সংক্রমণের শীর্ষ কেন্দ্র বাজার-গণপরিবহনে ঢিলেঢালা মনিটরিং
দেশের বাজার ও গণপরিবহনে অবাধ যাতায়াতের কারণে ৬০ শতাংশেরও বেশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটছে। এছাড়া বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে, যেমন সভা ও সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের বেশি।
করোনার সংক্রমণ রোধে উৎস থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করাই প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি বলে মন্তব্য করেছেন রোগ তথ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সরকার ঘোষিত সাত দিনের বিধিনিষেধ আজ রোববার (১১ এপ্রিল) শেষ হচ্ছে। কিন্তু গত সাত দিনে বাজার ও গণপরিবহনে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা দেখা যায়নি।
আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ফের ৭ দিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, এবারের লকডাউন হবে কঠোর লকডাউন।
রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত সাত দিনের লকডাউনে তেমন কোনো ফায়দা হয়নি। সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমাতে চাইলে সর্বাত্মক লকডাউন এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) -এর এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য স্থান সমূহের মধ্যে রয়েছে বাজারে গমন (৬১ শতাংশ), গণপরিবহন ব্যবহার (৬১ শতাংশ) উপাসনালয়ে গমন (৩৫ শতাংশ), জনসমাগমে অংশগ্রহণ (৩২ শতাংশ) স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র পরিদর্শন (২৬ শতাংশ), করোনা রোগীর সংস্পর্শ (২২ শতাংশ), আন্তঃবিভাগ ভ্রমণের ইতিহাস (১৩ শতাংশ), সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ (১২ শতাংশ), পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরতে যাওয়া (৪ শতাংশ), ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ (৩ শতাংশ) ও অন্যান্য জনসমাগম স্থানে গমন (৩শতাংশ)।
দেশে করোনাভাইরাসের নানান ভেরিয়েন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানান প্রশ্ন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্ট পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআর নজরদারি শুরু করে ২০২০ সালের মার্চ থেকে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম ইউকে ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। চলমান নজরদারির মাধ্যমে ২০২১ সালের মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট (B.1.351) এর উপস্থিতি জানা যায় ।
ভ্যারিয়েন্ট কি :
ভাইরাস প্রতিনিয়ত অনুলিপি তৈরি করার সময় নতুন সৃষ্ট ভাইরাসে কখনো কখনো কিছু নতুন পরিবর্তন আসে, যা খুবই স্বাভাবিক। এই পরিবর্তনগুলােকে ‘মিউটেশন’ বা রূপান্তর বলা হয়। এক বা একাধিক রূপান্তরিত ভাইরাসকে তার আসল ভাইরাসের ‘ভ্যারিয়েন্ট’ বলা হয়।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট কেন এবং প্রভাব :
যখন মানুষের মাঝে ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে, তখন ভাইরাসে বেশি মিউটেশন এর সম্ভাবনা থাকে। বেশিরভাগ মিউটেশন ভাইরাসের সংক্রমণ এবং রােগ হবার ক্ষমতাকে খুব একটা প্রভাবিত করে না। তবে ভাইরাসগুলাের জিনগত উপাদানের পরিবর্তন কোথায় হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে বৈশিষ্ট্যগত প্রভাব হতে পারে । যেমন : সংক্রমণ সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে বা তীব্রতা কম বা বেশি গুরুতর রােগের কারণ হতে পারে।
কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্ট এবং ভ্যাকসিনেশন:
কোভিড-১৯ এর যেসব টিকাগুলাে বর্তমানে অনুমােদিত হয়েছে তা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ এই টিকাগুলো অ্যান্টিবডি এবং কোষের রোগ প্রতিরােধ প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করে। সুতরাং ভাইরাসের পরিবর্তন বা মিউটেশন টিকাগুলােকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে তােলে না। তবে বিদ্যমান টিকাগুলাের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে এমন মিউটেশন রােধে ভাইরাসের বিস্তার বন্ধে
আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত।
কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্ট এবং প্রতিরোধ:
উৎস থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করাই প্রতিরােধের মূল চাবিকাঠি।
সংক্রমণ হ্রাস করার জন্য বর্তমান গৃহীত পদক্ষেপ:
পদক্ষেপ : ঘন ঘন হাত ধােয়া, মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এবং জনাকীর্ণ স্থান বা আবদ্ধ পরিবেশ এড়িয়ে চলা। এছাড়া সংক্রমণের ঝুঁকির কারণসমূহ চিহ্নিত করে এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ চালিয়ে যাওয়া। নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলাে বিস্তারের পূর্বেই সরকার প্রদত্ত নিয়ম মেনে টিকা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। জনগােষ্ঠীর বেশিরভাগ অংশকে টিকার আওতায় আনতে হবে এবং টিকা প্রদানের সাথে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট থাকলেও কেন টিকা দেয়া জরুরি?
কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ভ্যাকসিনগুলাে আমাদের হাতে থাকা সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলাে সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগের কারণে আমাদের অবশ্যই টিকা দেয়া চালিয়ে যেতে হবে।
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট -এর সর্বত্র বিস্তারের আগেই অধিকাংশ জনগােষ্ঠিকে বিদ্যমান টিকা প্রদানের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। অতএব বাংলাদেশের বিপুল জনগােষ্ঠীকে রক্ষা করতে আমাদের অবশ্যই টিকা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এমইউ/এমএইচআর/এমএস