করোনায় আক্রান্ত হওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শ
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) পর্যন্ত দেশে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) কাবু করেছে ৭৮ হাজার ৫২ জনকে। প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এক হাজার ৪৯ জনের। দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, গোটা ২০২০ সালজুড়েই বাংলাদেশকে ভোগাবে করোনা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করোনা সচেতনতা ও বাস্তবতা নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. ইমরান আহম্মেদ। করোনা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিসহ বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেছেন তিনি।
তার পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
‘আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই। তবে আমি করোনায় আক্রান্তদের একজন। তাই, নিজের কিছু অভিজ্ঞতাকে শেয়ার করতে পারি। দয়া করে কেউ এগুলোকে বিশেষজ্ঞ মতামত মনে করবেন না। যা বলব, তা কেবলই বাস্তব এবং বাস্তবতা।
আপনি যদি ধরে নেন, পিপিই পরে কিংবা বেশি দামের মাস্ক পড়েই করোনা থেকে রক্ষা পাবেন। আমি মনে করি, সেটি ঠিক নয়। বিষয় অনেকটা এমন ধরুন, আপনি খুবই ভালো একজন চালক। আপনি মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন। কিন্তু আপনার আশপাশে যারা আছেন, তারা কেউই পেশাদার নয়। আপনি নিজে কিছু করলেন না। কিন্তু অন্যজন আপনার গাড়িকে মেরে দিল। ফলাফল কি হলো? দক্ষ চালক হওয়ার পরও আপনি কিন্তু ঠিকই দুর্ঘটনায় পতিত হলেন।
শুনতে বা ভাবতে খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা অনেকটা এ রকমই। আপনি যতই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন না কেন, কিছু মানুষ এগুলো গায়ে মাখেন না। কেউ তো আবার কোনোকিছুর তোয়াক্কা করেন না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আপনাকে ওইসব মানুষের সঙ্গে চলতে হবে। কাজেই, আক্রান্তও হতে পারেন সেই সম্ভাবনা প্রবল। তার চেয়ে বরং কী কী করলে আক্রান্ত হলেও সুস্থ হওয়া যাবে, এখন না হয় সেদিকেই মনোনিবেশ করি।
প্রথমত, নিজের মনকে নিজেই বোঝান, করোনা আমার তেমন কিছুই করতে পারবে না। করোনা হলেও আমি ঠিকই সুস্থ হয়ে যাব। যত পারেন, করোনাকে মানসিকভাবে হালকা করে নিন। এক্ষেত্রে, একটি তথ্য মনে সাহস জোগাতে সহযোগিতা করতে পারে। যেমন, বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার প্রচলিত অনেক রোগের চেয়ে অনেক কম। সুতরাং, বেশিরভাগই সুস্থ হন। আমিও হব। ব্যস, এমন মানসিকতা আপনার সাহস বাড়িয়ে দেবে, আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
দ্বিতীয়ত, বাইরে থেকে এসে যতটা সম্ভব হাত, মুখ ও শরীর পরিষ্কার করে নিন। পারলে পরিধেয় জামা কাপড় ধুয়ে নিন। ঘরে থাকা তরুণ কিংবা যুবকদের নিয়ে ভাবনা বাদ দিয়ে বরং বয়স্কদের নিয়ে ভাবুন। পারলে বয়স্কদের একটু নিরাপদে রাখুন। কারণ, এখন পর্যন্ত বয়স্করাই করোনার বড় ভিকটিম। তাই, যতটা সম্ভব বয়স্কদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিন। মনে রাখবেন, আল্লাহ যাদের হায়াত না রাখেন, তারা ব্যতীত করোনা আক্রান্ত শিশু, তরুণ ও যুবকেরা সাধারণত সুস্থ হয়ে ওঠেন। কাজেই, শিশু, তরুণ ও যুবকদের নিয়ে ভাবনা কমান। বয়স্কদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিন।
তৃতীয়ত, বাসার সবাই নিয়ম করে তিন থেকে চারবার গরম পানির ভাপ নিন। লবণ গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন। মশলা চা, আদা চা বেশি খান। ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও মৌসুমি ফল বেশি খান। পারলে কুসম গরম পানি খান। জিংক ট্যাবলেট খান। সিদ্ধ ডিম খান। দুধ খান। শরীরের ইমিউনিটি বাড়ান।
চতুর্থত, যদি পরিবারে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েই যায়, তাহলে দয়া করে তাকে একা ফেলে রাখবেন না। আমাদের দেশে যখন কেউ অসুস্থ হন, আমরা সবাই তার পাশে থাকি। কিন্তু করোনাকালে একজন অসুস্থ মানুষকে যখন একা রাখা হয়, তখন তিনি এক নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। একা থাকার কারণে তিনি মানসিকভাবে প্রবলভাবে ভেঙে পড়েন। ফলে, তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে পারলে বাসায় রাখুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বার বার তার কাছে যান। তার সঙ্গে গল্প করুন। প্রাণ ভরে নিজেরাও হাসুন ও তাকেও হাসান। মোট কথা, সে যে একা নয়, সেটি তাকে কাজেকর্মে বুঝিয়ে দিন। তবে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির যদি অন্যান্য জটিল শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করুন।
সবশেষ, করোনায় কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, কত মানুষ আক্রান্ত হবে, এসব সংবাদ যত পারেন কম দেখবেন। নিয়মিত সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন। পজিটিভ সংবাদ বা অন্য কিছু পড়ুন বা দেখুন। আপনি সবাইকে নিয়ে সুস্থ থাকবেন, সেই চিন্তাটা মাথায় রাখুন। একা একা বাঁচার চিন্তা বাদ দিন। আয়ু না থাকলে এক মুহূর্তও বেশি বাঁচবেন না, এই বাস্তবতাটা যত সহজে পারেন উপলব্ধি করুন।’
এআর/এফআর