নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহনে জিরো টলারেন্সে সুফল মিলেছে
অডিও শুনুন
করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর জিরো টলারেন্স নীতির কারণে সুফল মিলেছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে ২৫টি ফ্লাইটে মোট চার হাজার ৩৭৩ জন অবতরণ করেন। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. দেব দুলাল দেবনাথ জাগো নিউজকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় শাহজালালে আগত যাত্রীদের সকলে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে ফিরেছেন। ফলে কাউকেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়নি। গত ৫ ডিসেম্বরের পর এই প্রথম সবগুলো ফ্লাইটের যাত্রীরা করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফিরলো বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ এ প্রতিবেদেকর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করা যাবে না –বেবিচকের এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে এয়ারলাইন্সগুলো নির্দেশনা মানতে বাধ্য হচ্ছে। করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহনের দায়ে একাধিক এয়ারলাইন্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায়, যাত্রী ফেরত পাঠানো ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
উল্লেখ্য, বেবিচক সম্প্রতি বাংলাদেশে আসতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করে। এনিয়ে গত ৫ ডিসেম্বর বেবিচকেরসদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশ আসতে হলে সকল যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করতে হবে এবং নেগেটিভ সনদপ্রাপ্ত যাত্রীরাই আসতে পারবেন। বিমানবন্দরে সেই নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। একইসাথে বিমানবন্দরেও যাত্রীর করোনার উপসর্গ আছে কিনা তা দেখা হবে।
এ নির্দেশনা জারির পরও বিভিন্ন এয়ারলাইন্স নেগেটিভ সনদ ছাড়াই যাত্রী পরিবহন করে।
ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্য়ন্ত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে সর্বমোট ৩৮ হাজার ২৩২ জন যাত্রী অবতরণ করে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে এক হাজার ১২৬ জন যাত্রী করোনা সনদ ছাড়া আসেন। তাদেরকে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি ও আশকোনা হাজী ক্যাম্পের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। তবে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে এলেও ৩৬ হাজার ৯২৫ জন যাত্রীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।
করোনা পজিটিভ থাকায় ছয়জন যাত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া আসায় বিমানবন্দর থেকে চারজন বিদেশি নাগরিককে ফিরতি ফ্লাইটে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এছাড়া বিমানবন্দরে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে চার লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এ তালিকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, গালফ এয়ার ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স রয়েছে। এ ছাড়া নয়জন যাত্রী সময় নিয়ে পরবর্তীতে নেগেটিভ সনদ দাখিল করায় তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদেরকে কিভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কন্ট্রোল রুমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার মাধ্যমে একটি সফটওয়ারে বিদেশ থেকে আসা সকল যাত্রীর ডাটা রেকর্ড করা হয়। সে রেকর্ডগুলো সংশ্লিষ্ট যাত্রীর বাসস্থান যেখানে সেই এলাকার স্বাস্থ্য কার্য়ালয়, প্রশাসন ও পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। বিদেশ থেকে ফেরার ১৪ দিন পর্যন্ত কোন সমস্যা হলে যাত্রী নিজে জানান। এছাড়া স্বাস্থ্য কার্য়ালয়, প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকেই যাত্রীর ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হয়।
এমইউ/এএএইচ/এমকেএইচ