মতিঝিলে পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে


প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে। নাম ইমরুল কায়েস।(৩৪)। তিনি নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন।

সোমবার ভোররাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পূর্ব টিমের সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ নিহত হন ইমরুল কায়েস।

তিনি স্থানীয় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও একই পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।

ঘটনার পর নিহতের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে ডিএমসি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোমবার খিলগাঁও থানার এসআই এএনএম নুরুজ্জামান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য(মামলা নং ১৯) ও অস্ত্র আইনে(২০) ২টি মামলা দায়ের করেছেন।

তবে পরিবার দাবি করেছে, ইমরুল কায়েস গত সপ্তাহে ঢাকায় এসে নিখোঁজ হন। পরিবারের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না। পরে খোঁজাখুজির পর গণমাধ্যমে মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে ইমরুল কায়েসের লাশ সনাক্ত করা হয়।

নিহতের স্ত্রীর খালাতো ভাই অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান জানান, নিহতের গ্রামের বাড়ি নড়াইলের দুর্গাপুর উপজেলায়।

তিনি নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। তার বাবার নাম আনোয়ার মোল্লা। ইমরুল কায়েসের স্ত্রীর নাম জান্নাতুল ফেরদাউস। তাদের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে।

তিনি আরো জানান, ইমরুল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা আসলে তিনি রাজধানীর ওয়ারী এলাকার দক্ষিণ মুন্সীদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এক স্বজনের বাসায় থাকতেন। গত সপ্তাহে তিনি ঢাকায় আসেন। এরপর বৃহস্পতিবার নিখোঁজ হন।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ডিবি পুলিশ ইমরুলকে ডেকে নিয়ে আটক করে নির্যাতনের পর ঠান্ডা মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। তারা এ হত্যার বিচার চেয়েছেন।

নিহতের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, “কয়েকদিন আগে ইমরুল কায়েস ঢাকায় বেড়াতে যান। গত ১৬ জানুয়ারি এশার নামাযের সময় আমি আমার স্বামীর কাছে ফোন দেই। এ সময় তিনি জানান নামাযে যাচ্ছেন। একটু পরে ফোন দিতে বলেন। এর কিছু সময় পরে ফোন দিলে অপরিচিত লোক তা রিসিভ করেন। ওই সময় ফোনের মাধ্যমে হট্টগোলের শব্দ পাই। এর পর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।”

জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, হঠাৎ সোমবার বেলা ১২টার সময় আমার স্বামীর ফোন নম্বর থেকে অপরিচিত একজন লোক আমাকে ফোন করে পরিচয় জানতে চান। আমি ওই ফোন ব্যবহারকারীর স্ত্রী বলে নিজেকে পরিচয় দেই। তখন বলা হয়- ‘আপনার স্বামী আর নেই। আপনি এসে ঢাকা মেডিকেল থেকে লাশ নিয়ে যান’।

নিহত কায়েসের স্ত্রী আরো জানান ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর নড়াইলে পুলিশের ওপর অবরোধ সমর্থকরা হামলা চালায়। ওই ঘটনার মামলায় তার স্বামীকে আসামি করা হয়। তখন থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

“আমার স্বামীর নামে নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা আছে। আমার স্বামীকে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ নিয়ে হত্যা করেছে।” অভিযোগ করেন জান্নাত। তিনি এ হত্যার বিচার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, ডিএমপি’র সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) রবিউল আরাফাত জানান, সোমবার ভোররাতে মতিঝিলের এজিবি কলোনির ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ৪/৫ জন যুবক সংগঠিত হয়ে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিল।

এমন সময় ডিবি পুলিশে একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা গুলি চালায় এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।

উভয়পক্ষের গোলাগুলির পর অজ্ঞাত ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাকিরা পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি এবং অবিস্ফোরিত ৫টি হাত বোমা উদ্ধার করে পুলিশের আভিযানিক দলটি।

পরবর্তীতে লাশ উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায় মতিঝিল থানা পুলিশ।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, পুলিশের উপর গুলি ছোড়ায় পুলিশও গুলি চালিয়েছিল। গোলাগুলির এক পর্যায়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

তিনি বলেন, নিহতের বিরুদ্ধে নড়াইলের বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে নড়াইলে থানা ঘেড়াও করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে মামলা রয়েছে।

জেইউ/ এমএএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।