যেভাবে উত্থান রামপুরা ট্রাজেডির হোতা মনিরের


প্রকাশিত: ০২:০০ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

রামপুরা ট্রাজেডির হোতা মনিরুজ্জামান চৌধুরীর অনিয়ম আর দুর্নীতির যেন শেষ নেই। দাপট দেখিয়ে খাস জমিতে ঘর তৈরি করে ১২ জনের প্রাণহানিই শেষ নয়। মনিরের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে এলাকার সব অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজি তার আয়ের বড় উৎস। তবে সম্প্রতি নতুনভাবে শুরু করেছে ভূমি দখলের অবৈধ বাণিজ্য।

রামপুরা পূর্ব এলাকার আন্ডারগ্রাউন্ডের অনেক অপরাধই ঘটে তার ইশারায়। রামপুরার ২৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতিও তিনি। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা হওয়ায় এলাকাবাসীও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান।

তাই গত বুধবার মনিরের অবৈধ বাড়ি ধসে ১২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এলাকার কোনো মানুষ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য একটি কথা বলতে চাননি।

সরকারি জমিতে অবৈধভাবে দুর্বল ভিত্তির উপর নির্মিত দোতলার বাড়িটি ধসে পড়ে ১২ জনের মৃত্যুর পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মনিরুজ্জামানের নানা অপকর্মের কথা।

ইতোমধ্যে ডিএমপির রামপুরা থানা পুলিশ খাসজমিতে অবৈধভাবে বাড়ি নির্মাণ ও বাড়ি দেবে গিয়ে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মনিরুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় রামপুরা থানা পুলিশ এ মামলা দায়ের করে। ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। তবে তিনি পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামপুরার ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসের পাশেই সুউচ্চ বাসাটি তাদের। এর আশপাশ পুরো এলাকাটি ভাই ও আত্মীয় স্বজনরা বাস করায় এলাকাটির নাম বদলে হয়েছে চৌধুরীপাড়া।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চৌধুরী বংশের কর্ণধার ফকির আলি চৌধুরীর দুই স্ত্রী মিলে ৯ ছেলে ও এক মেয়ে। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুবলীগ করা শুরু করেন ফকির আলি চৌধুরীর ছেলে মনিরুজ্জামান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। পুরো এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন তিনি।

মাদকের ব্যবসা, ডিশের অবৈধ ব্যবসা, জুয়া, টেন্ডারবাজি, স্থানীয় প্রত্যেক দোকান থেকে চাঁদাবাজিসহ এহেন কোনো অপকর্ম নেই যেখানে ইশারা নেই মনিরুজ্জামানের। এমনও অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ফেরি করে ভাত বিক্রেতার কাছ থেকেও দিন প্রতি ৫০ টাকা করে চাঁদার ভাগ পান তিনি।

মনিরুজ্জামানের বড় ভাই আতাউর রহমান এক সময় যুবদল করতেন। পরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। অপর বড় ভাই মজিবর রহমান চৌধুরীও এক সময় যুবদল করতেন। কিন্তু কোনো পদ না পেয়ে চেষ্টা করেন যুবলীগ যোগদানে। সেখানে পদ না পেয়ে তিনি চেপে যান। সম্প্রতি তিনি ২৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চৌধুরী বংশের প্রত্যেকেই একাধিক দলের সঙ্গে জড়িত। তাই সরকার পরিবর্তন হলেও ক্ষমতা ও দাপট কমে না তাদের। ক্ষমতার দাপটেই তারা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।

মনিরুজ্জামানের সব ধরনের অপকর্মের সহযোগিতায় রয়েছেন তার ভাগ্নে মুন্নার নামও। এলাকার ছোট বড় সব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদার টাকা আদায়ের কাজ করেন মুন্না। সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে দাপট দেখিয়ে এলাকার সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন ঘরবাড়ি।

এর মধ্যে রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়ার বৌবাজার ঝিলপাড়ে সরকারি জমি দখল করে এক বছর আগে একটি টিনসেড বাড়ি তৈরি করেন তিনি। তবে গত বুধবার (১৫ এপ্রিল) বেলা পৌনে ৩টার দিকে বাড়িটি দেবে যাওয়ায় একই পরিবারের তিন জনসহ ১২ জন নিহত হন। এই ঘটনায় আহত হন আরও অন্তত ২০ জন।

এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন মনিরুজ্জামান। অন্যদিকে রামপুরা থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের (মামলা নং ২৩) করেছেন। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, সরকারি খাসজমিতে অবৈধভাবে দোতলার টংঘর নির্মাণ ও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও হতাহতের অভিযোগে কথিত বাড়ির মালিক মনিরুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য রহমতউল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি জমিতে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণকারীরা যতো ক্ষমতাশালীই হোক না কেন বা দলেরই নেতা হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

জেইউ/বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।