নকশা অনুমোদনে অনিয়ম : ১৫০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি
সরকারি বিধি উপেক্ষা করে ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন করায় সরকারের প্রায় দেড়শো কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। রাজধানীর পল্টন, সিদ্ধেশ্বরী ও রমনা এলাকায় সরকারি বিধি উপেক্ষা করে নয় তলার পরিবর্তে ১৮ তলা এবং ছয় তলার পরিবর্তে ১৬ তলা নির্মাণ করে ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ সত্ত্বেও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসেব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও সতর্ক করা হয়। কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, বেগম রেবেকা মমিন, শামসুল হক টুকু, মইন উদ্দীন খান বাদল, একেএম মাঈদুল ইসলাম, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ও বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে সরকারি বিধি উপেক্ষা করে ১৮ তলা এবং ১৬ তলা ভবন নির্মাণে অনিয়ম সংক্রান্ত অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত রাজউক চেয়ারম্যান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। নথি খুঁজে না পাওয়ায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সভাপতি। তিনি আগামী ৩০ দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিটিকে জানানোর নির্দেশ দেন। উপস্থিত সদস্যরা তার প্রস্তাবকে সমর্থন করেন।
বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়, রাজধানীর পল্টন মৌজায় ১৮ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার সামনে ৩১ ফুট চওড়া রাস্তা রয়েছে। কিন্তু সরকারি বিধি অনুযায়ী সেখানে সর্বোচ্চ নয় তলা ভবন নির্মাণ করা যাবে। ২০০৫ সালে বিধি বহির্ভূত এই ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনে ভবন মালিককে প্রায় ২৪ কোটি টাকার অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের পশ্চিম পাশে ২৯ নং হোল্ডিং-এ ১৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সামনের ১৬ ফুট চওড়া রাস্তার কারণে সেখানে ছয় তলার বেশি নির্মাণের সুযোগ নেই। ২০০৫ সালে বিধি বহির্ভূত এই নকশা অনুমোদনের মাধ্যমে প্রায় ৯০ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। একই বছরে রমনা থানা এলাকায় মগবাজার কাজী অফিস সংলগ্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে তিনটি ১৬ ও ১৮ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন করা হয়। এই নকশা অনুমোদনের মাধ্যমে ভবন নির্মাণকারীকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিধি উপেক্ষা করে এই তিনটি নকশা অনুমোদনে সরকারের প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে। কমিটির বিগত দু’টি বৈঠকে এ সকল অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সেই সুপারিশ এখনো কার্যকর হয়নি।
এদিকে বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্রে উল্লেখিত রাজউকের ২০১০-১১ এর অনিষ্পন্ন পাঁচটি অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় জানানো হয়, যথাযথ উত্তরাধিকার সনদ ও পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা হতে অবমুক্তি ছাড়াই নামজারি করায় সরকারের এক কোটি টাকা এবং প্লট গ্রহীতার নিকট থেকে নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে কনভারসন ফি আদায়ের ফলে প্রায় চার কোটি ৩০ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া বাণিজ্যিক এলাকার প্লটকে বাণিজ্যিকে রুপান্তর না করে বাস্তবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করায় প্রায় দুই কোটি ৪১ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কমিটি এইসব অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। এছাড়া গুলশান ও বনানী এলাকার বিভিন্ন প্লটে অবৈধভাবে বসবাসকৃতদের কাছে থেকে প্লটসমূহ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এইচএস/বিএ/আরআইপি