চট্টগ্রামে করোনা ডেডিকেটেড আল-মানাহিল হাসপাতালের যাত্রা শুরু
চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজারে গড়ে ওঠা আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ফিল্ড হাসপাতাল ‘আল-মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল’ যাত্রা শুরু করল আজ থেকে। হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ৭০। থাকছে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় মহামূল্যবান কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) নগরের হালিশহরে এই ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে নগর পুলিশ।
হাসপাতালটি উদ্বোধন করে চট্টগ্রামের জনসাধারণের চিকিৎসা সেবায় ও করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিএমপি কমিশনার।
জানা গেছে, গত জুন মাসের মাঝামাঝি চট্টগ্রামের হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজারে ৭০ শয্যার ‘আল-মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল’র প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। হাসপাতালটিতে ১০টি আইসিইউ শয্যাসহ ৭০ শয্যার প্রতিটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাও আছে। শিগগিরই চিকিৎসা সেবায় যুক্ত হবে তিনটি ভেন্টিলেটর।
আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে আমরা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফন-দাহ করে আসছি। পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ থাকা ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অন্যরা যখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল, তখন নিজেদের অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছিলাম রোগীদের। হাসপাতালে পৌঁছে দিতে গিয়ে দেখতে পাই, কোনো কোনো হাসপাতাল রোগীদের ভর্তি করাচ্ছে না। কোথাও চিকিৎসার মাঝপথে রোগীদের বের করে দেয়া হচ্ছিল। আবার কোথাও গিয়ে দেখতে পাই, হাসপাতালে ধারণক্ষমতার বেশি রোগী। ফলে রোগী নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়েছে অনেক সময়, অনেকে মারা গেছে রাস্তায়ই। তাই আমরা নিজেরাই একটি হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নেই।’
তিনি জানান, হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজারে নাসরিন বাকি নামের এক দানশীল নারী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের চিকিৎসাসেবা দিতে পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। তার কর্মব্যস্ততার কারণে সময় দিতে না পেরে তিনি সেবা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সেটি আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনকে হস্তান্তর করেন গত বছর। এখন সেই ভবনটিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘আল-মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল’। করোনা শেষ হলে হাসপাতালটিতে প্রসূতি মায়েদের সেবা দেয়া হবে। পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে।
আল-মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট প্রকৌশলী ইফতেখার হাসান জানান, পাঁচতলা ভবনের পুরোটাই করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে পঞ্চম তলায় পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে। চারতলায় থাকছে আইসিইউ, তৃতীয় তলায় কেবিনের ব্যবস্থা। এ ছাড়া দ্বিতীয় তলায় নারী-পুরুষের জন্য আলাদাভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিচতলায় থাকছে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড। আইসিইউ ব্যবস্থার পাশাপাশি রাখা হয়েছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম।
হাসপাতালটির কার্যক্রম চালুর বিষয়ে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে অবদান রেখে যাচ্ছেন। অপরদিকে স্বেচ্ছাসেবী আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মহামারির প্রথম থেকেই জনগণের পাশে থেকে মানবিক কাজ করছে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসাসেবা আরও বেগবান করার জন্য এ উদ্যোগ, যা নিঃসন্দেহে জনগণকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ ধরনের উদ্যোগ মানুষকে শুধু চিকিৎসা সেবাই দেবে না, বরং আরও মানবিক হতে উদ্বুদ্ধ করবে।’
জেডএ/এমএস