দারাজে ৫০ টাকার মাস্ক ২২৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৭ পিএম, ১৫ মার্চ ২০২০

অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজ ডটকমে ৫০ পিসের সার্জিক্যাল মাস্কের বক্স বিক্রি হচ্ছে ২২৫৫ টাকায়। অথচ পাইকারি বাজারে এই বক্সের দাম সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। সোমবার র‌্যাবের অভিযানে এই চিত্র ধরা পড়ে।

অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান, দারাজে অ্যান্টি পলিউশন সেফটি মাস্ক তিন পিস ৪৭০ টাকায়, অ্যান্টি ডাস্ট মাস্ক পাঁচ পিস ১২৫৫ টাকা, সাধারণ সার্জিকাল মাস্ক প্রতিটি ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অভিযানে দেখা যায়, দারাজের একাধিক সেলার একই মাস্ক একেক দামে বিক্রি করে ক্রেতা ঠকাচ্ছেন।

এর আগে রোববার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে দারাজ ডটকম ডটবিডির অফিসে অভিযান শুরু করে র‍্যাব। অভিযানটির নেতৃত্ব দেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।

অভিযানের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জাগো নিউজকে বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অন্যতম হচ্ছে সবার জন্য মাস্কের মূল্য নির্ধারণ। তবে দারাজের ওয়েবসাইটে সরকার নির্ধারিত দাম থেকে অতিরিক্ত দামে মাস্ক বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। তাই এই অভিযান চলছে। অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে।

করোনা সংক্রমণ রোধে ফেস মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ওষুধ উৎপাদনকারী ও মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।

বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে থ্রি লেয়ার সার্জিক্যাল ফেস মাস্কের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি পিস ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি দামে কেউ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

এছাড়াও মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক একই ডিস্ট্রিবিউটরকে একটি ইনভয়েসে ৫০০ পিসের বেশি মাস্ক সরবরাহ না করা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে এ পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ৫০ এমএল প্যাক সাইজে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।

একের পর এক জনবান্ধব অভিযানে নিজেকে সবার কাছে তুলে ধরেছেন সারোয়ার আলম। সর্বশেষ করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে তিনজন আক্রান্ত হওয়ার পর ঢাকার দোকান ও ফার্মেসিতে স্টক শেষ হয়ে যায় মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। বিক্রি হচ্ছিল ৪-৫ গুণ বেশি দামে। জনগণের প্রতি এ অন্যায় বন্ধে মঙ্গলবার মিটফোর্ডে অভিযান চালান সারোয়ার আলম। পরদিন বুধবার মধ্যরাতেও অভিযান চালান তিনি। আটক করেন পাঁচ কোটি টাকার নিম্নমানের মাস্ক, মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ।

তবে আলোচিত অভিযানের পাশাপাশি একবার হাইকোর্টের তলবের কারণে আলোচনায় আসেন এ ম্যাজিস্ট্রেট। সম্প্রতি তার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা কেড়ে নিতে দায়ের করা রিটে আবারও আলোচিত হন তিনি। ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক ব্যক্তিকে দেয়া দণ্ডাদেশের চারমাস পার হলেও আদেশের প্রত্যয়িত অনুলিপি না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে করা এক রিটে ১ ডিসেম্বর তাকে হাইকোর্টে তলব করা হয়। সেখান থেকে নিস্তার পাওয়ার পর গত বুধবার (১১ মার্চ) ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে তার (মোট তিনজন) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা) বাতিলের নির্দেশনার আর্জি জানিয়ে একটি সম্পূরক রিট আবেদন করা হয় হাইকোর্টে।

রিটের পরেই সরব হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সারোয়ার আলমের বিরুদ্ধে এমন রিটকে অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত বলে উল্লেখ করছেন তারা। তবে এসবের মধ্যেও দমে যাননি সারোয়ার আলম। একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার মিটফোর্ডে রাতভর অভিযানের পর বৃহস্পতিবার সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় তার।

সারোয়ার আলম বলেন, ‘যাই হোক, আমি আমার কাজ, আমার অভিযান বন্ধ রাখবো না। আমি যা করি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মানুষের জন্যই করি। রাষ্ট্রের কল্যাণে আমি এই কাজ করেই যাবো।’

 

এআর/বিএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।