরে সেখানকার নিয়ম জানা সত্ত্বেও হঠাৎ আপনি ওভারক্রসিং বা সিগনাল তোয়াক্কা করছেন না। তবে হঠাৎ মনে হলো যে আপনি ভুল করছেন। এরকম হয় হঠাৎ স্থান পরিবর্তনের কারণে।

সময় স্বল্পতা

ধরেন আপনি সকাল ৬টায় ঢাকা যাবেন কিন্তু ঘুম থেকে উঠেছেন ১০ মিনিট আগে। আপনি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুলে মোবাইল, টাকা ও ব্যাগ রেখেই দৌড়ে যেতে পারেন।

আরও পড়ুন: পিঠ ও কোমরে ব্যথার কারণ কী? 

অমনোযোগী

অমনোযোগিতা ভুলে যাওয়া অন্যতম কারণ। কেননা শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে মনোযোগ দিয়ে শুনলে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় আর অমনোযোগী হলে বাসায় আসার আগেই ভুলে যায়।

আরও কয়েকটি কারণে ভুলে যেতে পারেন যেমন-

অনুশীলনের অভাব, ইমোশনাল ব্লকিং

অন্যদের থেকে মানসিক শক, মানসিক অসুখ, দুশ্চিন্তা, সময় চলে যাওয়া, পদ্ধতির পরিবর্তন, প্রতিবন্ধকতা ও অনুপ্রেরণার অভাব।

অস্বাভাবিক কিছু ভুলার কারণ হতে পারে মেন্টালি ব্লক। যেমন- মারাত্মক কোনো দূর্ঘটনার মাধ্যমে মেন্টালি ব্লক হয়ে সবকিছু ভুলে যেতে পারেন। তাছাড়া রিপ্রেশন বা দমন-পীড়নের কারণেও হতে পারে।

আরও পড়ুন: গলা ব্যথা সারাতে সত্যিই কি বরফ কাজ করে? 

ধরুন গহীন জঙ্গলে আপনি একা একা হাঁটছেন, সেখান হঠাৎ কিছুর আক্রমণে ভয়ে আপনি পুরোপুরি মেন্টালি ব্লক হয়ে যেতে পারেন। ভুলে যাওয়া আমাদের সহজে প্রবৃত্তি। মানুষ মাত্রই ভুলে যাবে। তবে ভুলে যাওয়াটা না হোক অস্বাভাবিক কারণে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।