ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ডের আইনে মন্ত্রিসভার সায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২০

অডিও শুনুন

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করবেন।

সোমবার (১২ অক্টোবর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। সচিবালয় থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা যুক্ত ছিলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংশোধিত আইন মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবনও থাকছে। আগামীকালই সংশোধিত আইনের অধ্যাদেশ জারি করা হবে।’

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যে সরকার এই পদক্ষেপ নিল।

পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত কিছু দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধগুলো কঠোরভাবে দমনের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই উপধারায় বিধান ছিল- যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তা হলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।’

‘এটার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব আসে নারী বা শিশু ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ, সমাজে নারী বা শিশু নির্যাতন কঠোরভাবে দমনের লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় অধীন ধর্ষণের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ সংশোধন করা প্রয়োজন।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যেহেতু বর্তমানে সংসদের অধিবেশন নেই এবং আশুব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে সে জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় তাহলে তিনি সংবিধানের ৯৩(১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু সংসদ কার্যকর নেই সে জন্য এটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে জারি করা হবে। লেজিসলেটিভ বিভাগের ভেটিংয়ের প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

সংশোধিত আইন অনুযায়ী ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ), ২০ (৭) উপধারা সংশোধন করতে হবে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ষণ ছাড়া সাধারণ জখম হলে কম্পাউন্ড করা যাবে। আগের আইনে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের রেফারেন্স ছিল। ২০০৩ সালে শিশু আইন প্রচলন করা হয়। এ বিষয়টি সংশোধন করা হচ্ছে।’

ধর্ষণের সংজ্ঞার পরিবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো কথা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডেফিনেশনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

ধর্ষণ মামলার বিচার কত দিনের মধ্যে শেষ হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের আইনের ২০(৩) ধারায় এটা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে। এখানে বিচার পদ্ধতি মেনশন করা আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘শুধু আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। অনেকগুলো দেশের আইন চেক করে দেখেছে আমাদের আইন মন্ত্রণালয় ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর বর্তমান পরিস্থিতি ও বাস্তবতা সবকিছু মিলেই এটা হয়েছে। শুধু আন্দোলনের জন্য তো জিনিসটা আসেনি। সরকারের মধ্য থেকেও এটার পক্ষে একটা প্রচারণা আসছে। মানুষের অ্যাওয়ারনেসের কারণে হয়তো এটা আসছে, সেটা হতে পারে।’

আগে যাবজ্জীবন ছিল, সেই শাস্তিও দেয়া যায়নি, এখন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে লাভটা কোথায় হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যেভাবে প্রমোশন ক্যাম্পেইন হচ্ছে, এটাও তো একটা প্রমোশনের জায়গা। এটা অবশ্যই সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যারা ক্রাইম করে তারা অন্তত দুইবার চিন্তা করবে যে, এটাতে তো মৃত্যুদণ্ড আছে। এখন তো আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নয়। ১৮০ দিন তো দীর্ঘ সময়ও নয়। ডেফিনেটলি এটার পজিটিভ ইম্প্যাক্ট হবে।’

‘এই আইনে বলা হয়েছে আরোপিত অর্থদণ্ডকে, প্রয়োজনবোধে, ট্রাইব্যুনাল অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য করিতে পারিবে এবং অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণের অর্থ দণ্ডিত ব্যক্তির নিকট হইতে বা তাহার বিদ্যমান সম্পদ হইতে আদায় করা সম্ভব না হইলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হইবেন সেই সম্পদ হইতে আদায়যোগ্য হইবে এবং এইরূপ ক্ষেত্রে উক্ত সম্পদের ওপর অন্যান্য দাবি অপেক্ষা উক্ত অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণের দাবি প্রাধান্য পাইবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা যাতে আরেকটু প্রমিনেন্টলি আসে ট্রায়ালে, সেটা চিন্তা করা হবে।’

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীতে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জড়িতদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আন্দোলনকারীরা ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি জানিয়েছিল।

গত শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী মহাসমাবেশ থেকে সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়।

‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত মহাসমাবেশে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর নোয়াখালী অভিমুখে লংমার্চ করা হবে। এছাড়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ চেয়ে নয় দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।

আরএমএম/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।