চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা

৪০ জন মিলে মারেন মাহিনকে, দেওয়া হয় কবুতর চুরির অভিযোগ

মো. রফিক হায়দার মো. রফিক হায়দার চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২৫
মারধরে নিহত স্কুলছাত্র মো. রিহান উদ্দিন মাহিন

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নে ‘চোর’ সন্দেহে স্কুলছাত্র মো. রিহান উদ্দিন মাহিনকে (১৫) পিটিয়ে হত্যা মামলার ঘটনায় গ্রেফতার দুই আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা জানান, বিদ্যুতের মোটা তার, লাঠিসোঁটা ও কিলঘুসির আঘাতে স্কুলছাত্র মাহিনের মৃত্যু হয়। মারধরে অংশ নেন অন্তত ৪০ জন। মাহিনের মৃত্যু নিশ্চিত এবং অন্য দুজনকে আহত অবস্থায় ফেলে মারধরে অংশ নেওয়া লোকজন পালিয়ে যান।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমদ বলেন, গত শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোতাসিম বিল্লাহর আদালতে জবানবন্দি দেন দুই আসামি। আসামিরা হলেন আজাদ হোসেন (৩৬) ও মোহাম্মদ নোমান (৩৭)। এর মধ্যে নোমান গ্রাম্য ডাক্তার ও আজাদ গাড়িচালক। জড়িতদের বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলমান।

নিহত মাহিনের মা খদিজা বেগম বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাতজনকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজাদ ও নোমানকে গ্রেফতার করে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে আসামি আজাদ হোসেন বলেন, ছয় দিন আগে এলাকায় কিছু কবুতর চুরি হয়। সেই চুরির অপবাদ দিয়ে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে আসা মাহিনসহ তিনজনকে ধরার চেষ্টা করেন তারা। ওই সময় আজাদ, ফাহাদ, ইমন, আনোয়ার, মুন্না, শাওনসহ ছয়জন ছিলেন। তিন কিশোরকে ধাওয়া দিলে তারা পাশের একটি বাড়ির ছাদে উঠে যান। পরে তাদের ধরে এনে এলাকার একটি সেতুর সঙ্গে বাঁধা হয়। ওই অবস্থায় তাদের উপর্যুপরি আঘাত করা হতে থাকে। এক পর্যায়ে মাহিনের মৃত্যু হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন, নাজিম উদ্দিন, তানভীরসহ অন্তত ৪০ জন তিন কিশোরকে মারধর করতে থাকেন। কারও হাতে লাঠিসোঁটা আবার কারও হাতে ছিল বিদ্যুতের তার। আর কেউ কিলঘুসি মারেন। মারধরের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মাহিন। নিশ্বাস আছে কি না, নাকে হাত দিয়ে দেখা হয়। পরে সেখানে থাকা পল্লিচিকিৎসক নোমান নিশ্চিত করেন মাহিন মারা গেছে। এরপর হত্যাযজ্ঞে অংশ নেওয়া সবাই পালিয়ে যান।

আরেক আসামি মোহাম্মদ নোমানও তার জবানবন্দিতে স্কুলছাত্র মাহিনসহ তিনজনকে মারধরের কথা স্বীকার করেন। তিনিই মাহিনের মৃত্যুর বিষয়টি উপস্থিত সবাইকে জানান। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্য আসামিদের নামও উল্লেখ করেন।

ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমদ বলেন, ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে ওই এলাকায় কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। তারা নিজেরা বাচার জন্য চুরির কথা বলছেন। পূর্বের কোনো বিরোধ থেকে নাটক সাজিয়ে ওই কিশোরদের পেটানো হয়েছে।

মামলার বাদী ও নিহত মাহিনের মা খদিজা বেগম বলেন, ছেলেকে বেঁধে মারধর করা হচ্ছে খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে চোর নয়, বারবার বলার পরও আমার সামনে ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। একটু পানি চাইছিল, তারা পানি পর্যন্ত দিতে দেয় নাই। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

এএমএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।