যুদ্ধের সময় কিশোর থাকায় স্বীকৃতি মেলেনি আরেফিনের

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৫ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সামছুল আরেফিন চৌধুরী

সামছুল আরেফিন চৌধুরী। পয়ালগাছা চৌধুরী বাড়ির সন্তান। একাত্তরের ১৩ বছরের এই কিশোর বড় ভাইয়ের সহপাঠীর ডাকে যান যুদ্ধে। ট্রেনিং নেই, নেই কোনো জানাশোনা। আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন ও গ্রেনেডের বস্তা বহন করে এই কিশোর সার্বক্ষণিক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে।

সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকজন শহীদ হওয়ার পর বেশ কিছু ম্যাগাজিন রেখে তার থেকে বিদায় নেন বড়ভাইয়ের সহপাঠীও। ম্যাগাজিন ও গ্রেনেডের বস্তাসহ ধরা পড়েন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে। চরম নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি পাশে থেকে দুজনকে ব্রাশ ফায়ারে ঝাঁঝরা হতেও দেখেন। ভয়ে ছিলেন তারও একই পরিণতি হবে।

এমন পরিস্থিতি থেকে বেঁচে ফেরেন তিনি। স্বাধীন দেশে তাদের যুদ্ধস্থলে হয়েছে শহীদদের স্মরণে স্তম্ভ। অনেকে অনেক কিছু পেয়েছেন, কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বয়সের কারণে তাকে স্বীকৃতি দেয়নি রাষ্ট্র। অথচ তার আক্ষেপ, যুদ্ধ দেখেনি এমন লোকও বনে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা।

সম্প্রতি, কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার বটতলী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের গল্প শুনতে গিয়ে সেখান থেকে বেঁচে ফেরা আরেফিনের সন্ধান পায় জাগো নিউজ। ঠিকানা অনুযায়ী ঢাকায় এসে তার মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনে। সেই গল্পের চুম্বক অংশ থাকছে পাঠকের জন্য-

সামছুল আরেফিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমার বয়স তখন ১৩/১৪ হবে। আমি মূলত পয়ালগাছার গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। সেদিন সেনা আসছে বলে পুরো এলাকা নীরব নিস্তব্ধ। আমরা দেখছি, আর্মি আসছে পয়ালগাছা হয়ে বটতলীর দিকে চলে গেছে। আমাদের পুকুর পাড়ে একজন লাল শার্ট পরা লোক দেখে উঁকি দিলাম। দেখি তার পেছনে আরও কয়েকজন। কাছে গিয়ে দেখি আরিফ ভাই (দোঘইর কাজী আরিফ), তিনি আবার আমার বড় ভাইয়ের ক্লাসমেট ছিলেন। তিনি বললেন, তুমি আসছো, ভালো হয়েছে, আমরা তো কেউ কিছু চিনি না। (পয়ালগাছা স্কুলে পড়লেও বাড়ির চিপাচাপা তো চেনে না) আমরা তো এখানে যুদ্ধ করতে আসছি।

ধরো বলে, আমাকে একটা বস্তা দিলো। চলো আমার লগে। আমরা নারায়ণপুরের দিকে যাবো। প্রায় একশোর মতো আর্মি গেছে ওদিকে। আমি লুঙ্গি ও শার্ট পরা ছিলাম। বস্তা নিয়ে আমি তাদের সামনে দিয়ে হাঁটি তারা আমার পেছনে পেছনে। বস্তার ওজন বেশি ছিল। তখন বুঝিনি পরে বুঝেছি, বস্তায় ম্যাগাজিন ও গ্রেনেড ছিল। কখনো হাতে, কখনো কাঁধে নিয়ে হাঁটছিলাম। আমরা হাঁটছি, ছোট ছোট ছেলে। বাড়ির ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় ৭/৮জন নারী এসে পা জড়িয়ে ধরে। আমি সরিয়ে দেই। বলি কী হয়েছে? বলে আমাদের মেরে ফেলবে, আপনারা আমাদের বাঁচান। তখনও তো আমার অতোটা বুঝ হয়নি, শুধু এতটুকু বুঝছি, আমরাই ওনাদের বাঁচাতে পারবো। তখন মনে জেদ চাপলো, মানুষগুলো এত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের রক্ষায় যেখানে যাওয়া লাগে যাবো। যা করা লাগে করবো।

একেক করকে গুনকে লে আও। তখন একজনে গিয়ে প্রথমে মমতাজকে বেয়োনেট দিয়ে আঘাত করে চিৎকার করে বলে এক মর গিয়া। এরপর এক এক করে গুনলো। কতক্ষণ পরে আমাদের কাছে নিয়ে আসলো সিরাজ ভাইকে

তিনি বলেন, তখন আরিফ ভাই বললো চলো আমরা নারায়ণপুরের দিকে যাই। আমরা হাঁটতেছি জমির আইল দিয়ে। তখন বুঝিনি এখন বুঝি যে, তারা (পাকিস্তানি সেনা) তো দূর থেকে বাইনোকুলার দিয়ে আমাদের অবস্থান নিচ্ছে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে এখন যে শহীদ মিনার হয়েছে ওখানে পুকুর ছিল, সেখানে গেলাম। পুকুরের ভিতরে পূর্ব দিকে ফিরে অ্যাম্বুস (শত্রুকে অতর্কিত আক্রমণ করার জন্য গোপনে অবস্থান নেওয়া) নিলাম। এক জায়গায় আরিফ ভাই, তারপরে সিরাজ, মমতাজ, ফিরোজসহ আরও কয়েকজন তাদের পজিশন নেন। সবাইকে বলছে রেডি হও।

আরও পড়ুন
বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই সশস্ত্র যোদ্ধা নন
শুধু রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই মুক্তিযোদ্ধা, বাকিরা সহযোগী
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা এ আমলেও অনিশ্চিত
স্মৃতিস্তম্ভের মতোই অনাদরে বটতলীর মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তিযুদ্ধের গল্প

আমি তখন বললাম সামনে আরেকটা পুকুর আছে, ওই রাস্তা দিয়ে তো আর্মি আমাদের নাকের ওপর এসে পড়বে। ওখানে দুজন গেলো। আমাদের জানামতে পেছনে তো কেউ নেই, সামনে বটতলী আর্মি আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে শেলিং শুরু হলো পেছন থেকে। একেকটা এসে পুকুরের পানিতে পড়ে। পানি এসে গা ভিজে যায়। কিন্তু পেছনে তো ধুঁ ধুঁ মাঠ। কিচ্ছু নেই। আরিফ ভাই বলছেন, সিরাজ ভাই কী করবো? সামনে তো আর্মিরা কাছাকাছি চলে আসছে। বললেন, অপেক্ষা করো। কয়েকবার বলার পর আমি আর পারি না বলে- সিরাজ ভাই ফায়ার করলেন। দুটো গুলি করার পর সিরাজ ভাইয়ের এসএলআর বন্ধ হয়ে গেলো। এরপর বললেন আমি কী করবো? আরিফ ভাই ওখান থেকে বললেন, এটাকে ওয়াশ করেন। সিরাজ ভাই অস্ত্রের ভেতরে প্রস্রাব করছেন। গরম পানি দিয়ে ওয়াশ করতে হয়। গরম পানি কই পাবে, প্রস্রাব করছেন। এরপর গুলি আরেকটা করার পর আবার বন্ধ হয়ে গেছে।

যুদ্ধের সময় কিশোর থাকায় স্বীকৃতি মেলেনি আরেফিনের

‘যদি আমি মরে যাই তুমি সবার কাছে মাফ চেয়ে নিও’

তিনি বলেন, পাশে যারা আছে, দু-একটা করে গুলি করেন। ওদিক থেকে আরিফ ভাই একের পর এক ফায়ার করে যাচ্ছেন। আমি ম্যাগাজিন দিচ্ছি। কতক্ষণ পর ফিরে দেখি পেছনে কেউ নেই। তখন আরিফ ভাইকে বললাম, সবাই তো চলে গেছে। আমরা কী করবো। আরিফ ভাই বললেন, আমাদের তো আর থাকার সুযোগ নেই। চলো, আমরা ভাগি। বস্তাটা কই? এটা নিয়ে চললাম।

পেছনে ছনক্ষেতে গিয়ে ঢুকলাম। ছনক্ষেতে গিয়ে আরিফ ভাই বললেন, আমরা মনে হয় বাঁচবো না। যদি আমি মরে যাই তুমি সবার কাছে আমার পক্ষ থেকে মাফ চেয়ে নিও। তুমি মরলে আমি মাফ চেয়ে নেবো। তখন উনি কোমরের বিভিন্ন জায়য়গা ম্যাগজিনগুলো ঢুকাইলেন। আমারে একটা গ্রেনেড হাতে দিয়ে বললেন- ‘যদি তুমি বিপদে পড়ো, তাহলে এটাতে দাঁতে কামড় দিয়ে টান দিয়ে মাইরা শুয়ে যাইবা। নইলে কিন্তু গায়ে লাগবে। ট্রেনিং কিন্তু আমার ওই এতটুকুই। শেষে আরিফ ভাই বললেন, তুমি যাও। আমারে মাফ কইরা দিও। উনি বটতলীর দিকে কোনাকুনি রওয়ানা দিলেন। আমি আরেক দিকে গেলাম। ৭/৮ হাত সামনে গিয়ে দেখি মমতাজের লাশ। আমি যাচ্ছি, ধানের ক্ষেতের সারির মাঝ দিয়ে বস্তাটা মুড়ি দিয়ে দাঁতে আটকে কনুই আর হাঁটু দিয়ে হামাগুঁড়ি দিয়ে। এভাবে আমি চলে গেলাম ভারুল।

কনুই ও হাঁটু চেক করে বললো তুম মুক্তিওয়ালা। তখন পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে রাস্তার ওপর পা দিয়ে ইনক্লাইন্ট পজিশনে রেখে রাইফেল তাক করে আবার বললো, সাচ বলো অর শুট কর দেগা

‘এত মারছে সেন্স ছিল না পরে’

আরেফিন বলেন, ওখানে গিয়ে এক জায়গায় সামনে পড়লো রাস্তা। উঠতেই ওপর দিয়ে ফায়ার হচ্ছে। চুল পর্যন্ত নড়ে বুলেটের বাতাসে, এত ফায়ার হচ্ছে। পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি অন্তত ৫০ জন আর্মি। লাইন ধরে ব্রাশ ফায়ার করছে। ধানের জন্য আমাকে দেখা যায় না। এক পর্যায়ে এসে রাইফেল দিয়ে বাড়ি দিয়ে তারা আমাকে ধরলো। পোটলাটা তখনও আমার হাতে। ছাড়ি নাই। মাথায় ছিল এটা তো দিতে হবে ওনাদের। ওটা নিয়েই ধরা পড়ছি। এত মারছে। কতক্ষণ সেন্স ছিল না। সেন্স আসার পর দেখলাম, আমারে বেঁধে বটতলী বাজার নিয়ে আসছে। ওখানে গ্রামের আশপাশের কতগুলো লোকও ধরে নিয়ে আসছিল।

ওখানে পয়ালগাছা স্কুলের হেডমাস্টারও ছিলেন। কাজী আরিফের চাচা মফিজ কাজীকেও আনছে। আব্দুল হক মাস্টার, পোস্টমাস্টারের ছেলে খসরু মামা, হেডমাস্টারের ছেলে আইডিয়াল স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন, ওনাকেও নিয়ে আসছে। উনি বেড়াইতে আসছিলেন। এরকম ১৭/১৮ জন নিয়ে আসছে। কতক্ষণ পরে দেখলাম ধরে নিয়ে আসছে আবুর ভাই মকবুলকেও। সে আমাদের সঙ্গে ছিল না। অন্য কোথাও থেকে আনছে। বাগমারার একটা ছেলে আবু সাঈদ নামে তাকেও আনছে।

‘পাশের একজনকে মেরে ফেললো, তারপর আমি’

আরফিন বলেন, আমাকে, মকবুল ও আবু সাঈদকে বাঁধছে। অন্য যারা আছে, ওনাদের আলাদা রাখছে। বাঁধেনি। হেডমাস্টার বললো, আমি নামাজ পড়বো। নামাজে উনি কত সেজদা দেয় আমি কইতে পারমু না। আদৌ ওনার নামাজে মনোযোগ ছিল না। জানেনই তো জীবন শেষ। অনেকে কাঁদতেছে। আর্মি বললো, নো সাউন্ড। হঠাৎ করে একজন অফিসার এসে বললো, কয়জন মরছে? একেক করকে গুনকে লে আও। তখন একজনে গিয়ে প্রথমে মমতাজকে বেয়োনেট দিয়ে আঘাত করে চিৎকার করে বলে এক মর গিয়া। এরপর এক এক করে গুনলো। কতক্ষণ পরে আমাদের কাছে নিয়ে আসলো সিরাজ ভাইকে। উনি গুলিবিদ্ধ ছিলেন।

আমরা উর্দু কিছু বুঝি- বললো তুম মুক্তিওয়ালা। সাচ বাতাও ছোড় দেগা। ভেজ বাতাও শুট করদেগা। বললো, আমি সত্যি বলছি আমি মুক্তিওয়ালা না। কনুই ও হাঁটু চেক করে বললো তুম মুক্তিওয়ালা। তখন পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে রাস্তার ওপর পা দিয়ে ইনক্লাইন্ট পজিশনে রেখে রাইফেল তাক করে আবার বললো, সাচ বলো অর শুট কর দেগা। তখন একটা গুলি করলো। পরে উনি জয় বলতে গেছে, মানে জয় বাংলা স্লোগান দেবে। তখন ‘সালে …. জয় বাংলা বলা’ বলেই ব্রাশ ফায়ার করে দিলো। উনি আমার পাশেই। তারপর সিরিয়ালে আমি।

যুদ্ধের সময় কিশোর থাকায় স্বীকৃতি মেলেনি আরেফিনের

‘যুদ্ধ করতে করতে মরলেন আরিফ ভাই’

এরপর একটু সামনে এগিয়ে গেলো অফিসার। আমি আগে খেয়াল করিনি, ওখানে রাস্তার পাশে গর্ত ছিল। আমাদের দেশের আগে রাস্তা বাঁধতো মাটি কেটে, ওই গর্ত থেকেই যেত। পুরো ক্ষেতে ধান। মাঝখানে এই গর্ত ছিল। ওখানে ধানের ভেতরে পানির মধ্যে নাকটা জাগায়া পড়ে ছিলেন কাজী আরিফ ভাই। যখন একজন একজন করে বেয়োনেট নিয়ে খোঁচা দিয়ে গুনে আসতেছে। উনি টের পাইছেন। উনি ব্রাশ ফায়ার করে দিলেন। তখন আর্মিরা চারদিকে ঘেরাও করে ফেললো। এরপর তারও পেছন থেকে আরেকটা দল ব্রাশ ফায়ার করলো। এতে কিন্তু আর্মিরা মরে না। তারা তো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এরপর আরিফ ভাইও আবার উঠে দ্বিতীয় বার ব্রাশ ফায়ার করলেন। পরে সেনারা চতুর্দিক থেকে আরও ক্লোজ হলো তৃতীয়বার ফায়ার করতে উঠছে পরেই সেনারা তাকেই ফায়ার করে ঝাঁঝরা করে দিলো। কাত হয়ে পড়লো। ওনার হলুদ গোলাপির সংমিশ্রণে একটা হাফ শার্ট গায়ে ছিল। পরে সেনারা বললো, শালা বা…. মর গিয়া। ক্লোজ।

বললো, আমাকে মেরে ফেলবে। এর মধ্যে একদিন জানালা দিয়ে চোখ গেলো অনেক দূরে। দেখি, আমার আব্বা কান্না করতেছে। তখন খুব কষ্ট পাইছি

‘ছাড়া পেয়ে শান্তি কমিটির প্রতিবাদে আটক হই’

পরে আমাদের নিয়ে হেঁটে মুদাফফরগঞ্জ নিয়ে চললো। তিনজনই বাঁধা। বাকিদের এমনিতেই এসকট করে নিয়ে যাচ্ছে। এত পিপাসা লাগছে, ওই সময় খালের পানি খাইছি। প্রথমে মুদাফ্ফরগঞ্জ নিয়েছে। ওখানে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ এক দীর্ঘ ইতিহাস। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আমার ভাই ডা. আশরাফুল হকের পরিচয়ে ছেড়ে দিয়েছে। মুদাফ্ফরগঞ্জ বাজারের মাঝামাঝি যাওয়ার পর ভাই বললো, তার ব্যাগটা ফেলে গেছে। আমাকে বললো নিয়ে আসতে। আমি গিয়ে নিয়ে আসলাম। এসে দেখি, ভাই কাঁপে। শান্তি কমিটির কয়েকজন আসছে। আমাকে ছাড়ায় তারা প্রতিবাদ করছে। তখন আবার ধরলো। পরে হাজীগঞ্জ নিয়ে গেছে।

‘তোমার ছেলেকে বলবা যুদ্ধ শিখে আসতে’

হাজীগঞ্জ গিয়ে দেখি, আমাদের যাদের ধরছে সবাই ওখানে। দু-একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আমার কাছে গ্রেনেড ছিল বলে ছাড়েনি। বললো, আমাকে মেরে ফেলবে। এর মধ্যে একদিন জানালা দিয়ে চোখ গেলো অনেক দূরে। দেখি, আমার আব্বা কান্না করতেছে। তখন খুব কষ্ট পাইছি। আব্বা সরকারি চাকরি করতেন। পরে দেখি আমার রুমে অফিসার এবং আব্বা। অফিসার ইংরেজিতে বললেন, ‘ওর বয়সী আমার একটা ছোট ভাই আছে। আসার সময় সে পা জড়িয়ে বলছিল, ভাই তুমি যুদ্ধে যেও না। আমি তোমাকে তো আর দেখতে পাবো না। ওকে দেখে আমার তার কথা মনে পড়েছে। তাই ছেড়ে দিলাম। তবে তোমার ছেলেকে বলবে যুদ্ধ শিখে যুদ্ধ করতে আসতে।’

মুচলেকা নিয়ে আব্বার জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে। শর্ত ছিল আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে। পরে জানছি- বাকি দুজনকেও গুলি করে মারার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুদাফ্ফরঞ্জ নিয়েও আসছে। সেখানে একজন অফিসার তাদের বিষ্ণুপুরের কাছাকাছি নিয়ে গেছে গুলি করে মারার জন্য। তখন অফিসারদের বোঝানোর জন্য খালি ওপরের দিকে ফায়ার করছে। ওদের বলছে, তোমরা দৌড়ে চলে যাও।

স্বাধীনতার পর স্বীকৃতি চাননি? জবাবে তিনি বলেন, একাধিকবার চেষ্টা করেছি, হয়নি। না দিলে কী করার আছে? আমরা মাঠে ছিলাম। সব দেখলাম। যারা যুদ্ধ দেখেওনি, এখন দেখি তারা মুক্তিযোদ্ধা!

আরেফিনের স্বীকৃতির বিষয়ে তৎকালীন আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (পরবর্তীসময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এমপি হন) অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামছুল আরেফিনের বয়স কম হওয়ায় তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। তারপরও আমি এমপি থাকা অবস্থায় তার বিষয়ে লিখে দিয়েছিলাম স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। দেয়নি।’

এ বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক শাহিনা খাতুনের বক্তব্য জানতে চেয়েও পাওয়া যায়নি।

এসইউজে/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।