খোলা মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের দোকান, বেচাবিক্রি তেমন নেই
তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে জরুরি সেবাখাতের আওতায় এনে চলমান বিধিনিষেধে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারসহ আইটি পণ্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠানকে বাধা না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। গত কয়েকদিন থেকে রাজধানীর মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার মার্কেটের দোকানপাট খোলা থাকলেও তেমন বিক্রি নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে সাইন্সল্যাবের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে কম্পিউটার সামগ্রী কিনতে যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু তালেব। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, বাইরে থেকে মার্কেটের প্রধান ফটক তালা দেয়া থাকলে ভেতরে দোকান খোলা আছে। পরে তিনি সেখান থেকে কম্পিউটারের কি-বোর্ড, মাউসসহ একাধিক পণ্য কেনেন। তার কথার সূত্র ধরে মার্কেটটিতে যান জাগো নিউজের প্রতিবেদক।
সেখানকার নিরাপত্তাকর্মী রফিকুল বলেন, মার্কেট তো লকডাউন থেকেই বন্ধ। পাশের গলি দিয়ে সিঁড়ি আছে, সেখান দিয়ে ঢোকেন, ভেতরে দোকান খোলা আছে।
সিড়ি দিয়ে মার্কেটের ভেতরে ঢুকে চারটি তলা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ৩০টির বেশি দোকান খোলা আছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে এইভাবেই দোকানগুলো চলছে বলে জানিয়েছেন মালিক-কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রিন টেক নামে এক দোকানের বিক্রয়কর্মী বলেন, তিন-চারদিন ধরে মালিক দোকান খুলেছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকছে। তবে বেচাকেনা খুব বেশি হচ্ছে না।
নাহার কম্পিউটারের প্রোপাইটর হাফিজ রাকিব হাসান বলেন, তিন দিন হলো দোকান খুলেছি। বেচাবিক্রি তেমন নেই। কিছু না হওয়ার থেকে সামান্য কিছু বিক্রি ভালো। মাস শেষে আমাদের দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন দিতে হয়। দোকান খোলা থাকলে সাপোর্ট পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, এই মার্কেটে হাজারের ওপর দোকান রয়েছে। লুকোচুরি করে কয়েকজন দোকান খুলেছে। অনেকেই ঢাকার বাইরে মাল পাঠাচ্ছে, আবার অনেকেই অফিসের জন্য নিতে আসছে।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ঈদের কারণে আটদিন বিধিনিষেধ শিথিল করার পর ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশ কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় থাকবে।
এদিকে, বিধিনিষেধে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারসহ আইটি পণ্য সরবরাহে বাধা না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের সমস্যা হলে তা সল্যুশনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র যাচাই করে চলাচলের অনুমতিরও নির্দেশ দেয়া হয়।
বুধবার (৪ জুলাই) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মন্ত্রী বলেন, এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় গৃহীত হয়েছিল। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু কখনো কখনো এটি মানা হচ্ছিল না। ৩ আগস্ট সংশ্লিষ্টদের কাছে আবার চিঠি দেয়া হয়েছে।
‘তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে জরুরি সেবাখাতের আওতায় এনে বিধিনিষেধ চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারসহ আইটি পণ্য সরবরাহ ও সল্যুশনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।’
এদিকে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিটি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার, দেশের সব জেলা প্রশাসক ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধে যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, খাদ্য, শিক্ষা, গণমাধ্যমসহ এসব খাতকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখছে।
কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এসব কার্যক্রম সচল রাখতে তথ্যপ্রযুক্তির সব সেবা অনলাইনে দেয়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এসব সেবা কার্যক্রম সক্রিয় রাখার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে জরুরিসেবা হিসেবে বিবেচনা করে হার্ডওয়্যারসহ আইটি পণ্য সরবরাহকারী ও সল্যুশন দেয়া প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জনবলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার্ভিসগুলো চালু রাখতে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পণ্য সরবরাহ ও সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হোক। একই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত জনবলের চলাচলের অনুমতি দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এসএম/এমআরআর/জেআইএম