আবর্জনা ঘেঁটে জীবন চলে ওদের
রাজধানীর নিউ মার্কেট ওভার ব্রিজের অদূরে রাস্তায় রাতে একটি ভ্যান এসে থামল। ভ্যান থেকে বড় বড় পাঁচটি ড্রাম নামানো হয়। ভ্যানচালক একে একে পাঁচটি ড্রাম কাত করে রাস্তার অনির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলতে থাকেন। মুহূর্তেই চারদিক পরিত্যক্ত পচা-বাসি খাবার ও ময়লা আবর্জনার প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি বুধবার রাত সাড়ে ৯টার। এ সময় গাউছিয়া, চাঁদনী চক, হকার্স মার্কেট ও নিউ মার্কেট থেকে যারা ওই রাস্তায় যাতায়াত করছিলেন তারা সবাই দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে মুখে রুমাল চেপে রাখছিলেন। ছোট্ট একটি শিশুকে দুর্গন্ধ সইতে না পেরে বমি করতেও দেখা যায়।

প্রচন্ড দুর্গন্ধে যখন সাধারণ মানুষের প্রাণ যায় যায়, এরই মাঝে একজন মধ্যবয়স্ক ও আনুমানিক ১১/১২ বছরের দুই শিশু হাঁটু গেড়ে বসে খালি হাতে পরিত্যক্ত খাবার ও আবর্জনা ঘেঁটে আলাদা করছে। হঠাৎ করে নগরীতে প্রচন্ড শীত পড়ায় শিশু দুটি রীতিমত কাঁপছিল। তবুও তারা দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা আবর্জনা থেকে কিছু একটা আলাদা করে স্তুপ করতে থাকে।

মধ্যবয়সী ব্যক্তিটির নাম দুলাল হোসেন। নিজেকে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি এ শিশুদের কাছে স্থানীয় হোটেলের পরিত্যক্ত খাবার ও ময়লা আবর্জনার প্রতি ড্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি করেন। কামরাঙ্গীরচরের মাগুর মাছের খামার মালিক শিশুদেরকে দিয়ে এসব পরিত্যক্ত খাবার থেকে বেছে বেছে মাছের খাবার সংগ্রহ করে নেন। প্রতিদিন এসব শিশুরা সাত থেকে আট ড্রাম পরিত্যক্ত খাবার ও ময়লা আবর্জনা ঘেঁটে মাছের খাবার সংগ্রহ করে।

হৃদয় নামের এক শিশু জানায়, সারাদিন এ এলাকার হোটেলগুলোতে যে পচা-বাসি খাবার জমা হয় সেগুলো তাদের মালিক কিনে নেন। তার মত শিশুদের দিয়ে রাতে ডাস্টবিন থেকে তা সংগ্রহ করান। এ কাজের জন্য সে মাসে তিন হাজার টাকা পারিশ্রমিক পায়।

সে আরও জানায়, তাদের সংসারে বাবা-মা, ভাই-বোন মিলে ছয়জন সদস্য। বাবা পঙ্গু, মা বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। মায়ের একার রোজগারে সংসার চলে না। তাই ময়লা আবর্জনা ঘেঁটে মাছের খাবার সংগ্রহ করে যে টাকা পায় তা সংসারে দেয়।
খালি হাতে ময়লা আবর্জনা ঘাটছো কেন? জানতে চাইলে হৃদয় হেসে জানায়, ‘কাম করতে করতে অভ্যাস অইয়া গেছে। কোনো ক্ষতি অয়না।’
এমইউ/আরএস/জেআইএম