করোনার ফ্রি চিকিৎসায় আইআরসির ৬০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ
কক্সবাজারের টেকনাফে প্রথম ৬০ শয্যাবিশিষ্ট সারি আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টার নির্মাণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি)। এই সারি আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টারটিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বা রোহিঙ্গা যেকোনো কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
রোববার জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে সেন্টারটি উদ্বোধন করেন রেফিউজি রিলিফ এবং রিপাট্রিয়েশন কমিশনার (আরআরআরসি) মাহবুব আলম তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান এবং ক্যাম্প ইনচার্জ (ক্যাম্প-২৩) পুলক কান্তি চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেন আইআরসি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মানীষ কুমার আগরাওয়াল।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হলে বাংলাদেশ সরকারকে করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি)। এপ্রিল মাস থেকেই আইআরসির ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি চিকিৎসক দল কক্সবাজার জেলার রামু সরকারি আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় টেকনাফের শামলাপুরে ৬০ শয্যাবিশিষ্ট সারি আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টার নির্মাণ করলো প্রতিষ্ঠানটি।
এই চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে তাদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখানে একসাথে ৬০ জন কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে পারবেন। ৬০ জনের একটি দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর দল দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা দেবেন। রোগীদের জন্য প্রতিটি বেডের সাথে রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা; নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, সন্দেহভাজন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পৃথক ওয়ার্ড, তিনবেলা খাবার এবং ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা, করোনা আক্রান্ত প্রসূতি মায়েদের জন্য বিশেষ সেবা ও ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এছাড়া সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে এখানে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী জীবাণুমুক্তকরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আরআরআর কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, এটা টেকনাফের প্রথম আইসোলেশন সেন্টার, যা নিঃসন্দেহে টেকনাফবাসীর জন্য একটা বিশেষ মুহূর্ত। আশা করি এই চিকিৎসা কেন্দ্রের মাধ্যমে টেকনাফের স্থানীয় অধিবাসী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য কোভিড-১৯ চিকিৎসা সহজলভ্য হবে এবং বেশকিছু জীবন বাঁচবে।
আইআরসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মানীষ কুমার আগরাওয়াল বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ এক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তাই সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এর মোকাবিলা কঠিন। সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। এই সারি আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি এমন অনেকগুলো উদ্যোগের একটি। আমাদের বিশ্বাস, আমরা বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে পারব।
আইআরসি বাংলাদেশের ডেপুটি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর শাহ মুনতামিন মুজতবা বলেন, গত মার্চ মাসের শুরু থেকেই আইআরসি’র মেডিকেল এবং অন্যান্য দল কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এই সময়ও আমাদের অন্যান্য হাসপাতালে প্রাথমিক ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে এসেছি। এছাড়া কোভিড সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ, মানসিক সমস্যার পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমরা ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি থেকে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব।
সারি আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট- ইউকে (ডিএফআইডি), ইউরোপিয়ান সিভিল প্রটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটেরিয়ান এইড অ্যান্ড অপারেশন্স (ইসিএইচও), গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা (জিএসি) আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত হবে।
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবিক সহয়তাকারী প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে যুদ্ধ, মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন অবস্থায় আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে জরুরি সহায়তা দিয়ে আসছে।
আইআরসি বাংলাদেশের কোভিড-১৯ প্রোগ্রামের আওতায় সারি আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টার ছাড়াও রামু আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসক দল প্রেরণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ, অর্থ সাহায্য প্রদান, কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, মানসিক সমস্যার পরামর্শ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
২১ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার সদরে ৯১৭ জন, উখিয়ায় ২৬৯ জন, টেকনাফে ১৬৯ জন এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৪১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এমএআর/এমএস