সব কিছু বন্ধ, ১০ টাকা লিটারও বিক্রি হচ্ছে না দুধ

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২০

বাংলা‌দে‌শে দুধ উৎপাদ‌নের শ্রেষ্ঠ স্থান সিরাজগ‌ঞ্জের শাহজাদপু‌রে দ‌ুধের লিটার এখন ১০ থে‌কে ১৫ টাকা। তারপরও সব দুধ বি‌ক্রি হ‌চ্ছে না। অ‌বি‌ক্রীত দুধ নষ্ট হওয়ায় হাজার হাজার লিটার দুধ ফে‌লে দি‌চ্ছেন কৃষকরা। ক‌রোনার কার‌ণে সব বন্ধ হওয়ায় দুধ উৎপাদনকারী কৃষকরা মহাবিপা‌কে প‌ড়ে‌ছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গে‌ছে, ক‌রোনার কার‌ণে দুধ উৎপাদনকারী এলাকায় কোনো পাইকার, ঘোষ বা মিষ্টি প্রস্তুতকারী কেউই যা‌চ্ছেন না। ফ‌লে প্র‌তি‌দিন হাজার হাজার লিটার দুধ অ‌বি‌ক্রীত থে‌কে নষ্ট হ‌য়ে যা‌চ্ছে। যোগা‌যোগ ব্যবস্থা বন্ধ হ‌য়ে যাওয়ায় খামারিরা শহ‌রের দিকেও দুধ নি‌তে পার‌ছেন না।

এদিকে গরুর খাবার সংকটও তৈরি হ‌চ্ছে। গাড়ি চলাচল না করায় গরুর খাদ্য সরবরাহ করাও সম্ভব হ‌চ্ছে না। ফ‌লে এক‌দি‌কে যেমন গো-খা‌দ্যের দাম বে‌ড়ে যা‌চ্ছে, অন্য‌দি‌কে এখন অনেকে গরু‌কে আধা পে‌টে খে‌য়ে রাখ‌ছেন।

ঢাকায় এখন কোনো দোকা‌নে তরল দুধ পাওয়া যা‌চ্ছে না। ক‌য়েক‌দিন আগে ৭০ থে‌কে ৮০ টাকা লিটার বি‌ক্রি হ‌য়ে‌ছে দুধ।

বগুড়ার ধুনট উপ‌জেলার উল্লাপাড়া গ্রা‌মের খামারি হ‌বিবর রহমান (হ‌বি) জা‌গো নিউজ‌কে ব‌লেন, ২০ টাকা লিটার দুধ, তা-ও মানুষ নি‌তে চা‌চ্ছে না। তিনি বলেন, গাড়ি বন্ধ হওয়ার কার‌ণে শেরপুরের পাইকাররা আসতে পার‌ছেন না। ফুড ভি‌লেজসহ মিষ্টির দোকান এবং বড় বড় হো‌টেল বন্ধ হ‌য়ে যাওয়ার কার‌ণে দুধ বি‌ক্রি করা যা‌চ্ছে না। আশপা‌শের যে রেস্তোরাঁগুলো ছিল সেগু‌লোও বন্ধ হ‌য়ে গে‌ছে।

এই খামারি বলেন, গরুর খা‌দ্যের দামও বে‌ড়ে গে‌ছে। গাড়ি বন্ধ থাকায় আর ক‌য়েক‌দিন প‌রে হয়‌তো দোকা‌নেও দানাদার খাদ্য পাওয়া যা‌বে না। ফ‌লে আমরা যারা ছোট খামারি তারা মহাবিপ‌দের মধ্যে আছি।

শাহজাদপু‌রের দুগ্ধ খামারি সমিতির পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকির। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে মহাবিপদের মধ্যে আছি ভাই। হাট-বাজার, দোকানপাট, মিষ্টির দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দ‌ধির দোকান সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা দুধ বিক্রি করতে পারছি না।’

তিনি বলেন, শাহজাদপুরের রেশম বাড়ি গ্রামে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এই দুধ বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে অবস্থা ততই করুণ হয়ে উঠছে।

‘বাছুর‌কে বেশি দুধ খাওয়ানো যাচ্ছে না। বেশি দুধ খাওয়‌ালে পাতলা পায়খানা শুরু ক‌রে। এছাড়া গরুর ভুসি ও দানাদার খাবার সরবরাহ না থাকায় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। দুধ বিক্রি না করতে পেরে অনেকে গরুকে ভরপেটে খাদ্য খাওয়াতে পারছেন না। আধা পেটে খাদ্য খাওয়ানো হচ্ছে। এ‌তে গাভীগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছে।’

এক প্র‌শ্নের জবা‌বে আব্দুস সামাদ ফকির বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য এবং মানুষের পুষ্টির অভাব দূর জন্য মিল্ক ভিটা স্থাপন করেছিলেন। তার যে উদ্দেশ্য ছিল সে উদ্দেশ্য আজ ব্যর্থ হতে চলেছে। তিনি বলেন, দুধ বিক্রি করতে না পে‌রে দেশের লাখ লাখ কৃষক কোটি কোটি লিটার দুধ নিয়ে আজ মহাবিপাকে পড়েছে।’

এফএইচএস/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।