কৃষি উপদেষ্টা

কৃষক সর্বশক্তি দিয়ে ফসল ফলালেও ন্যায্যমূল্য পায় না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:২৬ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
আন্তর্জাতিক আলু উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ছবি: জাগো নিউজ

কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কৃষক সর্বশক্তি দিয়ে ফসল ফলায় কিন্তু তারা ন্যায্যমূল্য পায় না। কৃষকদের প্রতিবাদ করার জায়গাও নেই। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা সেই স্থানটি নিতে পারে।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত আন্তর্জাতিক আলু উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

দেশে উৎপাদিত আলুর ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি, রপ্তানি বৃদ্ধি, আলুর ভ্যালুচেইন অ্যাডসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক আলু উৎসব শুরু হয়েছে। এর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।

কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত জরিস ভেন বোম্মেল প্রমুখ।

কৃষি উপদেষ্টা বলেন, সব কোল্ডস্টোরে আলু রাখার ক্ষেত্রে দাম এক ধরনের হবে। তা ছাড়া নেদারল্যান্ডসের আলুর বীজের মূল্য লিখে দিতে হবে। কেননা এসব বীজ বিভিন্ন হাত বদলের কারণে দামে পার্থক্য হয়ে যায়। এতে কৃষকরা বিপাকে পড়েন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ২০১০ সাল থেকে আলুর উৎপাদন কম বেশি হচ্ছে। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এতে অনেক সময় দাম পড়ে যায়। আবার কখনো দাম অত্যাধিক হয়। ২০২৩ সালে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ৬০ ও ২৪ সালে ৮০ টাকা কেজিতে। চলতি ২০২৫ সালে ১ কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। অথচ কৃষককে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৬ থেকে ২০ টাকায়। এ সময় তিনি ডিসেম্বর মাসে কোল্ডস্টোরে আলু রাখার আহ্বান জানান।

কৃষক সর্বশক্তি দিয়ে ফসল ফলালেও ন্যায্যমূল্য পায় না

কৃষি উপদেষ্টা বলেন, হেক্টরপ্রতি আলুর উৎপাদন তিন গুণ বেশি। আলুর অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। কম খরচে বেশি আলু উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারুপ করেন তিনি। তা ছাড়া চিপসের আলু উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ভিয়েতনাম আমাদের কাছে সার বিক্রি করতে চায়, বিনিময়ে তারা আলু আমদানি করবে। ভিয়েতনামে আগামী বছর দুই লাখ টন আলু রপ্তানি করা হবে।

তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে আলু উৎপাদনের কারণে বাজার স্থির থাকে না। কৃষক দাম পান না। এজন্য আলুর নিট ডিমান্ড ঠিক করা হচ্ছে, এবার মাঠ পর্যায়ে কী পরিমাণ আলু উৎপাদন হয় তার তথ্যসংগ্রহ করা হচ্ছে।

কৃষি সচিব বলেন, ভাতের পরেই আলুর গুরুত্ব ও প্রাপ্যতা রয়েছে। দেশের কোন এলাকায় কী ধরনের ফসল চাষ করা হবে তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আলুকে অর্থকড়ি ফসল হিসেবে মাল্টি ডায়নামিক অবস্থায় নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এজন্য আলু চাষ, বিক্রি, কোল্ড স্টোরেজসহ সম্পৃক্তদের নিয়ে অচিরেই বৈঠক করা হবে।

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, চালের পর আলু অর্থকড়ি ফসল। ২০১০ সালের পর থেকে আলুর চাষ বেশি হয়েছে। বিশেষ করে ১০, ১৫ ও ১৭ সালে বেশি আলু চাষ হয়েছে। এ সময় কৃষক ন্যায্য দাম পায়নি।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালে ২২ লাখ মেট্রিক টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। সাধারণত নভেম্বরে সব কোল্ড স্টোরে আলু শেষ হয়ে গেলেও এবার ৭ লাখ মেট্রিক টন রয়ে গেছে। ৬-৮ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হচ্ছে অথচ উৎপাদন ব্যয় ২৫ টাকা। ভারত-পাকিস্তানে উৎপাদন ব্যয় ১০ টাকা কেজি হলেও আমাদের দেশে ২০-২৫ টাকা। উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে।

মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, মেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিলে ৬৬টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। পাশাপাশি আলু চাষাবাদের জন্য বিভিন্ন উপকরণ, হিমাগারে আধুনিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মূল্য সংযোজন, রপ্তানি, কোল্ড-চেইন প্রযুক্তি, কৃষি যন্ত্রপাতি, আলুর তৈরি বিভিন্ন খাদ্য পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।

এনএইচ/এমএমএআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।