সরকারের ভুলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে : ডা. জাফরুল্লাহ
করোনা পরিস্থিতিতে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারায় শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পাশাপাশি অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। ভুল পথে হাঁটলেও সরকারের সংশোধন করার কোনো ইচ্ছা নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘করোনা মোকাবিলা, শ্রমিকদের হয়রানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সার্বিক পরিস্থিতি’ নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলকে ছোট করা ছাড়া সরকারের কোনো কাজ নেই। প্রধানমন্ত্রীর কথা আর কাজের মিল নেই। উনি সব সময় বলছেন, আমরা যুদ্ধে আছি, কিন্তু উনি তো যুদ্ধ দেখেননি।
দেশে কোনো রাজনীতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমলা, ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশ শাসন করছে। সরকার আজ যেটা বলছে কাল সেটা মানছে না।
করোনা প্রতিরোধে সরকার বিধিনিষেধ দিলেও এর প্রভাব গরিব মানুষের ওপর পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার লকডাউন করছে কিন্তু নিজেই লকডাউন মানছে না। লকডাউন মানার জন্য গরিব মানুষের ওপর অত্যাচার করছে। প্রতিদিন যত জরিমানা হয়েছে তার সব সাধারণ মানুষ, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, দোকানদার।
কল-কারখানা খোলার ব্যাপারে দ্বিমত নেই উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কল-কারখানা খোলার ব্যাপারে কতগুলো নিয়ম আছে। শ্রমিকদের টিকা দিতে হবে। টিকা দেয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। গার্মেন্ট মালিকদেরও দায়িত্ব আছে।
তিনি আরও বলেন, এখন যেভাবে ঘটনাপ্রবাহ চলছে, তাতে আমাদের ৬৪ জেলায় ৬৪টি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার। অক্সিজেন উৎপাদনের সব চেয়ে উন্নত টেকনোলজি হচ্ছে জার্মান টেকনোলজি। মাসে ৫০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম টেকনোলজির দাম মাত্র ছয় কোটি টাকা। বহু প্রতিষ্ঠান আছে যারা এটা করতে পারে। ৬৪ জেলায় ৬৪টি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র করতে পারলে আমাদের কেউ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, টপ প্রায়োরিটি বেসিসে জেলা, উপজেলার হাসপাতালগুলোতে হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারকে বলছি চাপাবাজি করলে চলবে না।
সরকার জীবন-মৃত্যু নিয়ে খেলছে জানিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই ফ্যাক্টরি খুলবেন, হঠাৎ করেই বন্ধ করবেন। লকডাউন দেবেন, তারপরও সব কিছু খোলা থাকবে। সব জায়গায় গরিব মানুষকে ফাইন করা হচ্ছে। বড় লোকদের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে।
সরকারের কাছে কত টিকা আছে, কতজনকে টিকা দেয়া হয়েছে তার কোনো সঠিক হিসাব নেই জানিয়ে তিনি বলেন, লাগবে ২৬ কোটি টিকা কিন্তু সরকার সামান্য কিছু টিকার ব্যবস্থা করেই হুলস্থুল করে ফেলছে। এগুলো দেখে এটা বলা যায়, সরকারের কাছে আমরা নিরাপদ না। সরকার টিকা দিতে পারবে এ রকম সুযোগ দেখতে পারছি না।
তিনি বলেন, জাফরুল্লাহ রাশিয়া থেকে দুই কোটি টিকা আনতে পারবে বলেছেন। তিনি সরকারের কাছে অ্যাপ্লাইও করেছেন। কিন্তু সরকার তাকে বাধা দিচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন হওয়ায় প্রতিযোগিতার কারণে যদি পোশাকশিল্প খুলতেই হয় সেক্ষেত্রে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিয়ে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং প্রয়োজনীয় পরিবহনের ব্যবস্থা করে সরকারের কারখানার খোলার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জনগণের ভোট ছাড়া আমলানির্ভর এ সরকার যে জনগণ এবং বিশেষভাবে শ্রমিকদের প্রতি কী পরিমাণ দায়িত্বহীন, শ্রমিকদের এরা কী পরিমাণে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তার আরেক বীভৎস দৃশ্যায়ন ঘটেছে গতকাল।
সাকি বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে লাগাতার টালবাহানা করে যাচ্ছে। সরকারের বিবেচনাহীন এ সিদ্ধান্ত কোটি কোটি শিক্ষার্থীর জীবনই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আমরা অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার দাবি জানাই।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জেএসডির কার্যকরী সভাপতি সা কা ম আনিছুর রহমান খান, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, গণফোরামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসএম/এআরএ/জেআইএম