কতটা সফল হবেন স্বাস্থ্যের নতুন ডিজি?
অডিও শুনুন
দুদিন পেরিয়ে গেলেও লাইমলাইটের বাইরে থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন স্বাস্থ্য মহাপরিচালককে (ডিজি) নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগসহ সর্বত্র আলোচনা চলছে এখনও। সবার মুখে প্রশ্ন, করোনাকালীন এ দুর্যোগে কীভাবে তিনি এ গুরুদায়িত্ব পেলেন! কারণ নতুন ডিজি নিয়োগের সম্ভাব্য তালিকায় স্থান পেতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন মহাপরিচালক, একাধিক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিচালক ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের নাম ছিল। তাদের বেশির ভাগেরই ব্যাপক তদবির ও সুপারিশ ছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু সবার দাবার চালের বিপরীতে কিস্তিমাত করে নিয়োগ পান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ (এবিএম) খুরশীদ আলম।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার গৃহীত কার্যক্রমের বাস্তবায়ন নিয়ে সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে সর্বত্র স্বাস্থ্য বিভাগের সমালোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে দীর্ঘদিন দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এমন সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ কয়েকজনের নাম চাওয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থা ও অভিজ্ঞজনরা এবিএম খুরশীদ আলমের নাম প্রস্তাব করেন। তাকে ডিজি পদে নিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রেখে বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে সার্কুলার করা হয়। তদবির বা সুপারিশে নয়, সততা ও কর্মনিষ্ঠার কারণেই তিনি ডিজি পদে নিয়োগ পান।
আগামীকাল রোববার অথবা সোমবার নবনিযুক্ত স্বাস্থ্য মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। শনিবার (২৫ জুলাই) তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এছাড়া তিনি একাধিক চিকিৎসক নেতার সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করে তাদের দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় শতভাগ সততা ও নিষ্ঠার সাথে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে চান বলে তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের অনিয়ম, দুর্নীতি, সমন্বয়হীনতা ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের বেড়াজাল ছিন্ন করে নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কি পারবেন সফল হতে? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক স্বাস্থ্য সেক্টরের সিনিয়র, অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তারা এ বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা না বললেও নাম গোপন করে জানান, নবনিযুক্ত ডিজি অত্যন্ত সৎ, মেধাবী ও বুদ্ধিমান। সারাক্ষণ কাজের মধ্যেই ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসেন। পেশাগত জীবনে তিনি অত্যন্ত সফল। তাদের ধারণা নতুন এ ডিজি দায়িত্ব পালনে সফল হবেন।
তারা বলেন, এ মুহূর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অধিদফতরের করোনা মোকাবিলায় সমন্বয়হীনতা, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা দূর করাই হবে বর্তমান মহাপরিচালকের প্রধান এবং প্রথম কাজ। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সমন্বয়হীনতা দূরীকরণ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে আস্থা তৈরি করতে পারলে স্বাস্থ্য সেক্টরের ৮০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে মন্ত্রণালয় জড়িয়ে থাকলে নতুন ডিজি নিয়োগে কোনো লাভ হবে না বলে তারা মনে করেন।
কেউ কেউ বলছেন, স্বাস্থ্য সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকড় গজিয়েছে। এসব অপকর্মের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত। শত শত কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটার নেপথ্যের কারিগরকে মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন দিয়ে অসৎ কর্মকর্তাদের কিনে ফেলেন। তাদের কথামতো ফাইল চালাচালি হয়। এক্ষেত্রে সৎ কর্মকর্তারা অনেকসময় ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র চিকিৎসক নেতা বলেন, নবনিযু্ক্ত মহাপরিচালক একজন অধ্যাপক হয়েও লো-প্রোফাইলে চলাফেরা করেন। অত্যন্ত সৎ, বিনয়ী ও কর্মনিষ্ঠ এ মানুষটি নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে যা ভালো মনে করেন তাই করেন এবং তার কাজ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়।
অ্যাকাডেমিকভাবে অত্যন্ত সফল এ ব্যক্তিটি স্বাস্থ্য প্রশাসন পরিচালনাও সফলতার সঙ্গে করতে পারবেন বলে তার বিশ্বাস। তাকে দিয়ে অন্তত দুর্নীতি হবে না, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত করার চেষ্টা করা হলে তিনি নিজে থেকেই সরে আসবেন বলে ওই সিনিয়র চিকিৎসক নেতা মন্তব্য করেন।
এমইউ/বিএ/এমকেএইচ